স্বঘোষিত দাদাদের দৌরাত্ম্যে ত্রস্ত শহরবাসী, প্রতিকার কি মিলবে?
Baranagar

আদেশ পালন না করলেই ‘সাসপেন্ড’ করেন দাদা

বরাহনগরের একটি রুটের টোটোচালকদের জন্য এমনই ‘শাস্তি’র বিধান রয়েছে। তবে তা যাত্রী-প্রত্যাখ্যানের জন্য নয়।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০৪:৫০
Share:

ছবি: সংগৃহীত

হাঁক পাড়লেই হাজির হতে হবে। না হলেই ‘সাসপেন্ড’!

Advertisement

বরাহনগরের একটি রুটের টোটোচালকদের জন্য এমনই ‘শাস্তি’র বিধান রয়েছে। তবে তা যাত্রী-প্রত্যাখ্যানের জন্য নয়। অভিযোগ, দাদার ডাকে সময়ে পৌঁছতে না-পারলেই শাস্তি পেতে হয় চালককে। আর এই ‘দাদার দাপট’ মানতে গিয়ে নাজেহাল বরাহনগরের ব্যানার্জিপাড়া থেকে ডানলপ রুটের টোটোচালক ও মালিকদের একাংশ। আবার ওই দাদার জোরেই এক শ্রেণির টোটোচালক একচেটিয়া ‘দাদাগিরি’ও চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের।

তাঁতিপাড়ার একটি বেসরকারি স্কুলের সামনে থেকে ছেড়ে বারুইপাড়া, বড়পুকুর মাঠ, ইউবি কলোনি হয়ে ডানলপ পর্যন্ত চলাচল করে ২৬টি টোটো। ২০১৫ সালে ২০টি টোটো নিয়ে শুরু হয়েছিল ওই রুট। অভিযোগ, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই রুটে টোটো চলাচল শুরু হলেও স্থানীয় কোনও বেকার যুবক সেখানে টোটো চালানোর সুযোগ পাননি। বরং ২০-২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এসে ওই রুটে টোটো চালানো শুরু করেন। তবে ২০২০ সালে নতুন ছ’টি টোটোর মধ্যে স্থানীয় চাপে তিনটি ওই ওয়ার্ড থেকে নেমেছে। চালকদের একাংশের দাবি, শুধু নতুন টোটোই নয়, রুটের কোনও টোটো বিক্রি হলে যিনি কিনছেন, তাঁকেও টাকা দিতে হয়। অভিযোগ, সেই ‘কোপ’ থেকে বাদ যাননি টোটো সংগঠনের এক পদাধিকারীও। তাঁকেও কয়েক হাজার টাকা দিতে হয়েছে দাদাকে।

Advertisement

শুধু তা-ই নয়, যে কোনও কাজে বা আড্ডা দিতে গেলেও ওই দাদা টোটো চড়েই যাতায়াত করেন বলে অভিযোগ। নিজের প্রয়োজন হলেই তাঁর ফোন যায় সংগঠনে। দাবি মেনে টোটোও পাঠাতে হয়। তা নিয়েই তিনি যান নিজের গন্তব্যে। আর সেই ডাকে যেতে দেরি হলেই জোটে দাদার চোখরাঙানি। তবে তিনি গন্তব্যে পৌঁছেই যে টোটোটি ছেড়ে দেন, তা-ও নয়। বরং নিজের মর্জি মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই টোটো আটকে রাখেন। আর তাই দাদার ডাক এলেই তাঁরা আতঙ্কে থাকেন বলে জানাচ্ছেন চালকদের একাংশ। তাঁদের কথায়, ‘‘যেতে আপত্তি নেই। কিন্তু ভাড়া তো চাওয়া যাবে না। তা হলে আমার পেট চলবে কী করে?’’ আরও দাবি, যত ক্ষণ টোটোটি ‘দাদার ডিউটি’-তে থাকে, সেই সময় হিসেব করে ঘণ্টা প্রতি ৫০ টাকা করে টোটোচালককে দিতে হয় সংগঠনকেই। প্রতিদিন পাঁচ টাকা করে প্রতিটি টোটো থেকে চাঁদা নেয় সংগঠন। অর্থাৎ, ১৩০ টাকা করে মাসে ৩৯০০ টাকা চাঁদা আদায় হয়। এক সদস্যের কথায়, ‘‘চাঁদা নিয়ে একটা তহবিল গড়া হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা সেখান থেকে ধার নিই। কিন্তু দাদার টোটোভাড়া মেটাতেই তো অর্ধেক খরচ হয়ে যায়।’’

দাদার কথা না শুনলেও উপায় নেই বলে জানিয়ে এক চালকের দাবি, ‘‘উনিই তো ঠিক করেন কোন টোটো নামবে, আর কোনটা বন্ধ থাকবে।’’ তবে সম্প্রতি ‘দাদার দাপটে’ আপত্তি জানাতে শুরু করেছেন সংগঠনের একাংশই। তাঁরা জানাচ্ছেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রত্যেক যাত্রীকেই ভাড়া দিতে হবে। তিনি যে-ই হোন না কেন। কিন্তু অভিযোগ, তাতেও আপত্তি। সম্প্রতি এক বয়স্ক চালক ভাড়া চাওয়ায় ‘অপমানিত’ হয়ে ওই টোটোই ‘সাসপেন্ড’ করার নির্দেশ দিয়েছেন দাদা। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন ও অসত্য বলেই দাবি ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর অনিন্দ্য চৌধুরীর। তাঁর কথায়, ‘‘টোটোর সংগঠন স্বীকৃত নয়। তবে যখন শুরু হয়েছিল, ওঁরা আমাকে সভাপতি করেছিলেন। দলের মিছিল-সমাবেশে শুধু নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু গত ডিসেম্বর থেকে ওই পদ ছেড়ে দিয়েছি। তবে ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’

পাশাপাশি অনিন্দ্যের দাবি, সংগঠনের সম্পাদক কারও মদতে তাঁর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ভাবে এ সব মিথ্যা অভিযোগ রটাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘টোটোয় আবার ওয়ার্ড কিসের।

বেকার যুবকদের রোজগারের ব্যবস্থা করতেই অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আর প্রতি মাসে আমি ২০০ টাকা করে সংগঠনে চাঁদা দিতাম।’’ তবে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি সম্পাদক অভিজিৎ দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন