প্রথমা বটব্যাল। —নিজস্ব চিত্র।
এক তরুণীকে অপরহণের অভিযোগ ঘিরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে উত্তাল হয়েছিল লাভপুর। এ বার ‘অপহৃতা’র বাবাকেই গ্রেফতার করে ঘটনার কিনারা করা গিয়েছে বলে দাবি করল বীরভূম জেলা পুলিশ!
রবিবার সিউড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ দাবি করে, উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা স্টেশনের কাছ থেকে এ দিন সকালে উদ্ধার করা হয় ওই তরুণীকে। তবে গোটাটাই ‘সাজানো’ ও ‘পূর্বপরিকল্পিত’। গ্রেফতার করা হয়েছে ‘অপহৃতার’ বাবা তথা বিজেপি-র জেলা কমিটির সদস্য সুপ্রভাত বটব্যাল এবং অন্য দুই ‘অপহরণকারী’ রাজু বটক সরকার ও দীপঙ্কর মণ্ডলকে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) তন্ময় সরকারের দাবি, রাজু ও দীপঙ্করের বাড়ি নকশালবাড়ি থানার দক্ষিণরথখোলায়। ধৃতদের এক জন গ্রিল কারখানার কর্মী। অন্য জন রাজমিস্ত্রি। পুলিশের দাবি, ওই দু’জন সুপ্রভাতবাবুর পূর্ব পরিচিত। তাঁর বাড়িতে ওই দু’জনের যাতায়াত ছিল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাভপুরের বাবুপাড়ায় নিজের বাড়ি থেকেই পেশায় স্কুলশিক্ষিকা ওই তরুণীকে অস্ত্র দেখিয়ে তিন দুষ্কৃতী অপহরণ করেছিল বলে অভিযোগ। তন্ময়বাবুর দাবি, ঘটনার আগের দিন ওই তরুণীর বাবার সঙ্গে রাজু-দীপঙ্করের বোলপুরে একটি ‘গোপন’ বৈঠক হয়েছিল।
আরও পড়ুন: যুদ্ধের দাবি তুলছেন বাড়িতে আসা অতিথিরা, শান্তিতেই আস্থা বাবলুর স্ত্রীর
অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে বোঝা যাচ্ছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই অপরহণের ঘটনা সাজানো হয়েছে। সুপ্রভাতবাবু প্রথমে নকশালপন্থী রাজনীতি করতেন। পরে বাম (সিপিআইএম), বর্তমানে বিজেপির জেলা স্তরের নেতা। ওঁর বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়েছে। পুলিশ তাঁকে খুঁজছিল। তাতে তাঁর উপরে চাপ তৈরি হয়েছিল। সেই কারণেই মেয়েকে অপহরণের ঘটনা সাজানো হয় বলে পুলিশের দাবি। তন্ময়বাবু বলেন, ‘‘বাড়িতে ঢুকে দুষ্কৃতীরা একটি মেয়েকে নিয়ে গেলে যে ধরনের বাধা অপহরণকারীদের পাওয়া উচিত, সে রকম কোনও বাধার চিহ্ন তদন্তে পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোক তেমন চিৎকার করেছে বলেও জানা নেই। সেখান থেকেই সন্দেহ তৈরি হয়েছিল।” পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইলের সূত্র ধরেই অভিযুক্তদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘মা মেরেছে’, একাই হাসপাতালে রক্তাক্ত বালক
তরুণী অপহরণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই জনরোষ দেখা দেয় বোলপুরে। শনিবার বিকেলে লাভপুরে বিক্ষোভের মুখে পড়েন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। তিনি থানায় ঢুকে পড়েন। থানা লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি হয়। রবিবার তরুণী উদ্ধারের খবরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
তন্ময়বাবু বলেন, ‘‘লাভপুর ও নানুরে ইচ্ছাকৃত ভাবে অশান্তি পাকানো হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্যও পেশ করা হয়েছে। এর পিছনে সুপ্রভাতবাবুর কয়েক জন রাজনৈতিক সহকর্মী রয়েছেন। যে রাজনৈতিক দলের উনি সদস্য, সেই দলের জেলা স্তরের অন্য কোনও নেতা রয়েছেন কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
যদিও বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘আমরা কোথাও কোনও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কাজ করিনি। পুলিশ আসল অপরাধীদের আড়াল করতে শাসক দলের নির্দেশে মিথ্যা গল্প সাজিয়ে ওর বাবাকে গ্রেফতার করেছে। যথা সময়ে সত্য সামনে আসবে।’’ বিজেপি-র দাবি উড়িয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, ‘‘আমার সবচেয়ে আশ্চর্য লাগছে, এক জন বাবা হয়ে উনি কী করে নিজের মেয়ের সঙ্গেই এমন করতে পারলেন! এই ঘটনায় বিজেপি আরও বেশি গাড্ডায় পড়বে।’’ তন্ময়বাবু জানান, সুপ্রভাতবাবুর মেয়ে আপাতত পুলিশের ‘নিরাপদ হেফাজত’-এ রয়েছেন। তিনি আতঙ্কে রয়েছেন। কেন আতঙ্ক, তা জানার চেষ্টা চলছে।