New Year

New Year Celebration: হাতজোড় পুলিশের, হুঁশ নেই জনতার

এ দিন রাত পর্যন্ত কোভিড বিধির কড়াকড়ি নিয়ে নবান্ন আর কোনও নতুন পদক্ষেপের কথা জানায়নি। বর্ষশেষের উৎসবে ভিড় নিয়ে আশঙ্কা ছিলই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:০২
Share:

ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যেই দূরত্ব বিধি উড়িয়ে বর্ষশেষে ভিড় পার্ক স্ট্রিটে। ছবি: সুমন বল্লভ

রাজ্যে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা দৈনিক প্রায় সাড়ে তিন হাজার ছুঁয়েছে। জাঁকিয়ে বসেছে ওমিক্রন-আতঙ্কও। তার মধ্যেই ছাড়ের উৎসবে শুক্রবার ফের বিধিভঙ্গের নজির গড়ল মহানগরী। পিছিয়ে নেই জেলাগুলিও। পিকনিক, পর্যটন, নৈশ পার্টির হুল্লোড়ে সেখানেও শিকেয় উঠেছিল কোভিড বিধি।

Advertisement

কোভিড সংক্রমণ তরতরিয়ে বাড়তেই রাজ্য সরকার পরিস্থিতি পর্যালোচনার কথা জানিয়েছে। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত কোভিড বিধির কড়াকড়ি নিয়ে নবান্ন আর কোনও নতুন পদক্ষেপের কথা জানায়নি। বর্ষশেষের উৎসবে ভিড় নিয়ে আশঙ্কা ছিলই। এ দিন বছরের শেষ সন্ধ্যা যত গড়িয়েছে, বর্ষবরণের উৎসবের নামে ততই ভিড়ে ভেসেছে কলকাতার কিছু রাস্তা। দূরত্ব-বিধি মানার বালাই তো ছিলই না, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পথে নামা জনতার মুখ ছিল মাস্কহীন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, মাস্ক ব্যবহার করুন।’’ অনেক জায়গায় পুলিশ মাস্ক পরিয়েও দিয়েছে। কিন্তু জনতার হুঁশ নেই বললেই চলে।

সচেতন নাগরিকদের বড় অংশেরই বক্তব্য, ‘‘এ যেন দুর্গোৎসবের পুনরাবৃত্তি। এক দিকে বিধিনিষেধ শিথিল করে ছাড়ের উপহার, অন্য দিকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে কার্যোদ্ধারের চেষ্টা।’’ দিল্লি বা মুম্বই পারলেও পশ্চিমবঙ্গে বর্ষশেষে বিধি শিথিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার লক্ষণ দেখা গেল না কেন, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে নাগরিকদের একাংশের মধ্যে।

Advertisement

পার্ক স্ট্রিটে মানুষকে মাস্ক পরাচ্ছে পুলিশ। । ছবি: সুমন বল্লভ

এ দিন সকালের দিকে সব থেকে বেশি ভিড় ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, চিড়িয়াখানা এবং প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে শুরু করে ধর্মতলা, মিলেনিয়াম পার্ক এবং পার্ক স্ট্রিট চত্বরে। ২৫ ডিসেম্বরের ‘শিউরে ওঠার মতো’ ভিড় দেখা না গেলেও সন্ধ্যার পর পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাতে ভিড় ছিল যথেষ্টই। বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটের ভিড় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার জেরে এ দিন ওই রাস্তা যান চলাচলের জন্য খুলে রেখেছিল পুলিশ। ফলে ভিড় গিয়ে পড়ে ফুটপাতে। ভিড়ে পুলিশ মাইক হাতে ক্রমাগত ঘোষণা করলেও মাস্ক খুলে চলেছে দেদার সেলফি তোলা।

ছবি তুলতে ব্যস্ত এক কলেজ পড়ুয়ার মন্তব্য, ‘‘গত বছর করোনা হয়েছিল। তাই সে ভাবে আনন্দ করতে পারিনি। এ বার আর করোনা নিয়ে ভাবছি না। রাতভর পার্টি করব।’’ পার্ক স্ট্রিটের একটি রেস্তরাঁর সামনের লাইনে দাঁড়ানো মাস্কহীন যুবক আবার বললেন, ‘‘মাস্ক আছে। তবে ওটা গেট পাস। মাস্ক না-থাকলে রেস্তরাঁয় ঢুকতে দেবে না। যখন ভিতরে ঢুকব, তখন পরে নেব। এখন হাওয়া খাচ্ছি।’’

