Coronavirus in West Bengal

মাস তিনেক হল করোনা টিকা পাঠাচ্ছে না কেন্দ্র, বুস্টারের ভিড় বাড়লে সামাল দেওয়া যাবে কি?

করোনা নিয়ে আবার আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় আগাম সতর্কতা হিসাবে প্রতিষেধকের উপরে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু প্রশ্ন হল, বুস্টার ডোজ় নেওয়ার ভিড় বাড়লে তা সামাল দেওয়া কী সম্ভব হবে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:১১
Share:

পশ্চিমবঙ্গের ৭৫ শতাংশ মানুষ এখনও বুস্টার বা সতর্কতামূলক ডোজ় নেননি। ফাইল চিত্র।

মাস তিনেক হল, কেন্দ্রের তরফে করোনার প্রতিষেধক পাঠানো বন্ধ। রাজ্যের নিজস্ব ভাঁড়ারেও তেমন মজুত নেই। কিন্তু বঙ্গের ৭৫ শতাংশ মানুষ এখনও বুস্টার বা সতর্কতামূলক ডোজ় নেননি। এ দিকে, করোনা নিয়ে আবার আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় আগাম সতর্কতা হিসাবে প্রতিষেধকের উপরে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু প্রশ্ন হল, নতুন করে আবার বুস্টার ডোজ় নেওয়ার ভিড় বাড়লে তা সামাল দেওয়া কী ভাবে সম্ভব হবে?

Advertisement

রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। প্রতিষেধকের বিষয়ে কেন্দ্রের তরফে এখনও নতুন করে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। যেমন আসবে, তেমন ব্যবস্থা করা হবে। জাতীয় নির্দেশিকা মেনেই সব কাজ করা হবে।’’ করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতামূলক (বুস্টার) ডোজ়ের উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রথম থেকেই নাগরিকদেরএকাংশের মধ্যে বুস্টার ডোজ় নিয়ে তীব্র অনীহা ছিল। বাড়ি বাড়ি ঘুরেও ওই সমস্ত লোকজনকে টিকাকেন্দ্রে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।

চিন-সহ আরও কয়েকটি দেশে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে করোনা। ওমিক্রনের ‘তুতো ভাই’ বিএফ.৭ ভ্যারিয়েন্টেই আক্রান্ত হচ্ছেন সব থেকে বেশি। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক আশঙ্কা প্রকাশ করে সতর্কবার্তা জারির পরে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, বঙ্গে মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষকরোনার বুস্টার ডোজ় নিয়েছেন। শুধু এ রাজ্যে নয়, গোটা দেশেই বুস্টার ডোজ়ের এমন হাল। অনেকে আবার প্রশ্ন তুলেছেন, বুস্টার ডোজ় কি নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করবে?

Advertisement

ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বললেন, ‘‘করোনাভাইরাসের সাম্প্রতিক ভ্যারিয়েন্টগুলির কয়েকটি যে হেতু অ্যান্টিবডিকে নিউট্রালাইজ় করার ক্ষমতা খর্ব করছে, তথা সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে পটু, তাই বুস্টার ডোজ় নিয়ে শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়ালেও, তা যে নিশ্চিত ভাবে কাজে আসবে, সেটা বলা যাচ্ছে না।’’ তবে তিনি এটাও বলছেন, ‘‘ক্রস প্রোটেকশনের নিয়মে সুরক্ষার সামান্য সম্ভাবনা থাকলেও তার সুফল নিতে হবে সকলকে। বিশেষত, বয়স্ক ও কোমর্বিডিটি আছে, এমন মানুষদের বুস্টার নিয়ে রাখা উচিত।’’ জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্রের মধ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রতিষেধক। সেটির কার্যকারিতা কমে গিয়েছে ভাবার কোনও কারণ নেই। তিনি বলেন, ‘‘যে স্ট্রেন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেটি ওমিক্রনের উপ-প্রজাতি। তার বিরুদ্ধে চলতি প্রতিষেধকের বুস্টার ডোজ় ১০০ শতাংশ কাজ করবে কি না, সেটা যেমন নিশ্চিত নয়, তেমনই, কাজ করবে না, সেটাও বলা যায় না। যে স্ট্রেনই আসুক, কিছুটা হলেও তা কাজ করবে।’’

রাজ্যে এখনও পর্যন্ত প্রথম ডোজ় পেয়েছেন ৯৬ শতাংশ মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন ৮৪ শতাংশ। সেই তুলনায় বুস্টার ডোজ়ের হার অনেক কম, এমনটাই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। জানা যাচ্ছে, রাজ্যের ভাঁড়ারে মাত্র তিনহাজার ডোজ় কোভিশিল্ড এবং প্রায় এক লক্ষ ৮০ হাজার ডোজ় কোভ্যাক্সিন রয়েছে। এই সমস্ত প্রতিষেধকের মেয়াদ শেষ হচ্ছে জানুয়ারিতেই।তা হলে বাকি ৭৫ শতাংশকে বুস্টার ডোজ় দেওয়া হবে কী করে? স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রের নির্দেশিকা পেলে আবারও প্রতিষেধক চাওয়া হতে পারে তাদের কাছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘এক সময়ে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও এক শ্রেণির মানুষ বুস্টার ডোজ় নেননি। এখন আবার এই আতঙ্কের পরিবেশে হয়তো নেওয়ার হিড়িক পড়বে।’’ সূত্রের খবর, মেয়াদ ফুরনোর সময় এসে যাওয়ায় গত অগস্ট, সেপ্টেম্বর মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ থেকে ছ’লক্ষ ডোজ় প্রতিষেধক বঙ্গ থেকে অন্য রাজ্যে পাঠাতে হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত কোউইন পোর্টালের তথ্য বলছে, রাজ্যে প্রথম ডোজ় পেয়েছেন ৭ কোটি ৩৫ লক্ষ ২০ হাজার ৭৪৫ জন। দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন ৬ কোটি ৬৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৩৩২ জন। আর সেখানে বুস্টার পেয়েছেন মাত্র ১ কোটি ৫৭ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৬৭ জন।

অন্য দিকে, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে বুস্টার ডোজ় নেওয়ার বিষয়ে প্রচার চালানোর পরিকল্পনা করেছে কলকাতা পুরসভা। এ দিন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘করোনার বুস্টার ডোজ় অনেকেই নেননি। বিশেষত প্রবীণ মানুষেরা, যাঁরা এখনও বুস্টার ডোজ় নেননি, তাঁদের চিহ্নিত করা হবে।’’

পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, শহরের প্রত্যেকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের মাস্ক পরাটা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। পুরসভার সদর দফতরেও স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মাস্ক পরে আসতে হবে। অতীন আরও বলেন, ‘‘পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আধিকারিক-সহ কর্মীদের মাস্ক পরাটা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তবে শুধু করোনাভাইরাস নয়, শীতকালে ধোঁয়া, ধুলোর দূষণের হাত থেকেও রক্ষা পেতে মাস্ক বড় ভরসা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন