কলেজ স্কোয়ারে মিটিং-মিছিল নিষিদ্ধ হল সোমবার থেকে। এ জন্য আইনও তৈরি করছে রাজ্য।
বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারকেশ্বরের প্রশাসনিক বৈঠকে জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস আর কলেজ স্কোয়ারে মিটিং-মিছিল করবে না। অন্যদেরও তাই-ই করতে হবে। এ নিয়ে আইন হবে। তার পরে এ দিন রাতেই পুলিশের পক্ষে জানানো হয়, সোমবার থেকে কলেজ স্কোয়ারে মিটিং-মিছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হল।
বিষয়টির সূত্রপাত এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মী ইলিয়াস আখতারের একটি বক্তব্যে। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি জানান, কলেজ স্কোয়ারে এত মিটিং-মিছিল হয় যে ছেলেমেয়েরা ক্লাস করতে পারেন না। এগুলো বন্ধ হলেই ভাল হয়। মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি লুফে নিয়ে বলেন, ‘‘আমি জানি ছাত্রছাত্রীদের এতে খুব অসুবিধা হয়। সবারই ভেবে দেখা উচিত।’’ পাশে বসা পুর-নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে বলেন, ‘‘ববি পার্টিকে ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দাও, আমরা আর ওখান থেকে কোনও মিটিং-মিছিল করব না।’’ এই বিষয়ে আইন করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা করে দেন। তৃণমূলও যে ওখানে মিটিং-মিছিল করে, নিজেই স্বীকার করেছেন মমতা। শাসক দল শেষ কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিল করেছে নোট বাতিলের বিরোধিতায়। মমতা নিজেও তাতে ছিলেন।
রাতে নবান্ন থেকে বেরোনোর সময়েও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরাই চাইছেন না ওখানে মিটিং-মিছিল হোক। তাদের কথা মানা উচিত।’’
কলেজ স্কোয়ারে আন্দোলন নিয়ে যে যেখানে দাঁড়িয়ে
এ রাজ্যের রাজনৈতিক পটবদলে যে নন্দীগ্রাম আন্দোলন অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিল, তার জন্ম হয় বিশিষ্ট জনদের একটি ঐতিহাসিক মিছিল থেকে, যার সূচনা কলেজ স্কোয়ারেই। নেপথ্যে ওই আন্দোলনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরই নির্দেশে এখন কলেজ স্কোয়ারে মিটিং-মিছিল বন্ধ হচ্ছে। তা নিয়ে কী ভাবছেন ওঁরা?
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিরোধী মহল সরব। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঁদের ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। জিএস, এজিএস কে হবে, তা ঠিক করে দেন দলের নেতারা। হুগলিতে নিয়ে গিয়ে ওদের মুখ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ সব বলিয়ে নিচ্ছেন। তার পরে পুলিশকে দিয়ে মিটিং-মিছিল নিষিদ্ধ করাচ্ছেন।’’ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে পূর্ব পরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকে কলেজ স্কোয়ারে মিটিং-মিছিল হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ও ওখানে বহু দিন ধরে রয়েছে। বিকেলে নিজেদের লোকদের দিয়ে বলিয়ে নিয়ে রাতেই পুলিশকে দিয়ে নির্দেশ জারি।’’
এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু জানিয়েছেন, গণ প্রতিবাদের পথ ধরে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তারাই প্রতিবাদের অধিকার কেড়ে নিলে জনগণ তার যোগ্য জবাব দেবেন।
একদা এই চত্বরেই ছাত্র রাজনীতি করেছেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে তিনি অবশ্য স্বাগতই জানিয়েছেন। আরও এক ধাপ এগিয়ে কলেজ স্কোয়ারকে ঘিরে ‘নো ট্রাফিক জোন’ করার প্রস্তাবও দিয়েছেন সুব্রতবাবু।