গত ১৬ জুনের ঘটনা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে শহরের একই অঞ্চলে দু’বার গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল বিবদমান দুই দুষ্কৃতী দলের বিরুদ্ধে।
এন্টালির বিবিরবাগান ও মতিঝিল এলাকায় ওই ঘটনায় দশ দিন ধরে হন্যে হয়ে পুলিশ খুঁজছিল অভিযুক্তদের। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে রবিবার রাতে দত্তপুকুর থানার বামনগাছি থেকে অভিযুক্ত মহম্মদ কালো, মহম্মদ বাপি, শামিম আহমেদ ওরফে কাতলা শামিম এবং শাকিল আহমেদ ওরফে টিপুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই চার জনই একই দলের। বিরোধী দলের সদস্যদের খোঁজ চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শহরের রাস্তায় কোমরে অস্ত্র গুঁজে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীর দল। মাঝেমধ্যেই এলাকা দখল, প্রোমোটিংয়ের ব্যবসা ঘিরে ধুন্ধুমার লেগে যাচ্ছে দু’দলে। পুলিশ সূত্রে খবর, এন্টালিতেও প্রোমোটিং নিয়ে কালো ও বাপির দলবলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিবাদ নেটো ও বাবলুর দলবলের। এদের মধ্যে কালো ও বাপি ধরা পড়েছে। নেটো ফেরার। মাস কয়েক আগেই ওই এলাকাতেই গুলি চলেছিল। তখনও এই অভিযুক্তেরাই গ্রেফতার হয়। পরে জামিন পায় তারা। অভিযোগ, এর পরে গত ১৬ জুন এক নির্মীয়মাণ বহুতলে ফ্ল্যাট পাইয়ে দেওয়ার হুমকি মানতে রাজি না হওয়া ঘিরে হিন্দি সিনেমার ধাঁচে গুলি ও বোমা ছোড়ে কালো ও বাপির দলের সদস্য নিয়াজুর নামে এক দুষ্কৃতী ও তার দলবল। গুলি লাগে শেখ আসলাম নামে এক ব্যক্তির পায়ে। তাড়া খেয়ে দুষ্কৃতীদের ফেলে যাওয়া মোটরবাইক জ্বালিয়ে দেন এলাকাবাসীরা। এই হামলার খবর নেটো বাহিনীর কানে যেতে মতিঝিলের কাছে দুর্গাপুর মাঠে কালো ও বাপির দলবলের উপরে পাল্টা হামলা চালায় নেটো বাহিনী। তাদের গুলিতে সামেদ আলি নামে কালোর এক শাগরেদ জখম হয়। গুলির জবাবে বোমা ছোড়ে কালো-বাপির দল।
ঘটনার পরে ‘পুলিশি ব্যর্থতা’-র দিকে আঙুল তুলেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা। ওই রাতেই সুখেন নামে এক যুবক গ্রেফতার হলেও মূল অভিযুক্তেরা ছিল অধরাই। শেষমেশ ১৯ জুন নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভোজেরহাটে হানা দেয় পুলিশ। একটুর জন্য পুলিশের হাত ফস্কে পালায় কালো-সহ চার অভিযুক্ত। তবে ধরা পড়ে যায় নিয়াজুর এবং অর্জুন সিংহ নামে কালোর আরও এক শাগরেদ। কিন্তু জেরায় কালো-বাপিরা কোথায় রয়েছে, সে বিষয়ে সঠিক কোনও তথ্য পায়নি পুলিশ।
পরে অন্য একটি সূত্রে পুলিশ জানতে পারে, ১৬ জুনের ঘটনার পরে শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছয় কালো-সহ চারজন। সেই দলে নিয়াজুর ছিল না। সেখানেই শামিমের এক আত্মীয় তাদের দত্তপুকুরের ডেরা ঠিক করে দেয়। কালো-দের মোবাইল বন্ধ থাকায় কিছুতেই হদিস পাচ্ছিল না পুলিশ। শেষে শামিমের সেই আত্মীয়কে ধরে তাকে চাপ দিতেই সব বেরিয়ে পড়ে। তার পরেই রবিবার বামনগাছিতে শামিমের আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পাকড়াও হয় চার অভিযুক্ত। নেটো ও বাবলু-র দলবলকে এখনও খুঁজছে পুলিশ।