বৈঠকে ঢোকার আগে কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
‘মমতাকে সরান, তাহলে আপনাদের জেলার এসপিও সরে যাবেন। অভি নহি তো কভি নহি’। বুধবার ঝাড়গ্রামে দলীয় এক বৈঠকে নেতা-কর্মীদের অভিযোগের জবাবে ‘সমাধান-পথ’ বাতলে দিলেন বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
এ দিন অরণ্যশহরের একটি বেসরকারি অতিথিশালায় বিজেপি’র পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম এই দুই সাংগঠনিক জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করেন কৈলাসবাবু। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়ে দেন, ২০১৯ নয়, দলের লক্ষ্য, মিশন-২০১৬। আসন্ন বিধানসভা। কৈলাসবাবু ছাড়াও ওই বৈঠকে ছিলেন বিজেপি’র রাজ্য সহ সভাপতি সুভাষ সরকার।
এ দিন অবশ্য বিজেপি’র দুই জেলার কার্যকর্তাদের সাংগঠনিক বৈঠকে বারে বারে ঘুরে ফিরে আসে পশ্চিম মেদিনীপুরের পূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের নাম। কৈলাসবাবু দলের নেতা-কর্মীদের কাছে দল পরিচালনার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা হচ্ছে তা জানতে চান। এরপরই দুই জেলার দলীয় কার্যকর্তারা কেন্দ্রীয় নেতাকে জানিয়ে দেন, ভারতী-জুজুতে দলের কোনও রকম কর্মসূচি করা যাচ্ছে না। বিজেপি’র কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশ অনুমতি দিচ্ছে না। একের পর এক সুয়োমোটো মামলায় বিজেপি’র নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত বছর অগস্টে বেলিয়াবেড়ার বাহারুনায় মিছিল করার জন্য দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে অস্ত্র মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নয়াগ্রাম ব্লকের সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের ঠিক আগে বিজেপি’র নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি অর্ধেন্দু পাত্র-সহ বেশ কয়েকজন কর্মীকে ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।
সেক্ষেত্রেও পুলিশ সুয়োমোটো মামলা দায়ের করেছিল। পরে অভিযুক্তরা জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরেও তাঁদের উপর নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। এসপি’র নির্দেশে সবার ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিজেপি’র একটি স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে মিছিল করে মহকুমাশাসকের দফতরে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঝাড়গ্রাম থানার আইসি মিছিল করে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় কয়েকজন নেতা মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়ে আসেন। জামবনিতে পঞ্চায়েতের উপ নির্বাচনে দলের এক প্রার্থীর স্বামীকে শাসক দলের লোকেরা মারধর করেছে। অথচ পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেনি। পুলিশ সুপার ও তাঁর বাহিনীর অফিসারদের বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ শোনার সময় দুই জেলার দলীয় নেতাদের মৃদু ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন কৈলাসবাবু। তারপর বলেন, “ওই এসপি মহাশয়াকে সরানোর আগে রাজ্যের মসনদ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাতে হবে। মমতা সরলে তবেই ভারতী ঘোষের মতো স্তাবক দলদাসরাও সরবেন।” তাঁর কথায়, ‘‘অভি নহি তো কভি নহি।”
এদিন নেতা-কর্মীদের কৈলাসবাবু বলেন, “দলের মিশন-২০১৬।” দীপাবলির পরে দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা এসে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন বলেও দলীয় বৈঠকে জানান কৈলাসবাবু। আগামী নভেম্বরে এক লাখ লোকের জনসমাবেশ করার জন্য দুই জেলার নেতাদের প্রস্তুত হতে বলেন তিনি। দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের পুলিশ গ্রেফতার করলে ধৃতদের জামিন পাওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটির তরফ থেকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন রাজ্যের পর্যবেক্ষক। দলে কোনও রকম গোষ্ঠীবাজি রেয়াত করা হবে না বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেও কৈলাসবাবু বলেন, “এখানকার এসপি মহাশয়া তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছেন। কার্যত উনি তৃণমূলের জেলা সভাপতির ভূমিকা নিয়েছেন।” কৈলাসবাবু আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ২০১৬। এখানকার মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে ভাবে অরাজকতার সরকার চলছে। তাতে আমরা ২০১৬ সালে এ রাজ্যে সরকার গড়ব। এটা প্রত্যয়ের সঙ্গে বলছি। সিপিএমের চেয়েও তৃণমূলে আরও বেশি দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। মানুষ পরিত্রাণ চাইছেন। আমরা স্বচ্ছ রাজ্য দেব। স্বচ্ছ প্রশাসন দেব। উন্নয়নমুখী সরকার দেব।”
কৈলাসবাবুর দাবি, দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি নতুন দলীয় সদস্য হয়েছে প্রায় ৪৪ লক্ষেরও বেশি। এর মধ্যে সিংহভাগ টেলিফোনের মাধ্যমে সদস্য হয়েছেন। তাঁকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন রাহুল সিংহ রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরছেন কি-না এবং দুই জেলা সভাপতির পদে রদবদল হচ্ছে কি-না। কৈলাসবাবুর জবাব, “রাজ্য জুড়ে দলের সর্বস্তরে সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দলের কর্মীরা যাঁদের চাইবেন তাঁরাই পদে আসীন হবেন।”