আবার রাজ্যপাল বনাম রাজ্য সরকার।
রাজ্যের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন জাতীয় সড়কে সেনা মোতায়েনের যে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন, তাকে ঘিরে রাজ্যপালের মন্তব্য উত্তাপ ছড়িয়ে ছিল ক’দিন আগেই। তার রেশ ভাল করে কাটার আগেই নয়া বিতর্ক কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর একটি চিঠির জেরে।
নবান্ন সূত্রের খবর, পুজোর পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে, এই অভিযোগ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি চেয়েছেন রাজ্যপাল। এতে মুখ্যমন্ত্রী খুবই ক্ষুব্ধ। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, গত দু’তিন মাসে যে সব এলাকায় অশান্তি হয়েছে তার বিস্তারিত রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সব ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত ব্যবস্থার কথা জানিয়ে রাজভবনে কড়া জবাব যাচ্ছে।
নোট-কাণ্ড নিয়ে গত মাস দেড়েক ধরে পরস্পরকে কামান দেগে চলেছে তৃণমূল এবং বিজেপি। তার মধ্যেই সেনা-মহড়া, বিমান বিভ্রাট, অফিসার বদলির মতো টুকরো টুকরো ঘটনা দু’পক্ষের তিক্ততা আরও বাড়িয়েছে। কেশরীনাথের চিঠিকে সেই চাপানউতোরের অঙ্গ হিসেবেই দেখছেন নবান্নের কর্তারা। তাঁদের মতে, রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল। তাঁর রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠেই কাজ করা উচিত। কিন্তু অতীতের অনেক রাজ্যপালের মতো কেশরীনাথও রাজনীতির সংশ্রব কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলে রাজ্যের শাসক দলের অভিযোগ। ফলে তাঁর চিঠির পিছনে মোদী সরকার তথা বিজেপির প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কারণ, নোট-নাকচ নিয়ে মমতা কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলনে নামার পরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে রিপোর্টও দিয়েছেন বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। তাতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়। এর পর রাজ্যপালের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান রাজনাথ। সেই রিপোর্টে কেশরীনাথ রাজ্যের সমালোচনা করেছেন বলেই জানা গিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি চিঠি দিয়েছেন নবান্নকে।
চিঠিতে রাজ্যপাল কোন কোন জেলার কোন কোন অংশে সংঘর্ষ ছড়িয়েছে তার বিবরণ দিয়ে লিখেছেন, তাঁর নিজস্ব সূত্রে পাওয়া খবর অনুয়ায়ী অশান্তির ছবিটা খুব সুখকর নয়। তিনি জানতে চেয়েছেন, রাজ্যে বেড়ে চলা অশান্তি মোকাবিলায় সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে। এবং অশান্তি দমনে পুলিশ প্রশাসন কড়া হাতে ব্যবস্থা নিলে বার বার এমন কাণ্ড ঘটছে কেন?
রাজ্যপালের চিঠি পেয়ে রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র দফতর। সেই রিপোর্ট হাতে পেয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে রাজভবনকে চিঠির জবাব দেওয়ার অনুমতি চান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তাঁর সম্মতি পেয়ে সরকারের জবাব যাচ্ছে রাজভবনে। রাজ্য সরকারের মতে, রাজ্যপাল আজীবন যে মতাদর্শে আস্থা রেখে এসেছেন, প্রায় প্রতিটি ঘটনার পিছনে সেই মতাবলম্বীদের উস্কানি রয়েছে। পাশাপাশি, স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘প্রতিটি অশান্তির ঘটনা মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ করা হয়েছে। দু’পক্ষের অভিযুক্তদের রঙ না দেখে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ ওই কর্তা জানান, ঘটনাগুলিতে কোনও বিশেষ সংগঠনের ভূমিকা রয়েছে কি না — তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
কেশরীনাথের চিঠি নিয়ে রাজ্যের শাসক দল ক্ষুব্ধ হলেও প্রশাসনের একাংশ কিন্তু বলছে, রাজ্যপাল যে কোনও বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চাইতেই পারেন। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা অবনতির মতো কোনও সমস্যা দেখা দিলে রাজভবন অতীতেও বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সে দিক থেকে বিচার করলে বর্তমান রাজ্যপালের পদক্ষেপে কোনও অন্যায় নেই।
কিন্তু মোদীর সঙ্গে সংঘর্ষের আবহে কেশরীনাথের চিঠিকে সহজ ভাবে নিতে নারাজ নবান্ন।