ফাইল চিত্র।
মাঝ আকাশে আচমকা শুরু হয়েছিল বমি। সঙ্গে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানটি উড়ে যাচ্ছিল আদিস আবাবা থেকে চিনের সাংহাই। ৪২ বছরের বিমানযাত্রী জি রুপিং ৩৫ হাজার ফুট উপরে তখন যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। বিমানে থাকা তাঁর বন্ধু চিকিৎসক মিআও চ্যাংচুং স্যালাইন ও অক্সিজেন দিয়ে হাল ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। ওই অবস্থায় রুপিং-কে নিয়ে সাংহাই উড়ে যাওয়া যাবে বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু, ঝুঁকি নিতে চাননি পাইলট।
বিমানটি মুম্বই, নাগপুর হয়ে তখন জামশেদপুরের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। বুধবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিট নাগাদ পাইলট সেখান থেকে কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কলকাতার অফিসারদের রুপিং-এর অসুস্থতার কথা জানান। কলকাতায় জরুরি অবতরণ করতে চান বলেও জানান। এটিসি-র অনুমতি পেয়ে বিমানটি ৯টা ২০ মিনিট নাগাদ কলকাতায় নেমে আসে। বিমানবন্দরের মেডিকা হাসপাতালের চিকিৎসক শর্মিলা কবিরাজ ও তার সহকর্মীরা বিমানে উঠে দেখেন, বেশ খারাপ অবস্থা রুপিংয়ের। পেটে অসহ্য ব্যথা।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, রুপিং ইংরাজিতে সড়গড় নন। মিআও চিকিৎসককে জানান, প্যাংক্রিয়াটাইটিসে ভুগছেন রুপিং। চিকিৎসার জন্যই সাংহাই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। শর্মিলাদেবীও জানিয়েছেন, রুপিংয়ের যা অবস্থা ছিল, তাতে তাঁকে নিয়ে সাংহাই পর্যন্ত উড়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাঁর সঙ্গে বন্ধু চিকিৎসক মিআও ছাড়া ছিলেন রুপিং-এর স্ত্রী হাইহং ফাং, ভাই জিয়াংপিং জি এবং মিআও-এর স্ত্রী রেন বেইজিয়াং। এই পাঁচ জনকে কলকাতায় নামিয়ে বিমানটি জ্বালানি ভরে ঘণ্টাখানেক পরে আবার উড়ে যায় সাংহাই।
রুপিংকে চার্নক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে কৃত্রিম শাসযন্ত্রের সাহায্যে রাখা হয়েছে। তাঁর যে প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয়েছে, সেই সংক্রান্ত কোনও রিপোর্ট বাড়ির লোক চিকিৎসকদের হাতে তুলে দিতে পারেননি। ফলে, তাঁর যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে।
মিআও জানিয়েছেন, তাঁরা আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বে মালাওয়ি দেশে থাকেন। সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা ভাল নয়। রুপিং অনেকদিন ধরেই অসুস্থ। গত চার-পাঁচ দিনে রুপিংয়ের অবস্থার অবনতি হওয়ায় সাংহাই নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত হয়।
কলকাতায় চিন দূতাবাসের তরফে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মিআও জানান, রুপিং সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এখানেই অপেক্ষা করবেন।