State news

‘বন্ধুরা না আটকালে লজ্জায় সে দিনই আত্মহত্যা করতাম’

সম্ভ্রম বাঁচাতে হাতের কাছে যেটাই পেয়েছেন, শরীর ঢাকার চেষ্টা করছিলেন। কাঁদছিলেন! হাত জোড় করে অনুরোধ করছিলেন!

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ১৯:০৫
Share:

জামা-প্যান্ট টেনে খুলে নিয়ে এ ভাবেই হেনস্থা করা হয় ওই ছাত্রকে।—নিজস্ব চিত্র।

জোর করে ধরে রেখে জামা-প্যান্ট খুলে নিচ্ছিল ওরা। ঘরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। সম্ভ্রম বাঁচাতে হাতের কাছে যেটাই পেয়েছেন, শরীর ঢাকার চেষ্টা করছিলেন। কাঁদছিলেন! হাত জোড় করে অনুরোধ করছিলেন! কিন্তু সেই আর্জি ওদের কান পর্যন্ত পৌঁছয়নি।

Advertisement

এই লজ্জা নিয়ে বাঁচবেন কী ভাবে? বাবা-মার সামনে, সমাজের সামনে মুখই বা দেখাবেন কী ভাবে? সুইসাইড, হ্যাঁ সুইসাইড... মনে মনে তখন শুধু এটাই আওড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সে দিনই হয়তো নিজেকে শেষ করে দিতেন কলকাতার সেন্ট পলস কলেজের ওই ছাত্র! যদি না কয়েক জন বন্ধু তাঁর পথ আগলে দাঁড়াতেন।

ঘটনার পর ১৮ দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও মানসিক ভাবে একই রকম ভাবে বিপর্যস্ত। সে দিনের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে সোমবারও লজ্জায়-আতঙ্কে কেঁপে কেঁপে উঠছিলেন বার বার। বলছিলেন, ‘‘মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। এমনকি, আত্মহত্যা করব বলেও ভেবে ফেলি। বন্ধুরা পাশে ছিল। আমাকে বুঝিয়েছিল, আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয়।’’ যে পাঁচ বন্ধু ওই দিন তাঁকে সাহায্য করেছিলেন, তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘ওর পাশে দাঁড়ানোর পরেও ভয়ে আছি। আমাকেও হেনস্থা করা হতে পারে। আর সেই ভয় থেকেই আমরা দিনের পর দিন লুকিয়ে রয়েছি। কখনও আত্মীয়স্বজন, কখনও বন্ধুদের বাড়িতে রাত কাটাচ্ছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: তৃণমূল ছাত্রনেতাকে নগ্ন করে হেনস্থা কলকাতার কলেজে, অভিযুক্ত দলেরই চার

এত দিন বাড়িতেও কিছু জানাতে পারেননি ওই ছাত্র। সারা ক্ষণ গুমরে থাকতেন। রবিবার সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই ওই ছাত্রের বাবা-মা পুরো বিষয়টা জানতে পারেন।

দেখুন ভিডিও:

ছেলের মুখ থেকে সবটা জেনে বাবা এ দিন তাঁকে সঙ্গে করে কলেজে নিয়ে এসেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি আর্মহাস্ট স্ট্রিট থানাতেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। আলাদা করে কলেজের পক্ষ থেকেও ওই অভিযুক্তদের নামে থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। সেই তালিকায় মূল অভিযুক্ত অর্ণব ঘোষ, বহিরাগত শেখ এনামুল, কলেজের অস্থায়ী কর্মী অনন্ত প্রামাণিক এবং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অভিজিৎ দলুই ছাড়া আরও কয়েক জনের নাম রয়েছে।

অভিযুক্ত অনন্ত প্রামাণিক, অভিজিৎ দলুই এবং অর্ণব ঘোষ (বাঁ দিক থেকে)

এ দিন কলেজে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সেই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। পুলিশও ইতিমধ্যে খোঁজ শুরু করেছেন পলাতক অভিযুক্তদের। পড়ুয়াদের থেকেই জানা গেল, ঘটনার মূল অভিযুক্ত অর্ণব ঘোষ কোনও এক অজ্ঞাত জায়গা থেকে ফেসবুক লাইভ করেছে। লাইভে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করেছে সে। আর সেই ফেসবুক লাইভ দেখার পর থেকেই পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ওই কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র অর্ণব রীতিমতো দাদাগিরি চালাত। প্রথম বর্ষে নতুন পড়ুয়া ভর্তি হওয়া মানেই তাঁদের উপর অর্ণবের দাদাগিরি শুরু। তাঁদের ইউনিয়ন রুমে ডেকে নিয়ে গিয়ে, অশ্লীল কথা বলে উত্যক্ত করাই ছিল অর্ণবের কাজ।

সেন্ট পলসের ছাত্রকে নগ্ন করে হেনস্থা এবং তার ছবি তুলে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘ঠিক মতো ব্যবস্থা না নিলে বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করলে কলেজের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে।’’ এর পরই কলেজ পরিচালন সমিতি বৈঠকে বসে। সিদ্ধান্ত হয়, সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক কী ঘটেছিল খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। কলেজের টিচার ইন চার্জ দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। ওই ছাত্রের অভিভাবক এসে দেখা করেছেন। ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন