Rupanjana Mitra

ঠিক বলেছে সায়নী-দেবলীনা, ডাকলে আমিও প্রতিবাদে যেতাম

রুদ্র খুব ভাল অভিনেতা। তবে একটা কথা বলব— কোনও কিছু পাওয়ার আশায় কেউ বিজেপি-তে যোগ দিলে সে ভুল করবে।

Advertisement

রূপাঞ্জনা মিত্র

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:১৬
Share:

রুপাঞ্জনা মিত্র।

আজকাল ফোনে কথা বললেই আমার ছেলে পাশে এসে বলে, ‘বিজেপি-কে ফোন করছ?’ ও এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে ওই নামটার সঙ্গে। আমি যদিও বছর দুই এই দলের সঙ্গে যুক্ত। রাজনীতি করতেই এসেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল ইন্ডাস্ট্রির হয়ে কাজ করব। সে সময় ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে ঠিকমতো কাজ করলেও ৬ থেকে ৭ মাস পারিশ্রমিক দেওয়া হত না। উপযুক্ত বিচার না পেয়ে আমি বিজেপি-তে এলাম। এখন তো শুনছি রুদ্রনীল ঘোষ বিজেপি-তে আসবে। রুদ্র খুব ভাল অভিনেতা। তবে একটা কথা বলব— কোনও কিছু পাওয়ার আশায় কেউ বিজেপি-তে যোগ দিলে সে ভুল করবে।

কখনও এমন দিন দেখতে হবে ভাবিনি। চোখের সামনে দেখছি, রাজনীতির জন্য ইন্ডাস্ট্রিটা ভাগ হয়ে যাচ্ছে। সহকর্মীরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাচ্ছে। মর্মান্তিক! আমিও কিন্তু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরেই মৃত্যু এবং ধর্ষণের হুমকি পেয়েছি। মনে আছে, তৃণমূলের নেতা দেবাংশুও সেই হুমকিবাজদের দলে ছিলেন। ফেসবুকে তা নিয়ে পোস্টও করেছিলাম। কিন্তু দিনের শেষে দেখেছি, ওই সব ‘ডিজিটাল থ্রেট’-কে এত গুরুত্ব দিয়ে লাভ নেই। আরও একটা কথা স্পষ্ট করে বলি? সায়নী বা দেবলীনার সঙ্গে যা হয়েছে তা অন্যায়। সায়নী নিজের কথা প্রকাশ করল। ব্যস, ওর ৫ বছরের পুরনো ছবি নিয়ে ওকে আক্রমণ করা শুরু হল। আমাকে এখনও আক্রমণ করা হচ্ছে। পোশাক নিয়ে কাঞ্চনাকে নানা কথা শুনতে হয়েছে। পছন্দ না হলেই আক্রমণ করে, দাঙ্গা করে মারপিট শুরু! কার কত বুকের পাটা আছে? সামনে এসে তো দাঁড়াক! দেখি একবার! ঠিক বলেছে দেবলীনা আর সায়নী। সামনে এসে কেউ দাঁড়াক!

Advertisement

গোমাংস খাওয়া আর শিল্পীদের মুখে পমেটম মেখে বাঁদরনাচ নাচা— এই দুই বিষয়ের চর্চা হচ্ছে সমাজমাধ্যমে। যে রাজনৈতিক নেতা-ই শিল্পীদের বাঁদরনাচ নিয়ে বলুন, তার তীব্র বিরোধিতা করছি। শিল্পীদের মান না থাকলে নেতারা তাঁদের রাজনৈতিক দলে ডাকছেন কেন? তবে রূপাঞ্জনা হিসাবে কারও বাড়ি গিয়ে বা আমার বাড়িতে নবমীর দিন আমি কখনও গোমাংস রান্না করব না। হঠাৎ করে নিজের ধর্মকে ছোট করে ‘লিবারাল’ বা মুক্তমনা হতে গিয়ে যে যা পারছে বলছে। সায়নী পারবে মহম্মদ প্রফেটের ছবিতে কন্ডোম পরিয়ে সেটা পোস্ট করতে? ওর কাছে আমার প্রশ্ন রইল। সেটা তো কোথাও আটকাতে হবে! মানুষই মানুষের শত্রু হয়ে যাচ্ছে। তা হলে রাজ্যের উন্নতি কী করে হবে? পশ্চিমবঙ্গকে এখন অধিকাংশ আলোচনাচক্রে ‘লস্ট স্টেট’ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। কেন? জানতে হবে। একটা অন্য সরকার আসুক না এখানে। দেখাই যাক না কী হয়! বিজেপি এলেই পশ্চিমবঙ্গে গোমাংস খাওয়া বন্ধ হবে, ধর্ষণ বাড়বে, জিন্‌স পরা যাবে না— এগুলো বোধহয় ভুল। এখন আমি ইনস্টাগ্রামে শাড়ি পরা ছবি দিচ্ছি। তাতে আমার ‘ফলোয়ার’ কমেছে। তা বলে কি বলব এখনকার মেয়েরা জিন্‌স বা শর্টস্ পরবে না? বিজেপি নিয়ে অতিরিক্ত আশঙ্কা করা হচ্ছে।

‘সায়নী বা দেবলীনার সঙ্গে যা হয়েছে তা অন্যায়।’

এতই যদি দেশ নিয়ে চিন্তা, এই যে ধর্মতলায় সমাবেশ হল, কই তা থেকে একটা অন্য দল গড়ে তোলা গেল না? গেল না। কেনই বা যাবে! পশ্চিমবঙ্গে নতুন দল গড়তেই দেওয়া হবে না। দেবলীনা আর সায়নী কিন্তু কোনও দলের হয়ে লড়াই করছে না। ‘ব্যক্তি’ রূপাঞ্জনাকে ফোনে যদি তারা ওই সমাবেশে যেতে বলত আমি যেতাম। নারীকে যে দল যেখানে অসম্মান করুক, আমি প্রতিবাদ করতে যাব। আমি তরুণজ্যোতি তিওয়ারিকে চিনি না। কিন্তু দেবলীনা-সায়নীকে চিনি। তাই তরুণজ্যোতি কী বলেছেন সেটা ওঁর বিষয়।

Advertisement

নেতাজির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান কিন্তু আমি সমর্থন করি না। আমি খুশিযে, নেতাজির জন্মদিনে আরএসএস-ও ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি সমর্থন করেনি। ফেসবুকে লিখেছিলাম, ‘মাননীয়া চাইলেই পারতেন ওই পরিস্থিতিতে মঞ্চ না ছেড়ে একটা অসাধারণ বক্তৃতা করে বেরিয়ে আসতে’। যে-ই না লেখা, অমনি সকলে আমার দিকে ধেয়ে এল! কেউ বুঝল না, আমি কী বলতে চাই। আমার তো মনে হয়, ওই জায়গায় বিধানচন্দ্র রায় বা জ্যোতি বসু থাকলে একটা অসাধারণ বক্তৃতা দিতেন। ওই ঘটনার আগে সে দিন মঞ্চে যে বাচ্চাগুলো গান গেয়েছল, তারা বাড়ি গিয়ে বাবা-মায়ের কাছে জানতে চাইবে না, কেন এমন হল? কী বলবে তাদের বাবা-মা? নতুন প্রজন্মের কাছে কি আমরা খুব ভাল দৃষ্টান্ত রাখতে পারলাম? এটাই বলতে চেয়েছিলাম। আর তাতেই আক্রমণ! কী করব তা হলে? শুধু সমাজমাধ্যমে জামা খুলে ছবি পোস্ট করব? হাজার মানুষ নোংরা কথা লিখবে। ট্রোল্‌ড হব? ঠিক কথা বললেই মেরে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে? এই দেশকে আমি চিনি না। সেলুলার জেলে গেলে এখনও কান্না পায় আমার। দেশের জন্য আবেগ আছে বলেই চোখে জল আসে।

‘কোনও কিছু পাওয়ার আশায় কেউ বিজেপি-তে যোগ দিলে সে ভুল করবে।’

এমনও শুনতে হয়েছে যে, আমার বাড়ি, গাড়ি সব নাকি বিজেপি দিয়েছে! যদিও সেগুলো ২০১৭ সালে করা। তখন কিন্তু আমি বিজেপি-তে যোগ দিইনি। এর সঙ্গে চলছে লবির খেলা। বিজেপি-তেই এক মহান নেত্রী আছেন। ২০১৪ সালে যুক্ত হয়েছেন। আমায় বলা হল ওঁকে না ঘাটাতে। ইনি কিন্তু লকেট বা রূপা’দি নন।

চারিদিক থেকে ফোন আসছে— আমি নাকি এ বার ভোটে লড়ছি! নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলা যায় না। এই মুহূর্তে একটা কথাই বলছি— ২০২১ এর নির্বাচনে ‘সৎ মানুষ’-এর প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন