২৪ ঘণ্টা পেরোলেও ঘাতক বাসের চালকের সন্ধান পেল না বিধাননগর পুলিশ। বুধবার ফের অটোর সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়েছে। এ বার বাগুইআটির রঘুনাথপুরে। এই দুর্ঘটনায় অবশ্য হতাহতের কোনও খবর নেই। মঙ্গলবার বিধাননগরে সিটি সেন্টারের সামনের পথ দুর্ঘটনার পরে ওই মোড়ে নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। এ দিন থেকে ওই মোড়ের এক-একটি লেনের গাড়ি ছাড়ার পন্থা নিয়েছে পুলিশ। অন্য দিকে, ওই দুর্ঘটনায় আহত তিন যাত্রীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
কিন্তু ওইটুকুই। সল্টলেকের কয়েকটি মোড় ছাড়া বাকি গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলির অবস্থা সেই তিমিরেই।
১০ নম্বর ট্যাঙ্কের মোড় (দুপুর ১টা): করুণাময়ীর মোড়ের কাছেই এই জায়গায় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সিভিক পুলিশ থাকলেও কাজের কাজ হয় না বলে অভিযোগ। ওই রাস্তা সোজা চলে গিয়েছে পাঁচ নম্বর সেক্টরে। ওই মোড় থেকে একটি রাস্তা আবার জিডি আইল্যান্ডের দিকে বেঁকে যায়। কোনও গাড়ি চালকই এখানে নিয়ম মানেন না। বেপরোয়া ভাবে যান চলাচলই যেন এখানকার নিয়ম। যত্রতত্র বাস-অটো থামিয়ে চলে যাত্রী ওঠা-নামা।
সুশ্রুত মোড় (দুপুর ১টা ৫০ মিনিট): এই চারমাথার তিন দিকে তিনটি হাসপাতাল। একটি রাস্তা সোজা মিশেছে পাঁচ নম্বর সেক্টরে যাওয়ার মূল রাস্তায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাসপাতাল থাকায় লোকজনের যাতায়াত দিনে-রাতে সব সময়েই বেশি। উপরন্তু রয়েছে গাড়ির চাপ। কিন্তু সে তুলনায় নজরদারি এখানে অনেকটাই কম। এই মোড়েই স্কুলবাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল এক ছাত্রের। তার পরেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। এমনটাই অভিযোগ।
বিদ্যাসাগর আইল্যন্ড (দুপুর ২টো): মাত্র ৫০০ মিটার দূরে মঙ্গলবারই ঘটেছে বড় দুর্ঘটনা। তার পরেও হুঁশ ফেরেনি। বিধাননগর কলেজের সামনে দেখা মেলেনি কোনও ট্রাফিক কর্মীর। যে যেখানে পারছেন গাড়ি দাঁড় করাচ্ছেন, নিয়ম ভেঙে মোড় থেকে যাচ্ছেন যে দিকে ইচ্ছে। একটি সরকারি গাড়ির চালককে দেখা গেল আইল্যন্ড পুরো না ঘুরেই ইউ-টার্ন নিচ্ছে। সে সময়ে এসে পড়ে একটি অটো। দুই গাড়ির চালক সতর্ক থাকায় এড়ানো গিয়েছে সংঘর্ষ।
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ১ নম্বর গেট ( দুপুর ২টো ৩০ মিনিট): তিন মাথার মোড়। কিন্তু নিয়ম মানার যেন কোনও বালাই নেই। এ দিন দুপুরে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে একের পর এক নিয়ম ভাঙার ছবি ধরা পড়ল। সেখানেও নজরে পড়েননি কোনও ট্রাফিক কর্মী। ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরেই বিধাননগর দক্ষিণ থানা এবং পুলিশ কমিশনারেটের সদর দফতর। ট্র্যাফিক সিগন্যালের হাল অধিকাংশ মোড়েই এক ধরনের। লাল বা সবুজ আলো প্রায় কোথাওই বদলায় না। বেশির ভাগ সিগন্যালে নিজের মতো দপদপ করে জ্বলছে-নিভছে কমলা আলো। গাড়ি চলছে মর্জি মাফিক।
এগুলি সবই খণ্ড চিত্র। এক সঙ্গে সবটা দেখলে পরিকল্পনাহীন ট্রাফিক ব্যবস্থার ছবি ধরা পড়ে গোটা সল্টলেক জুড়ে। এখনও সল্টলেকের অধিকাংশ মোড়ে নেই সিসিটিভি। ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও তা চোখে পড়ে না। মঙ্গলবার দুর্ঘটনার সময়েও আহত অটোচালককে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় রিকশা ও অটোচালকেরা।
আগের তুলনায় বেশি সংখ্যক মোড়ে সিভিক পুলিশ মোতায়েন করা হলেও কাজের কাজ হয়নি। কেননা অধিকাংশেরই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। অন্তত অভিযোগ তেমনটাই। উপরন্তু সল্টলেকে কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে সেই গাড়ি দ্রুত ধরার আধুনিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাও নেই।
মঙ্গলবার দুর্ঘটনার পরে ঘাতক বাসটি সল্টলেক থেকে তাই অনায়াসেই বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। সেখানেই প্রশ্ন উঠেছিল, কেন সেই বাসটিকে দুর্ঘটনার পরে সল্টলেকের মধ্যে দ্রুত ধরা গেল না?
পুলিশের দাবি: প্রয়োজনের তুলনায় ট্রাফিক দফতরের পুলিশের সংখ্যা কম। ভরসা করতে হচ্ছে সিভিক পুলিশদের উপরে। কিন্তু তাঁদের কেস দেওয়ার কোনও এক্তিয়ার নেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই গাড়ি চালকেরা সিভিক পুলিশের নির্দেশ মানছেন না।
পুলিশকর্তাদের দাবি, সিসিটিভি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন পরিকাঠামো রয়েছে, সে অনুযায়ী আস্তে আস্তে বাড়ানো হচ্ছে নজরদারি। যেই সব মোড়ে গাড়ির চাপ বেশি, আগে সে সব জায়গায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেমন গুরুত্ব পেয়েছে ভিআইপি রোড, রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দর এলাকা, সল্টলেকের করুণাময়ী মোড় প্রমুখ।
তবে বিধাননগর পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, ট্রাফিক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সার্বিক ভাবে পরিকল্পনা করা হবে। তবে দ্রুত সল্টলেক, নিউ টাউন, বাগুইআটির একাধিক মোড়েও ট্রাফিক পরিকাঠামো আরও মজবুত করা হবে।
ছবি: শৌভিক দে।