New Town

রজত মৃত্যু রহস্যে নয়া মোড়, খুনের মামলা দায়ের, সন্দেহের তালিকায় স্ত্রীও

শনিবার নিউটাউনের বিডি ব্লকে নিজের ফ্যাটেই, গভীর রাতে উদ্ধার হয় বছর ৩৪-এর রজত দে-র অচৈতন্য দেহ। সে সময় ফ্যাটে তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:২৭
Share:

মৃত রজত দে ও তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা।—নিজস্ব চিত্র।

নিউটাউনে আইনজীবী খুনের রহস্য ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পুলিশের হাতে আসতেই ঘুরে গেল মামলার মোড়। প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হলেও, এ বার খুনের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী রজত দে-র মৃত্যুর হয়েছে শ্বাসরোধ হওয়ার কারণে।

Advertisement

গলায় সরু তার জাতীয় কোনও জিনিসের আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। তা থেকেই পুলিশের অনুমান, এটা আত্মহত্যার ঘটনা নয়। কেউ তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করে থাকতে পারে। এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে, ভিসেরা পরীক্ষা করার কথা ভাবছে পুলিশ।

পুলিশের অনুমান, এই ঘটনার নেপথ্যে রজতের পরিচিতরা জড়িত থাকতে পারে। রীতিমতো ছক কষে সংঘটিত হয়েছে এই হত্যাকাণ্ড।

Advertisement

আরও পড়ুন: নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে আইনজীবীর রহস্যমৃত্যু​

শনিবার নিউটাউনের বিডি ব্লকে নিজের ফ্যাটেই, গভীর রাতে উদ্ধার হয় বছর ৩৪-এর রজত দে-র অচৈতন্য দেহ। সে সময় ফ্যাটে তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। অন্তত অনিন্দিতার দাবি তেমনই। পুলিশ সূত্রে খবর, মাঝরাতে পাওয়ার অফ হয়ে যাওয়ায় ঘুম ভেঙে গিয়েছিল বলে দাবি করেছেন অনিন্দিতা। তখনই নাকি পাশের ঘরে গিয়ে দেখেন, অচৈতন্য অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছেন রজত।

অনিন্দিতার বয়ান অনুযায়ী— রজতকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তিনি নিজের ভাই অভীক পালকে ফোন করে ডেকে আনেন সল্টলেক থেকে। অভীক বরানগরে ফোন করে ঘটনার কথা জানান রজতের বাবা সমীর দে-কে। সমীরবাবুর কথায়, তিনি বরানগর থেকে নিউটাউনে আসা পর্যন্ত রজত নিজের ফ্ল্যটেই পড়ে ছিলেন। “গোটা ফ্ল্যাট লন্ডভন্ড। ঘরের মধ্যে চেয়ার, টেবিল ও অন্য আসবাবপত্র উল্টে রয়েছে। রজত মেঝের উপরে পড়ে’’— এমনটাই পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি।

সমীরবাবুর দাবি, তিনি যখন পৌঁছন সেই সময়ে ফ্ল্যাটে রজতের স্ত্রী বা ভাই কেউই ছিলেন না। সমীরবাবুই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে রজতকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এখানেই অনেকগুলো প্রশ্ন জেগেছে তদন্তকারীদের মনে। অনিন্দিতা বা অভীক রজতকে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে হাসপাতলে নিয়ে গেলেন না কেন? কেন পুলিশে খবর দিলেন না? রজতের বাবা সমীরবাবু আসা পর্যন্ত কেন তাঁরা অপেক্ষা করে রইলেন?

সমীরবাবু যখন ফ্ল্যাটে আসেন, তখন কেন অনিন্দিতা বা তাঁর ভাইকে সেখানে পাননি সে প্রশ্নও উঠেছে। যদিও অনিন্দিতা পুলিশকে বলেছেন, ভয় পেয়েই তিনি নাকি প্রতিবেশীর ফ্ল্যাটে চলে গিয়েছিলেন।

রজতের স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পাশের ঘরে কাগজপত্র নিয়ে কাজ করছিলেন রজত। “রাত একটা নাগাদ ঘুম ভাঙলে দেখি কারেন্ট নেই, পাশের ঘরে গিয়ে দেখি অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে রজত”— পুলিশকে দেওয়া অনিন্দিতার এই বয়ানও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ খতিয়ে দেখছে, সেই রাতে রজতের ফ্ল্যাটে বিদ্যুত্ চলে যাওয়াটা কোনও যান্ত্রিক সমস্যায় হয়েছিল, না কি তা পরিকল্পিত।

আরও কয়েকটা বিষয় সন্দেহ বাড়িয়েছে পুলিশের। ঘটনার কয়েক দিন আগে বাড়ির পোষা কুকুর এবং দেড় বছরের সন্তানকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেন অনিন্দিতা। কেন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: নিউ টাউনে আইনজীবীর মৃত্যু ঘিরে ধোঁয়াশা, অভিযুক্ত স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ি​

রজতের বাবা সমীর দে ইতিমধ্যেই অনিন্দিতা এবং অনিন্দিতার বাবা-মা-ভাই-এর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সমীরবাবু আদালতে আবেদন করার ফলেই, একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রজতের দেহের ময়না তদন্ত করা হয়। হয় তার ভিডিওগ্রাফিও। সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, কোনও সরু তার জাতীয় জিনিস গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ হয়ে মারা গিয়েছেন রজত। যদিও ঘটনাস্থলে তেমন কোনও জিনিস তদন্তকারীরা খুঁজে পাননি।

অনেকগুলো দিক এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ। রজত যদি খুন হন, তবে খুনি কি একজন না একাধিক? খুনি কি বাইরে থেকে এসেছিল? স্ত্রী অনিন্দিতা কি এই খুনে জড়িত? না কি তাঁকে মিথ্যে ফাঁসিয়ে রজতকে খুন করার কোন গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে এখানে? করলে কে? কী তার মোটিভ?

অন্তত একটা ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত— খুন হলে, তা যে বা যারাই খুন করুক না কেন, তারা রজতের পরিচিত।

অনিন্দিতার সঙ্গে গত কয়েক মাস যাবত্ রজতের ঝগড়াঝাটির খবর কানে এসেছে পুলিশের। অনিন্দিতার ঘনিষ্ঠ এক চিকিত্সকের সম্পর্কেও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে আরও একজনের সম্পর্কে, যাঁর সঙ্গে অনিন্দিতার নিয়মিত ফোনালাপ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে প্রায়ই গোলমাল হত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

ঘটনার রাতে এক সঙ্গে রেস্তরাঁয় খাওয়ার পর, কেন এক সঙ্গে বাড়ি ফেরেননি রজত আর অনিন্দিতা, ওই সময় রজতের সঙ্গে বাড়ি না ফিরে অনিন্দিতা কোথায় গিয়েছিলেন, তাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন