অ্যাসিডে এ ভাবেই ঝলসে গিয়েছে নির্যাতিতার হাত। নিজস্ব চিত্র
প্রাক্তন স্ত্রীকে অ্যাসিড ছোড়াটাই অপরাধে তার হাতেখড়ি নয়। এক সময়ে তিলজলা-তপসিয়া এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী চুন্নু মিয়াঁর শাগরেদ ছিল জানে আলম খান। কড়েয়া, তিলজলা, তপসিয়া, বেনিয়াপুকুর-সহ ওই চত্বরের বিভিন্ন থানায় একাধিক দুষ্কর্মে অভিযুক্তও ছিল সে। এমনকি, বছর কয়েক আগে জেলও খেটেছে। পরিবারের অবশ্য দাবি, কিছু দিন হল অপরাধের রাস্তা ছেড়ে ইলেট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছিল ওই যুবক।
অ্যাসিড ছুড়ে যাঁর শরীর সে ঝলসে দিয়েছে বলে অভিযোগ, জানে আলমের সেই প্রাক্তন স্ত্রী এখন আতঙ্কে কার্যত ‘গৃহবন্দি’ হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বুধবার দুপুরে আনন্দপুর থানা ওই মহিলাকে ডেকে পাঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও জানে আলমকে ধরতে পারেনি। নির্যাতিতার বৃদ্ধা মায়ের আর্জি, ‘‘১৭ বছর অনেক যন্ত্রণা সহ্য করে আমার মেয়ে সংসার করেছে। পুলিশকে অনুরোধ, দোষীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।’’
গত শনিবার সকালে আনন্দপুরে নিজের বাড়ি থেকে বেরোতেই বছর ছত্রিশের ওই মহিলার গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে দিয়েছিল প্রাক্তন স্বামী জানে আলম খান। সে দিনই আনন্দপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার পরে তপসিয়ায় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন নির্যাতিতা মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘হামলার পরে লাগাতার হুমকিতে আতঙ্কে রয়েছি। আমার প্রাক্তন স্বামীকে পুলিশ দ্রুত গ্রেফতার করুক, এটাই চাই।’’ মহিলার মায়ের কথায়, ‘‘আমার মেয়ে চোদ্দো বছর বয়সে ভালবেসে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর থেকেই ওকে নিয়মিত অত্যাচার করত জানে আলম। মাস কয়েক আগে খাবারে বিষ মিশিয়ে মেরেই ফেলতে চেয়েছিল। মেয়েকে বাঁচাতেই অন্য ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছি। আমার দুই নাতনিকে জানে আলম জোর করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে।’’
বুধবার জানে আলমের কড়েয়ার বাড়িতে গিয়েও তার দেখা মেলেনি। ভাই পারভেজ বলেন, ‘‘শনিবার সকাল ছ’টা নাগাদ দাদা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আর ফেরেনি। দিন দুই আগে ওর খোঁজে পুলিশ এসেছিল।’’ অ্যাসিড ছোড়া প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সতেরো বছর একসঙ্গে সংসার করার পরে কোনও মহিলা তাঁর স্বামীকে ছে়ড়়ে গেলে একটা রাগ তো হবেই! তবে দাদা অ্যাসিড ছুড়ে থাকলে কাজটা অন্যায় করেছে।’’
ঠিক কোন পরিস্থিতিতে এতটা নৃশংস আচরণ সম্ভব? মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের ব্যাখ্যা, ‘‘১৭ বছর সংসার করার পরে নিজের দখলদারিটা চলে যাচ্ছে, সেই রাগেই হয়তো প্রাক্তন স্বামী অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছেন।’’