লকগেটে মেঘ হলদিয়ায়

শুধু লকগেট ভাঙার ভাবনা নয়, জাহাজ চলাচলে সেই পদক্ষেপের কী প্রভাব পড়তে পারে, তা জানতে বন্দর-কর্তৃপক্ষ পরীক্ষানিরীক্ষাও শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু এ ভাবে তাড়াহু়ড়ো করে লকগেট তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি আছে বন্দরের তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩৩
Share:

হলদিয়া বন্দর। ফাইল চিত্র

রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী বলছেন, লকগেটই হলদিয়া বন্দরের প্রাণভোমরা। আর সেই লকগেটই স্থায়ী ভাবে ভেঙে ফেলার কথা ভাবছেন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ পরিবহণমন্ত্রীর চোখে যা বন্দরের প্রাণভোমরা, তাকেই টিপে মারার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

শুধু লকগেট ভাঙার ভাবনা নয়, জাহাজ চলাচলে সেই পদক্ষেপের কী প্রভাব পড়তে পারে, তা জানতে বন্দর-কর্তৃপক্ষ পরীক্ষানিরীক্ষাও শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু এ ভাবে তাড়াহু়ড়ো করে লকগেট তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি আছে বন্দরের তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের। বিস্তারিত ভাবে পরিস্থিতি বোঝার আগেই লকগেট ভেঙে ফেলার উদ্যোগের বিরোধিতা করে বন্দর-কর্তৃপক্ষকে নিজেদের বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছে তারা। এই অবস্থায় লকগেট নিয়ে বন্দর-রাজনীতি ঘিরে জাহাজ মন্ত্রকের সঙ্গে ফের স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সংঘাত আসন্ন বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।

হলদি নদীর উপরে ১৯৭৭ সালে তৈরি হয়েছিল হলদিয়া বন্দর। নদী-বন্দর বলেই একটি নির্দিষ্ট নাব্যতায় জাহাজ নোঙর করার ব্যবস্থা করতে লকগেটের ব্যবস্থা করা হয়। লকগেট আসলে বন্দরের ঠিক বাইরে বসানো একটি গেট, যা বন্দরকে সরাসরি নদী থেকে আলাদা করে রাখে। ফলে নদীতে জোয়ার-ভাটা খেললেও তার প্রভাব বন্দরের বার্থগুলিতে পড়ে না। স্থির জলে জাহাজ থেকে পণ্য নামানো হয়। এখন বন্দরে জাহাজ ঢোকা বা বেরোনোর সময় প্রতি বারেই লকগেট খুলতে ও বন্ধ করতে হয়। ফলে নষ্ট হয় অনেকটা সময়। বন্দর-কর্তৃপক্ষ স্থায়ী ভাবে লকগেট খুলে দিতে চান, যাতে নদী ও বন্দরের মধ্যে কোনও প্রাচীর না-থাকে। তাতে বন্দরে জাহাজ আসবে বেশি। আরও পণ্য খালাস হবে। তাতে বন্দরের আয় বাড়বে বলে দাবি করছেন কর্তারা।

Advertisement

যারা এতে আপত্তি তুলছে, সেই তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের যুক্তি, বন্দরের নকশা তৈরি হয়েছিল লকগেটের কথা মাথায় রেখেই। তাই স্থির জলে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা হয়। লকগেট তুলে দিলে বন্দরের ১৪টি বার্থ থেকে পণ্য খালাসের কাজটি জোয়ার-ভাটার মুখাপেক্ষী হয়ে পড়বে। জাহাজ আসা-যাওয়াও পুরোপুরি নির্ভর করবে জোয়ার-ভাটার উপরে। বন্দরের মধ্যেই জমবে পলির রাশি। তাই ৪১ বছর ধরে যে-কাজ নিশ্চিন্তে হয়ে আসছে, তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলবে না। একই সঙ্গে লকগেট খোলা-বন্ধের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১০০ শ্রমিকের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তায় পড়ে গিয়েছে তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়ন।

বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমারের বক্তব্য, লকগেট তুলে দেওয়ার ব্যাপারে চেন্নাই আইআইটি-কে সমীক্ষা করতে বলা হয়েছে। শুধু এই সমীক্ষা নয়, বেলজিয়ামের পোর্ট অব অ্যান্টোয়ার্পের মতামতও নেওয়া হচ্ছে। এখন হলদিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় পাঁচটি করে জাহাজ ঢুকতে ও বেরোতে পারে। সব মিলিয়ে বছরে ১৬০০-র বেশি জাহাজ আসতে পারে না। ‘‘বন্দরের আয় বাড়াতে অন্তত ২০০০ জাহাজ আনতেই হবে। লকগেট তুলে দিলে দিনে আটটি করে জাহাজ ঢুকতে-বেরোতে পারবে,’’ বলছেন বন্দরের চেয়ারম্যান।

রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জানাচ্ছেন, পরীক্ষানিরীক্ষা করতে চাইলেই হবে না। শীত কালে যখন নদীতে কম জল থাকে, তখনই তা করতে হবে। তাড়াহুড়োয় কিছু করতে দেওয়া যাবে না। ‘‘লকগেটই হলদিয়া বন্দরের প্রাণভ্রোমরা। ফলে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে,’’ বলছেন পরিবহণমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন