কী চলছে স্টুডিও চত্বরে, ক্যামেরায় চোখ চিত্র-সাংবাদিকদের। মঙ্গলবার। ছবি: শিবাজী দে সরকার।
কাকভোরের কলকাতায় হাওড়া ব্রিজ পেরোচ্ছে এসইউভি। ছাদে বাঁধা বিদঘুটে এক চেয়ার। গাড়ির সওয়ারি অসহ্য ঘ্যানঘ্যানে এক বুড়ো আর তার মেয়ে। ‘পিকু’র শ্যুটিংয়ের সেই অভিজ্ঞতা টুইট করেছিলেন উচ্ছ্বসিত অমিতাভ বচ্চন।
গঙ্গায় নৌকোয় সইফ আলি খান ও ‘পরিণীতা’ বিদ্যা বালন। সুপারহিট ‘পিউ বোলে’ গানের দৃশ্য।
ঘাটের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে খুনের মামলার এক সাক্ষীকে হিসহিসে গলায় জেরা করছেন ‘শবর’ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।
কলকাতা বা শহরতলির গঙ্গা বা তার লাগোয়া এলাকায় এমন কোনও সিকোয়েন্স আর শ্যুট করতে পারবে না ভেঙ্কটেশ ফিল্মস। ওপরের কোনও ছবিই ভেঙ্কটেশের ব্যানারে তোলা না হলেও বন্দরের জমি জবরদখল করা প্রযোজক সংস্থার ছবিতে গঙ্গার উপস্থিতি নেহাত কম নয়। কিন্তু এখন থেকে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনও এলাকাতেই আর শ্যুটিংয়ের অনুমতি পাবে না তারা।
বন্দরের এস্টেট ম্যানেজার শুভ্রকমল ধর মঙ্গলবার বলেন, ‘‘যে সংস্থা বন্দরের জমি গায়ের জোরে দখল করে, তাদের সঙ্গে আমরা কোনও ভাবেই সহযোগিতা করব না। সে জন্যই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কোন্নগর থেকে সাগর পর্যন্ত বন্দরের কোনও এলাকাতেই ভেঙ্কটেশকে আউটডোর শ্যুটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হবে না।’’
এক কর্তা জানান, কোন্নগর থেকে সাগর পর্যন্ত হল কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সীমানা। এই বিস্তৃত অংশে শুধু নদীবক্ষ নয়, নদীর পাড় থেকে ভেতরে ১৫০ ফুট পর্যন্ত জমিতে যে কোনও কাজকর্মেই বন্দরের অনুমতি বাধ্যতামূলক। সেই অনুমতি সাপেক্ষেই শ্যুটিং হয় কলকাতার বাবুঘাট, প্রিন্সেপ ঘাট, বাগবাজার বা শোভাবাজার ঘাটে। কিংবা হাওড়া সেতু, দ্বিতীয় হুগলি সেতু, স্যুইং ব্রিজ, কখনও বা একেবারে ডকের ভেতর। এ ছাড়া হুগলির তীর ধরে রায়চক, হুগলি পয়েন্ট, নূরপুর, ফলতা, গাদিয়াড়া, গেঁওখালি, হলদিয়ার মতো ‘স্পট’-এ অজস্র শ্যুটিং হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রাজ্যের বিনোদন শিল্পের স্বার্থে বরাবরই তাঁরা প্রযোজনা সংস্থাগুলিকে শ্যুটিংয়ের অনুমতি দিয়ে এসেছেন। বলিউডের নানা প্রযোজনা সংস্থাও শ্যুটিংয়ের অনুমতি পেয়েছে। একই অনুমতি পেত ভেঙ্কটেশও।
কিন্তু আর নয়। শুভ্রকমলবাবুর কথায়, ‘‘যে সংস্থা বন্দরের জমি দখল করে রেখে উল্টে আমাদের অফিসারদের বিরুদ্ধেই মামলা করে, তাদের কী ভাবে শায়েস্তা করতে হয় আমাদের জানা আছে। ওই জমি আমরা নিয়েই ছাড়ব। আর ভেঙ্কটেশের জন্য কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের দরজা চিরতরে বন্ধ।’’ তবে অন্যান্য প্রযোজনা সংস্থা আগের মতোই শ্যুটিংয়ের অনুমতি পাবে বলে বন্দরের কর্তারা জানিয়েছেন।
পি-৫১ হাইড রোডের ঠিকানায় বন্দরের একটি জমি দীর্ঘদিন জবরদখল করে রেখে সেখানে স্টুডিও তৈরি করেছে ভেঙ্কটেশ। রবিবার বন্দরের অফিসারেরা তার দখল নিলেও ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই গুন্ডা লাগিয়ে ভেঙ্কটেশ সেই জমি পুনর্দখল করে বলে অভিযোগ। অথচ জমি নিয়ে বন্দরের সঙ্গে আইনি যুদ্ধ চলছে যে সংস্থার, সেই এলএমজে কনস্ট্রাকশনের তরফে বন্দরেরই ৫০ জন অফিসারের বিরুদ্ধে তারাতলা থানায় এফআইআর করা হয়েছে। উল্টে তাঁদের বিরুদ্ধেই জোর করে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভেঙ্কটেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা জারির পথেও হাঁটলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। ভেঙ্কটেশের মালিক শ্রীকান্ত মোহতার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে জবরদখল করা জমিতে
তৈরি ভেঙ্কটেশের স্টুডিওয় এ দিনও নিয়মমাফিক ধারাবাহিকের শ্যুটিং চলেছে।
কিন্তু গঙ্গাতীরে বা গঙ্গাবক্ষে শ্যুটিংয়ের কী হবে?
গঙ্গায় ‘অমর প্রেম’-এর শ্যুটিং করতে পারেননি শক্তি সামন্ত। বন্দর কর্তৃপক্ষের ভয় ছিল, রাজেশ খন্নাকে দেখতে ভিড়ের চাপে হয়তো হাওড়া সেতুই ভেঙে পড়বে। শেষ পর্যন্ত স্টুডিওয় জলের ট্যাঙ্কে নৌকো ভাসিয়ে শ্যুটিং হয় ‘চিঙ্গারি কই ভড়কে....’ গানের। পরে ক্যামেরার কারিকুরিতে জুড়ে দেওয়া হয় হাওড়া ব্রিজের আবছা অবয়ব। বাকিটা ইতিহাস।
ভেঙ্কটেশ কি এমন পথই নেবে? বলবে সময়।