Kanchanjunga Express Accident

পর পর সিগন্যাল ভাঙায় ‘ছাড়’, রেলে শুরু বিতর্ক

রেল সূত্রে খবর, গত ১৭ জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস বেরিয়ে যাওয়ার ১৫ মিনিট বাদে রাঙাপানির স্টেশন মাস্টার মালগাড়ির চালককে টি /এ -৯১২ ফর্মের মাধ্যমে সিগন্যাল উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার লিখিত অনুমতি দেন।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ০৮:৩৫
Share:

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। —ফাইল ছবি।

একেবারে শেষ মুহূর্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে দেখতে পেয়ে মালগাড়ির চালক সর্বশক্তি দিয়ে ব্রেক কষেন বলে রেলের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। কেন এই চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হল, তার কাটাছেঁড়ায় অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে মালগাড়ির চালককে নিশ্চিন্তে পর পর সিগন্যাল ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ অর্থাৎ রাঙাপানির স্টেশন মাস্টারের টি /এ -৯১২ ফর্মের ছাড়পত্র দেওয়ার ‘ভুলে’র দিকেই নানা মহলে আঙুল উঠছে।

ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশ জুড়েই টি /এ -৯১২ ফর্মের ব্যবহার নিয়ে রেল প্রশাসনের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। গত বুধবারই শিয়ালদহ ডিভিশনে ট্রেন চলাচলের সময় সিগন্যালিং ব্যবস্থায় বিপত্তি দেখা দিলে স্টেশন মাস্টারদের টি /এ -৯১২ ফর্ম ব্যবহারের ঝুঁকি নিতে সাময়িক ভাবে নিষেধ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরে শীর্ষ কর্তাদের আপত্তিতে ওই নির্দেশ বাতিল করে আগের স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়। তবে পূর্ব উপকূল রেলওয়ে তাদের অঞ্চলে সুরক্ষা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকের পর টি /এ -৯১২ ফর্মের ব্যবহার সাময়িক ভাবে
প্রত্যাহার করেছে।

পশ্চিম রেলের আমদাবাদ ডিভিশনের সিনিয়র ডিভিশনাল অপারেশন ম্যানেজারও ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে রেলের সাধারণ এবং অনুসারী নির্দেশিকার উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে কী করণীয় জানতে চেয়েছেন।

রেল সূত্রে খবর, গত ১৭ জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস বেরিয়ে যাওয়ার ১৫ মিনিট বাদে রাঙাপানির স্টেশন মাস্টার মালগাড়ির চালককে টি /এ -৯১২ ফর্মের মাধ্যমে সিগন্যাল উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার লিখিত অনুমতি দেন। এবং তাতে কোনও গতিবেগ নির্দিষ্ট করা ছিল না। দু’টি স্টেশনের মধ্যে এক বা একাধিক সিগন্যাল বিকল হলে শর্ত সাপেক্ষে ট্রেন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। সাময়িক বিপত্তির ক্ষেত্রে দিনের বেলা দৃশ্যমানতা স্পষ্ট থাকলে সর্বোচ্চ ১৫ কিলোমিটার গতিতে এগনো যায়। সে-ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিকল সিগন্যালের কাছে এক মিনিট করে থামতে হয়। রাতের বেলা ওই গতিবেগ ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারে নামিয়ে আনতে হয়। এ ছাড়াও প্রত্যেক সিগন্যালে ২ মিনিট করে থামতে হয়। রেল সূত্রের খবর, স্টেশন মাস্টারের অনুমতি পাওয়ার পরে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও মালগাড়িটি আলাদা গতিতে এগিয়েছিল। কাঞ্চনজঙ্ঘা কিছুটা মন্থর গতিতে এগোয়। মালগাড়ির চালক ভাবতে পারেননি, মাত্র ১৫ মিনিট আগে কাঞ্চনজঙ্ঘা গিয়েছে। তাই মালগাড়িটি দ্রুত গতিতে এগোতে থাকে।

রেল আধিকারিকদের একাংশের মতে, কাঞ্চনজঙ্ঘাকে টি/এ ৯১২ ফর্ম দিয়ে ছাড়া গেলেও, তা রাঙাপানি থেকে চটেরহাট স্টেশন পেরোন পর্যন্ত মধ্যবর্তী দূরত্বে ‘অ্যাবসোলুট ব্লক’ ঘোষণা করা উচিত ছিল। তাতে কাঞ্চনজঙ্ঘা নিরাপদ দূরত্বে যাওয়া পর্যন্ত মালগাড়ি এগোতে পারত না। রাঙাপানি এবং চটেরহাট স্টেশনের মাঝে থাকা ন’টি সিগন্যাল ভোর ৫ টা ৫০ মিনিট থেকে বিকল ছিল। ওই পরিস্থিতিতে টি / এ ৯১২ ফর্ম ব্যবহার যুক্তিগ্রাহ্য নয় বলছেন আধিকারিকদের অন্য একটি অংশ। দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক অনুসন্ধান নোটে জোরালো ভাবে ওই ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করেছেন নিউ জলপাইগুড়ির চিফ লোকো ইন্সপেক্টর।

প্রশ্ন উঠছে, সিগন্যালিংয়ের সমস্যার সময়ে রেল চলাচল সংক্রান্ত নির্দেশিকার বিষয়ে সব রেলকর্মী আদৌ ওয়াকিবহাল ছিলেন কি না? রেলের অন্দরে বিষয়টি নিয়েই এখন
চর্চা চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন