প্রতীকী ছবি।
ঠিক যেন ভোজবাজি!
অনলাইনে কেনাকাটার সময়ে ই-কমার্স সংস্থা দেখছে, টাকা দিয়েছেন গ্রাহক। জিনিসও বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু পরে দেখা যাচ্ছিল, ক্রেতার পকেট থেকে টাকা যায়নি। বিনা পয়সাতেই তিনি একের পর এক জিনিস কিনেছেন। একটি প্রতারণার তদন্তে নেমে এমনই জালিয়াতির সন্ধান পেয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, ওই প্রতারণার ঘটনায় সোমবার তিন জন গ্রেফতার হয়েছে। ধৃত ভবানীশঙ্কর, গগনদীপ সিংহ এবং রাজেন্দ্র সাউ হাওড়ার বাসিন্দা। পুলিশের খবর, ভবানী পেশায় সিএ। বাকি দু’জন বিসিএ-র ছাত্র। ধৃতদের থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ল্যাপটপ এবং বেশ কিছু নথি। সরকারি কৌঁসুলি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, ধৃত তিন জনকে মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে দশ দিনের পুলিশি হেফাজত দেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রের খবর, একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক এমন প্রতারণার শিকার হয়ে অভিযোগ জানিয়েছিল। ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার ওসি নীলকণ্ঠ রায়ের নেতৃত্বে গোয়েন্দাদের একটি দল তদন্তে নামে। প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকার প্রতারণা করা হলেও পুলিশ শেষমেশ ২৪ লক্ষ টাকা লুট হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। তদন্তকারীরা দেখেন, কলকাতার একটি হোটেলের ওয়াইফাই ব্যবহার করে বেশ কিছু লেনদেন করা হয়েছে। অভিযুক্তেরা যে ইন্টারনেট প্রোটোকল (আইপি) অ্যাড্রেস ব্যবহার করেছিল, তার সূত্র ধরেই ওই তিন জনের হদিস মেলে।
লালবাজারের খবর, ওই ব্যাঙ্কে অনলাইনে আধার এবং প্যান কার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। বিভিন্ন লোকের আধার ও প্যান কার্ডের প্রতিলিপি হাতিয়ে সেই নম্বর ব্যবহার করে ৪৫টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। সেগুলি ব্যবহার করে বিভিন্ন অনলাইন শপিং সাইটে কেনাকাটার নামে প্রতারণা করত ধৃতেরা। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অনলাইনে টাকা লেনদেনের সময়ে ব্যাঙ্ক এবং পেমেন্ট গেটওয়ে, দুইয়ের মাধ্যমে টাকা যায়। প্রথমে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা বেরোয় এবং তা গেটওয়ের মাধ্যমে অন্য অ্যাকাউন্টে যায়। প্রতারকেরা লেনদেন করেই ওই অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিত। তার ফলে ওদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেরোত না। অন্য একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে পেমেন্ট গেটওয়ে হ্যাক করে সেটির এসএমএস বদলে দিত তারা। যার জন্য দেখাত, টাকা লেনদেন হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের দাবি, ভবানীশঙ্কর, গগন ও রাজেন্দ্র ভুয়ো পরিচয় দিয়ে কলকাতার ওই হোটেলে উঠেছিল এবং দু’দিন ছিল। তখনই হোটেলের ওয়াইফাই ব্যবহার করে এমন বেশ কিছু লেনদেন করে তারা।
প্রশ্ন উঠেছে, এত মানুষের আধার ও প্যান কার্ডের নথি ধৃতেরা পেল কী ভাবে? পুলিশের একটি সূত্রের বক্তব্য, অনেকেই আধার বা প্যান কার্ড ফোটোকপি করতে বিভিন্ন দোকানে যান। কোনও কোনও দোকানদার সেই নথির ফোটোকপি মেশিনের মেমোরিতে রাখতে পারেন। যা পরে জালিয়াতদের কাছে বিক্রি করতে পারেন তিনি। তবে যে ভাবে অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছিল, তাতে কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল বলেও মনে করছেন অনেকে। এর পেছনে ধৃত তিন জন ছাড়া আর কেউ জড়িত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।