(বাঁ দিক থেকে) বিবেক অগ্নিহোত্রী, স্বপন দাশগুপ্ত এবং পল্লবী যোশী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
পশ্চিমবঙ্গের কোনও সিনেমা হলে মুক্তি পায়নি যে ছবি, তার ‘বিশেষ প্রিমিয়ার’ আয়োজিত হচ্ছে কলকাতায়। প্রথমে ছবিটির ট্রেলর-মুক্তি বাতিল করে দিয়েছিল কলকাতার নামী সিনেমা হল ‘চেন’। পরের দিন ইএম বাইপাস সংলগ্ন পাঁচতারা হোটেলে ফের ট্রেলর-মুক্তির আয়োজন হয়। পুলিশি হস্তক্ষেপে সে অনুষ্ঠানও মাঝপথে থেমে যায়। তবু দমছে না ‘পদ্মশিবির’। শনিবার জাতীয় গ্রন্থাগারে ছবিটির ‘বিশেষ প্রিমিয়ার’ আয়োজিত হচ্ছে। আয়োজক ‘খোলা হাওয়া’। ছবিটির নির্মাতা বিবেকরঞ্জন অগ্নিহোত্রী হাজির থাকবেন অনুষ্ঠানে।
ওই সংগঠনের পরিচয় ‘সামাজিক-সাংস্কৃতিক’ সংগঠন হিসাবে দেওয়া হলেও মূলত পরিচিত বিজেপি রাজনীতিকরাই সংগঠনের ‘মুখ’। বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতি সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত সংগঠনের সভাপতি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সংগঠনটির অন্যতম ‘নিয়ন্ত্রক’। সংগঠনটি তৈরির নেপথ্যে তৎকালীন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়েরও ভূমিকা ছিল। ঘটনাচক্রে, যিনি এখন রাজ্যের মন্ত্রী। কলকাতায় ওই সংগঠন আয়োজিত নানা অনুষ্ঠানে অমিত শাহ বা নির্মলা সীতারমণের মতো দেশের প্রথম সারির রাজনীতিকদেরও দেখা গিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। সেই সংগঠনের আয়োজনেই শনিবার কলকাতায় বিবেকের তৈরি বিতর্কিত ছবি ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস্’-এর ‘বিশেষ প্রিমিয়ার’ আয়োজিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ট্রেলর দেখাতে গিয়ে সিনেমাহল বা পাঁচতারা হোটেল, সর্বত্রই বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস্’-এর নির্মাতাদের। তাই এ বারের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নিয়ন্ত্রণাধীন’ চৌহদ্দিতে। জাতীয় গ্রন্থাগারের ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভাষা ভবন’ প্রেক্ষাগৃহে শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ ছবিটির প্রদর্শন শুরু হওয়ার কথা। পরিচালক বিবেক তো বটেই, ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্রের অভিনেতা পল্লবী জোশীও (যিনি বিবেকের স্ত্রী) সেখানে থাকছেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
বিজেপির অনেকের বক্তব্য, কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও পুলিশ-প্রশাসন তা আটকানোর চেষ্টা করতে পারে। সেই বিষয়েও তাঁরা নজর রাখছেন। বিজেপির এক যুবনেতার কথায়, ‘‘কলকাতায় বিজেপির বিভিন্ন বিক্ষোভ বা আন্দোলনের দিনগুলিতে কলকাতা পুলিশ রেলস্টেশনে বা মেট্রো স্টেশনে ঢুকেও আমাদের কর্মীদের ধরপাকড় করে। ফলে জাতীয় গ্রন্থাগারে অনুষ্ঠান হলেও তা যে একেবারে বাধাহীন হবে, আমরা সে বিষয়ে নিশ্চিত নই।’’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অবশ্য আগে থেকেই তেমন আশঙ্কা প্রকাশে নারাজ। স্বপন শুক্রবার বলেন, ‘‘কোনও বেআইনি কাজ তো হচ্ছে না। সেন্সর বোর্ড দ্বারা অনুমোদিত একটি ছবি দেখানো হবে। তা-ও আবার প্রকাশ্য স্থানে নয়। একটি প্রেক্ষাগৃহে। যেখানে প্রবেশাধিকার শুধুই আমন্ত্রণের ভিত্তিতে। অর্থাৎ, প্রাইভেট স্ক্রিনিং বলা চলে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রেক্ষাগৃহে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য যা যা অনুমতি দরকার, সে সবই আমাদের রয়েছে। সুতরাং এই বিশেষ প্রিমিয়ার বাধা পাওয়ার কথা নয়। এর পরেও বাধা দেওয়ার চেষ্টা হলে বুঝতে হবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া তার অন্য কারণ নেই।’’