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন কয়েক জন মাঝবয়সি। তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘আমায় আসলে মাস্ক পরে চেনা যায় না। তাই খুলে ছবি তুলছি।’’

পাশে দাঁড়ানো আর এক জন বললেন, ‘‘কিছু দিন আগেই সেরে উঠেছি। দু’বার করোনা হয়ে গিয়েছে। খুব খারাপ কিছু যখন হয়নি, এর পরেও কিছু আর হবে বলে মনে হয় না।’’

ভিক্টোরিয়া চত্বরে মাইক হাতে সচেতন করার ফাঁকে বিরক্তি ঝরে পড়েছে এক পুলিশকর্মীর গলায়। বললেন, ‘‘আজ আর কাল ডিউটি শেষে আমাদের কী হবে বলতে পারছি না। কসবা থানার দুই পুলিশকর্মী আবার আক্রান্ত হয়েছেন শুনছি। দু’হাজারের কাছাকাছি করোনা শুনেও যাঁদের হুঁশ হচ্ছে না, তাঁদের কিছুতেই কিছু হবে না।’’

কলকাতা পুলিশের এ দিনের ধরপাকড়ের পরিসংখ্যানেও জনতার ‘বোধোদয়’ না-হওয়ারই ইঙ্গিত। বিধিভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ শুক্রবার রাত থেকে এ দিন সন্ধ্যা আটটার মধ্যেই গ্রেফতার করেছে ৩২ জনকে। মাস্ক না পরার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৪৬৪ জনের বিরুদ্ধে। তবে রাতের শহর জুড়ে গলিঘুঁজিতে পালন শুরু হওয়া বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে সে ভাবে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ ছিল না বলে অভিযোগ। বহু পাড়ায় বক্স বাজিয়ে গান চলেছে রাত পর্যন্ত। চলেছে রাতের জলসাও। কিছু জায়গায় শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে। আমহার্স্ট স্ট্রিটের এমনই এক দম্পতির অভিযোগ, ‘‘বিকেল থেকে কান ফাটানো আওয়াজে বক্স বাজছে। থানায় ফোন করায় কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়েছিল। তারপর যে কে সেই!’’

একই রকম অভিযোগ শহরের বহুতলের রুফটপ পার্টিগুলি ঘিরেও। পুলিশ সেগুলির নাগাল কার্যত পায়নি বলেই অভিযোগ। তবে কলকাতা পুলিশের নতুন কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেছেন, ‘‘আজই আমার প্রথম দিন। যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে। আগামী দিনে বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে করা হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তিনি এ দিন পার্ক স্ট্রিটেও যান। তবে মত্ত হয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগে কোনও মামলা এ দিন রাত ১১টা পর্যন্ত রুজু হয়নি বলে কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর।

লাগামছাড়া ভিড়ের পরিণতির পরোয়া না-করে জেলায় জেলায় আনন্দে মেতেছে আমজনতা। রাতে রেস্তরাঁ, নাইট ক্লাবে পার্টিও হয়েছে। করোনা, ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যেও বছরের শেষ দিনে চেনা ছবি দার্জিলিং ম্যালে। অধিকাংশ পর্যটকেরই মুখে মাস্ক নেই। একই ছবি কার্শিয়াং, কালিম্পংয়ে। ডুয়ার্সের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র এবং পিকনিকের জায়গাতেও ভিড় ছিল। এ দিকে, সমুদ্রস্নানে কোভিড-বিধি কার্যত ভেসে গিয়েছে দিঘায়। সুন্দরবন, বাঁকুড়া, নদিয়ার পর্যটন কেন্দ্রেও বহু মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। বর্ষশেষে পিকনিক স্পটগুলিতেও ভিড় হয়েছে। মাস্ক নিয়ে সচেতনতা বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়নি।

আজ, শনিবার বছরের প্রথম দিনে সেই ছবি কি আদৌ বদলাবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন