Fire Accident

মেয়ের বিয়ের বেনারসি পুড়ে ছাই, মাথায় হাত বাবার, সল্টলেকে বস্তির আগুনে হাহাকার

সোনার গয়না, দুটো বেনারসি শাড়ি, প্রসাধন সামগ্রী, বিয়ের কার্ড— সবই তো রাখা ছিল আলমারিতে। একটা আগুনের ঝাপটা আর পর পর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক নিমেষে ধূলিসাৎ বিয়ের সব প্রস্তুতি!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:২৪
Share:

ক্ষতিগ্রস্ত: পোড়া ঘরের সামনে সুতৃষ্ণা গাড়ু। সোমবার, সল্টলেকের ফাল্গুনী আবাসনের পিছনে। নিজস্ব চিত্র।

পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া আলমারিটির দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিলেন মধ্যবয়সি সুকুমার গাড়ু। তিল তিল করে জমানো টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ের সব কেনাকাটা প্রায় শেষ করে এনেছিলেন। সোনার গয়না, দুটো বেনারসি শাড়ি, প্রসাধন সামগ্রী, বিয়ের কার্ড— সবই তো রাখা ছিল ওই আলমারিতে। একটা আগুনের ঝাপটা আর পর পর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক নিমেষে ধূলিসাৎ তাঁর মেয়ের বিয়ের সব প্রস্তুতি!

Advertisement

সল্টলেকে ফাল্গুনী বাজারের পিছনের বস্তিতে স্ত্রী স্বপ্না, ছেলে-বৌমা, নাতি এবং মেয়ে সুতৃষ্ণাকে নিয়ে থাকেন পেশায় রিকশাচালক সুকুমার। তিনি বলেন, ‘‘আগামী ৩ মে মেয়ের বিয়ে। হাতে আর সময় নেই। গত দু’বছর ধরে জমানো টাকা দিয়ে বিয়ের সব জিনিস কিনেছিলাম। আবার সব নতুন করে শুরু করতে হবে। কিন্তু এখন তো আমি কপর্দকশূন্য। মেয়ের বিয়ে হবে কী ভাবে?’’

সুকুমার জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ যখন আগুন লাগে, তখন তিনি ছিলেন বাড়িতেই। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ বস্তির পিছনে হইচই শুনে তাকিয়ে দেখি, আগুন! কিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই দেখি, একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে শুরু করেছে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায় আমাদের ঘরগুলিতে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে পড়িমড়ি করে তখন দৌড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।’’ সুকুমার জানান, তাঁর হবু জামাই একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। আগুন লাগার পরে তিনিও এসে ঘুরে দেখে গিয়েছেন তাঁদের অসহায় অবস্থা। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির ঠিক করে দেওয়া কমিউনিটি হলে বাকি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গেই সপরিবার রয়েছেন সুকুমার। সুতৃষ্ণা বললেন, ‘‘বিয়ে নিয়ে এখন কিছুই ভাবতে পারছি না। সব তো শেষ হয়ে গেল। বাবার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। টাকা জমানোর জন্য কত পরিশ্রম করেছিলেন বাবা। এখন অবসন্ন লাগছে সব সময়ে।’’

Advertisement

পোড়া বস্তিতে নিজের রান্নাঘরে ঢুকেই এ দিন হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেছিলেন সেলিনা বিবি। মাস সাতেক আগে এই বস্তিতেই তাঁর ১১ বছরের ছেলে সুপারুন শেখ বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। সেই শোক কাটতে না কাটতেই ফের বিপর্যয়। সেলিনা নিজের পোড়া ঘরে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘আমরা বাড়ি ছিলাম না। ইদে দুই মেয়েকে নিয়ে মুর্শিদাবাদে বড় মেয়ের কাছে গিয়েছিলাম। কাল রাতে খবর পেয়ে আজ সকালে ছুটে এসেছি।’’

বস্তির আর এক বাসিন্দা পূজা দাস আবার তন্নতন্ন করে খুঁজছিলেন আলমারিতে রাখা রুপোর গোপাল ও পিতলের কালী প্রতিমা। কিন্তু আলমারির ভিতর থেকে ছাই ছাড়া মিলল না কিছুই। অবশিষ্ট নেই পিতলের প্রতিমাটিও। জ্যোৎস্না পাত্র আবার পোড়া বাড়ির জিনিসপত্র ঘাঁটতে গিয়ে পেলেন পুড়ে যাওয়া ভাত ও ভাতের হাঁড়ি।

তবে, ঘরের সব জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও খাঁচায় রাখা রঙিন মুরগির ছানাগুলিকে বাঁচাতে পেরে খুশি পেশায় রিকশাচালক বিশ্বজিৎ দাস। বললেন, ‘‘ঘর যখন পুড়ছে, বাড়ির দলিল, আসবাব যখন দাউ দাউ করে জ্বলছে, তখন আমি কোনও রকমে মুরগির ছানার ওই খাঁচাটিকে বার করে আনতে পেরেছিলাম।’’ সোমবার দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু জানান, ওই বস্তিতে ৮২টি ঘর আছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, বস্তিতে ঘরের সংখ্যা ৫০-এর আশপাশে।

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে যায় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দল। বস্তির দক্ষিণ দিকে যে বাড়ি থেকে আগুন ছড়িয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, সেই বাড়ি থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়। স্থানীয়েরাজানালেন, বস্তির দক্ষিণ দিকের একটি ঘরে জ্বলন্ত প্রদীপ থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে। ওই ঘরে তখন কেউ ছিলেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন