ধর্ষণের ভিডিয়ো তুলে বারবার গণধর্ষণ কিড স্ট্রিটের পার্লারে

২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিটে চলন্ত গাড়িতে এক মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। এ বার তিলজলার এক তরুণীকে কিড স্ট্রিটের একটি ‘ইউনিসেক্স’ পার্লারে ঢুকিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১২
Share:

অকুস্থল: এই পার্লারেই ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

শহরে আবার গণধর্ষণের অভিযোগ! এবং আবারও ঘটনাস্থল সেই পার্ক স্ট্রিট চত্বর!

Advertisement

২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিটে চলন্ত গাড়িতে এক মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। এ বার তিলজলার এক তরুণীকে কিড স্ট্রিটের একটি ‘ইউনিসেক্স’ পার্লারে ঢুকিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথম বারের ধর্ষণেই ওই তরুণীর নির্যাতন শেষ হয়নি। সেই ঘটনার ভিডিয়ো তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই তরুণীকে এর পরেও একাধিক দিন ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষকেরা ওই তরুণীকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলে ওই ভিডিয়ো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া তো হবেই, সেই সঙ্গে তাঁর সাত বছরের মেয়েকেও খুন করা হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় শুক্র ও শনিবার মিলিয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম মানোয়ার আলি ওরফে গুড্ডু, মহম্মদ শাকিল ও রিনা বেগম। মানোয়ার আনন্দপুরের বাসিন্দা। শাকিলের বাড়ি ট্যাংরায়। রিনা ও অভিযোগকারিণী একই এলাকার বাসিন্দা। সীমা নামে এক মহিলা ও নগেন্দ্র নামে এক পুরুষ অভিযুক্ত এখনও ফেরার। ধৃতেরা তিন জন ও সীমা ওই পার্লারেরই কর্মী। নগেন্দ্র মালিক। আদালতে তোলা হলে ধৃতদের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

Advertisement

আরও পড়ুন: হেনস্থায় বাধা কেন? গভীর রাতে ‘উচিত শিক্ষা’ পুলিশকর্মীকে

২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিটের একটি নাইট ক্লাব থেকে ফেরার সময়ে সুজেট জর্ডন নামে এক মহিলাকে গাড়িতে তুলে মারধর ও ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। প্রথমে পুলিশ-প্রশাসন বিষয়টিকে আমল দেয়নি। পরে কয়েক জনকে ধরা হয়। কিন্তু মূল অভিযুক্ত কাদের খান পালিয়ে গিয়েছিল। কয়েক বছর পরে কাদেরকেও ভিন্ রাজ্য থেকে পাক়ড়াও করে লালবাজার।

আরও পড়ুন: নিখোঁজ যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার

কিড স্ট্রিটের ঘটনায় ধর্ষিতা ২২ বছরের তরুণী তিলজলা থানায় জানিয়েছেন, রিনা ২৪ অক্টোবর তাঁকে ‘ভাল কাজ’ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ওই পার্লারে নিয়ে যায়। সে দিনই গুড্ডু ও শাকিল পার্লারের ভিতরে তাঁকে ধর্ষণ করে। সে সময়ে রিনা ছা়ড়া সীমা ও নগেন্দ্রও সেখানে ছিল। তারাই মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিয়ো তোলে। ওই তরুণীর অভিযোগ, ধর্ষণের পরে তাঁকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, থানায় গেলেই ওই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

ওই তরুণী জানান, তিনি বিবাহ-বিচ্ছিন্না। বছর সাতেকের মেয়ে ও মাকে নিয়ে তিলজলার একটি ঘুপচি ঘরে থাকেন। সংসার চালাতে সেলাই ও ডিজাইনিংয়ের কাজ করেন। কিন্তু সেই আয়ে কুলিয়ে ওঠে না। তাই বেশি আয়ের পথ খুঁজছিলেন। রিনা সেই সুযোগকেই কাজে লাগায়। ‘‘নালিশ জানালে মেয়েকেও শেষ করে দেওয়ার হুমকি দেয় ওরা,’’ বলেন ওই তরুণী।

ওই তরুণী জানান, গত ২৬ অক্টোবর রিনা আবার তাঁকে ফোন করে এবং কাজে যেতে চাপ দেয়। না গেলে মেয়েকে খুনের হুমকিও দেয়। তরুণী ফের ওই পার্লারে গেলে আবার তাঁকে ভিডিয়ো ফাঁসের ভয় দেখিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরের চার দিনও তাঁকে ভয় দেখিয়ে পার্লারে নিয়ে গিয়ে বারবার ধর্ষণ করা হয়েছে বলে তরুণীর দাবি।

শনিবার ওই তরুণী জানান, ১৮ নভেম্বর রিনা ফের তাঁকে ফোন করে হুমকি দেয়। সীমা তাঁর বাড়ি গিয়ে চড়াও হয়। তিনি বলেন, ‘‘ভয়ে গত চার দিন ধরে বাড়ি ছেড়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আর শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়ে কাটিয়েছি। শুক্রবার ঠিক করি, পুলিশে অভিযোগ জানাব। সেই মতো তিলজলা থানায় অভিযোগ দায়ের করি।’’ তরুণীর মায়ের দাবি, এ দিন সকালে সীমা-সহ তিন জন গিয়ে টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিতে বলে।

কিড স্ট্রিটের ওই এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ওই পার্লারে যে অসামাজিক কাজকর্ম চলে, তা তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন। তবে পুলিশের দাবি, তারা এলাকাবাসীর কথায় ওই পার্লারে গিয়ে খোঁজখবর নিলেও সে সময়ে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন