independence day

Independence Day 2022: বাকিটা হাঁটতে হলে জোরে চলাই ভাল

দলবদ্ধ জনগণের ধারণা থেকে বার করে ব্যক্তি পরিচয়ের মাপকাঠিতে অধিকারের বোঝাপড়া আবার খানিক জটিল হয়।

Advertisement

রত্নাবলী রায় (মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মী)

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২২ ০৬:৪৬
Share:

আনন্দ: স্বাধীনতা দিবসের আগে জাতীয় পতাকা হাতে কচিকাঁচারা। কলেজ স্ট্রিটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

অধিকারের ধারণা নিয়ে যে কোনও চর্চার আয়োজনে একাধিক পক্ষের অংশগ্রহণ জরুরি। সমাজবিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠ্যের সেই আলোচনাই জটিল হয় তখন, যখন অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলি একে অপরকে নিজেদের অধিকার আদায়ের অন্তরায় ভাবে।

Advertisement

স্বাধীনতার ৭৫ বছরে মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকার প্রসঙ্গে, রাষ্ট্র এবং জনগণ এই দুই পক্ষকে আলোচনায় নিয়ে এলে বোঝা যাবে নিশ্চিত ভাবেই আমরা এগিয়েছি। মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকার, তার আইনি রক্ষাকবচ এই উন্নতির প্রমাণ। তবে পাদটীকা হিসাবে উল্লেখ থাকুক, এর কোনওটিই কেউ এগিয়ে এসে দেয়নি। দীর্ঘদিন অসংখ্য মানুষের ভোগান্তি ও তার প্রতিরোধে অধিকারের স্বীকৃতি মিলেছে।

দলবদ্ধ জনগণের ধারণা থেকে বার করে ব্যক্তি পরিচয়ের মাপকাঠিতে অধিকারের বোঝাপড়া আবার খানিক জটিল হয়। কারণ, ব্যক্তি পরিচয়ের মধ্যেই চলে আসে প্রান্তিক পরিচয়ের মানুষের কথা। যেমন, মনোরোগী, লিঙ্গ-যৌন পরিচয়ের প্রান্তিক মানুষ ইত্যাদি। তাঁদের উপরেক্ষমতাশালীর দখলদারি, ঘোঁট পাকিয়ে তোলে। প্রান্তিকতার অধিকারের ধারণার বোঝাপড়ার অভাব জটিলতা আনে।

Advertisement

ক্ষমতাশালীর সম্মিলিত সচেতন বা অ-সচেতন উদ্যোগ প্রান্তিক মানুষকে আরও ঠেসে দেয়। সংখ্যাগুরুর অধিকাংশই সমাজ-সচেতনতার ভান করেন। বাস্তবে মনে করেন, নিজের যাবতীয় পরিচয়পত্র রাখার অধিকার কেবল সুরক্ষিত আলমারির মালিকেরই। বাড়ি থেকে যাঁরা ব্রাত্য, নিজের জিনিস আগলে রাখার সচেতনতা আর পাঁচ জনের তুলনায় কম, তাঁরা এ সবের অধিকারী নন। এই মানুষগুলি ভোট দিতে পারবেন কি না, এঁদের নিজস্ব পরিচয়পত্র হবে কি না, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকবে কি না— এই সব সিদ্ধান্ত কে নেবে? সে সব রহস্যাবৃত।

ফলে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বন্দোবস্ত বা আইনি রক্ষাকবচ দিয়ে পঁচাত্তর বছরের জমা-খরচের হিসাব মেলে না। শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোকে যতটা স্বাভাবিক মনে করা হয়, মনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোকে ততটা সহজ ভাবে দেখা হয় না, কারণ গোটাটাই যুক্তিবাদী ব্যক্তি মানুষের কল্পনার উপরে। যুক্তিবাদী মানুষের ধারণাটা কী? বাজার-পণ্যের উৎপাদনে ব্যক্তির ভূমিকা তাঁর যৌক্তিকতা তৈরি করে।

বলা হয়ে থাকে, আমাদের রাষ্ট্র কল্যাণকামী। কিন্তু তা তখনই প্রতিষ্ঠা পাবে, যখন রাষ্ট্র তার প্রান্তিকতম নাগরিকের জন্য কী কী কল্যাণমূলক কাজ করেছে জানা যাবে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে পঁচাত্তর বছরের এই উদ্‌যাপনে ফিরে দেখাটা তাই জরুরি। কারণ, আধুনিক ভারতে উৎপাদন ও বাজার, জাতীয়তাবাদ, প্রতিষ্ঠান সবই হয়েছে ঔপনিবেশিকতার পথে হেঁটে।

প্রয়োজনীয় শ্রমদানে অপারগ সদস্যকে পরিবার হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় না। অর্থাৎ, নির্বাসনের জন্য প্রতিষ্ঠান বা মানসিক হাসপাতালে হয় তাঁর ঠাঁই। সেগুলি তৈরিকে যৌক্তিকতা দিতে সামাজিক নির্বাসনের ধারণাকে চিকিৎসার নামে বৈধতা দেওয়া প্রয়োজন। এই নির্বাসন যত দীর্ঘমেয়াদি হয়, সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর সর্বার্থে ততই সুবিধা। সুতরাং, মানসিক রোগ ‘সারা’ কঠিন, ‘সারতে অনেক সময় লাগে’ এবং সর্বোপরি সামাজিক লজ্জার সঙ্গে একে জুড়লে ক্ষমতাশালীর চাহিদা মেটে।

এই প্রেক্ষিতে মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে মানসিক রোগকে গুলিয়ে দেওয়া যায়। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকার, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেই আটকে যায়। চিকিৎসার নামে নির্জন কুঠুরি ভেঙে দেওয়া, কোনও প্রতিষ্ঠানে তার পরেও তেমন কিছু ঘটলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, সুস্থ মনোরোগীদের পুনর্বাসন— অবশ্যই প্রাপ্তি। তবে প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্ন করা ছেড়ে দিলে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনমন ঘটবে।

পিছন ফিরে দেখলে, পঁচাত্তর বছরে খানিকটা আসা গিয়েছে, বাকিটা হাঁটতে হলে, জোরে চলাই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন