চন্দন ও দেবু। বুধবার রাতে। — নিজস্ব চিত্র
রাস্তা আটকে লরি দাঁড় করিয়ে ইট নামানো হচ্ছিল। গাড়ি সরাতে বলে দুই যুবক। তাতেই বচসার সূত্রপাত। তার পরে ওই দুই যুবককে মারধর করা হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতও করা হয়।
এমনই অভিযোগ জমা পড়েছে বিধাননগরের ইলেক্ট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায়। বুধবার রাতে মহিষবাথানের ঘটনা।
কিন্তু সেই অভিযোগের সারবত্তা খুঁজতে গিয়ে আবারও সিন্ডিকেট লড়াইয়ের কথাই সামনে এসেছে। যার দু’দিকেই রয়েছেন শাসক দলের কর্মীরা।
বুধবার রাতে কী ঘটেছিল মহিষবাথানে?
স্থানীয় সূত্রের দাবি, মহিষবাথানে রাস্তার কাজ শুরু করেছে বিধাননগর পুরসভা। রাতের দিকে সেই কাজের জন্য ইট নিয়ে মহিষবাথানে ঢোকে লরি। কিছুক্ষণ পরেই দু’টি মোটরবাইকে করে কয়েক জন যুবক পৌঁছোয় সেখানে। গিয়েই লরি সরাতে বলে তারা। এর পরেই শুরু হয় বচসা। তা-ই গড়ায় বড় গোলমালে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ গোলমাল মেটাতে গেলে তাঁদেরও প্রহৃত হতে হয় বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগ অবশ্য লিখিত ভাবে কোথাও জমা পড়েনি। সব শুনে পুলিশ বলছে, গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। কোনও ‘দাদাগিরি’ বরদাস্ত করা হবে না।
ঘটনায় আহত চন্দন শিকারি বৃহস্পতিবার সকালে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় অভিযোগ জমা দেন। তিনি বাম শিবির ছেড়ে যোগ দেওয়া তৃণমূল নেতা ক্ষিতীশ মণ্ডলের অনুগামী বলে পরিচিত। চন্দন জানিয়েছেন, তিনি আর তাঁর বন্ধু দেবু মোটরবাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাবুপাড়ায় রাস্তা আটকে লরি দাঁড় করিয়ে ইট নামানো হচ্ছিল। ফলে ওই রাস্তা দিতে এগোনো যাচ্ছিল না। লরি সরাতে বলা নিয়েই শুরু বচসা। তাঁদের অভিযোগ, বচসা চলতে থাকলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান রাস্তাটি তৈরির বরাত যিনি পেয়েছিলেন, সেই রবীন ও তাঁর দলবল।
তাঁরাই চন্দনদের মারধর করেন
বলে অভিযোগ।
যাঁদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সেই রবীনের দলবল স্থানীয় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে পরিচিত। স্থানীয় সূত্রের দাবি, রাস্তা তৈরির জন্য ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের একটি বরাত পান রবীন। সেই জন্যই বুধবার রাতে বাবুপাড়ায় ইট জড়ো করা হচ্ছিল।
রবীনের অনুগামীদের একাংশের পাল্টা অভিযোগ, রবীন ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। রবীনকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে। চন্দন ও দেবুকে মারধর করা হয়নি। উল্টে ওঁরাই লরির কাচ ভেঙেছেন। সেই কাচ ভাঙতে গিয়েই চন্দনের হাত কেটেছে। পুলিশ তদন্ত করলে সত্যি সামনে আসবে বলে দাবি তাঁদের।
এই ঘটনায় সিন্ডিকেটের কোনও হাত নেই বলেই মত কাউন্সিলর বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট নিয়ে গোলমাল হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমার ওয়ার্ডে কোনও সিন্ডিকেট নেই। ওই সংক্রান্ত কোনও সমস্যাও নেই।’’ তবে তিনি জানান, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনায় যাঁদের নাম উঠছে, তাঁদের সকলকেই তিনি চেনেন। তবে এমন ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। আইন আইনের পথে চলবে।
তৃণমূল কর্মীদের কথায়, এলাকায় রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজে ইমারতিদ্রব্য সরবরাহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে বাসিন্দাদের যুক্ত করা হয়েছে। নিউ টাউন, রাজারহাট এলাকায় সিন্ডিকেট বলতে যা বোঝায়, তা এখানে নেই।
অভিযুক্ত রবীনের দেখা মেলেনি। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল। তৃণমূল নেতা ক্ষিতীশ মণ্ডল অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্থানীয় যুবকদের মধ্যে গোলমাল হয়েছিল। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের কোনও বিষয় নেই।
তবে বাসিন্দাদের একটি অংশের দাবি, নয়াপট্টি, মহিষবাথান এলাকায় ক্রমশ নির্মাণ কাজের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ইমারতিদ্রব্য সরবরাহের দখল কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে গোলমাল থাকবেই। এখানে সব পক্ষই তৃণমূল।
বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা জানান, কে কার পক্ষের, জানার দরকার নেই। অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘এটা পুর পরিষেবার বিষয় নয়। কোনও মন্তব্য করব না।’’
কিন্তু ওই রাস্তা তো পুরসভাই তৈরি করছিল। মেয়র বলেন, ‘‘রাস্তা তৈরির যিনি বরাত পেয়েছেন, তিনি অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’
বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।