বাজেয়াপ্ত হয়েছে দুষ্কৃতীদের এই বাইকটি। নিজস্ব চিত্র
রাতের রাজপথে রেয়াত নেই পুলিশেরও।
দম্পতিকে হেনস্থা হতে দেখে রাতের শহরে কয়েক জন যুবকের আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এক পুলিশকর্মী। ওই পুলিশকর্মীকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে গভীর রাতে ফিরে এসে অন্য এক পুলিশকর্মীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল ওই দম্পতিকে হেনস্থায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কর্তব্যরত পুলিশকর্মী এবং দম্পতিকে ‘দেখে নেব’ বলে হুমকি দিয়েছে ওই অভিযুক্তেরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে টালিগঞ্জ থানা এলাকার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড এবং আবদুল রসুল অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দম্পতি এবং পুলিশকর্মীদের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় শনিবার এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত বিশাল সাউ চারু মার্কেটের বাসিন্দা। তবে এ ভাবে পুলিশকর্মীকে শাসানির ঘটনায় স্তম্ভিত পুলিশেরই একাংশ। ইতিমধ্যে শহরের পথে বচসা চলাকালীন পুলিশকে মারধর, থানায় ঢুকে হুমকির দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও ঠান্ডা মাথায়, দলবল নিয়ে ফিরে এসে পুলিশকে আক্রমণের পরিকল্পনা আগে দেখা যায়নি বিশেষ। এই বেপরোয়া ভাবই কপালে ভাঁজ ফেলেছে প্রশাসনের।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ কসবার অফিস বন্ধ করে স্কুটিতে করে বাড়ি ফিরছিলেন বজবজের গ্রাফিক্স ডিজাইনার এক দম্পতি। অভিযোগ, তাঁরা রবীন্দ্র সরোবরের পাশ দিয়ে আসার সময়ে আবদুল রসুল অ্যাভিনিউয়ে দুই যুবককে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে দেখেন। শনিবার ওই যুবক বলেন, ‘‘শহর জুড়ে যত্রতত্র পানের পিক, থুতু ফেলা যাবে না বলে প্রচার শুরু হয়েছে। ওই দুই যুবককে দেখে আমি প্রশ্ন করি, এটা কি প্রস্রাব করার জায়গা?’’ পুলিশ জানায়, ওই কথা বলার পরে দম্পতির স্কুটি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড এবং আবদুল রসুল অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে সিগন্যালে দাঁড়ায়। তখন ওই দুই যুবক-সহ ন’জন তিনটি বাইকে এসে ঘিরে ধরে প্রতিবাদী দম্পতিকে। শুরু হয় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। জামার হাতা গুটিয়ে ‘দেখে নেওয়ার’ কথাও বলে তারা। বিষয়টি দেখে দেখে এগিয়ে যান টালিগঞ্জ ট্র্যাফিক গার্ডের কর্তব্যরত হোমগার্ড তিলক গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি দম্পতিকে মারমুখী যুবকদের হাত থেকে আটকাতে মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ, ওই যুবকেরা হুমকি দিতে শুরু করে হোমগার্ডকে।
পুলিশ জানায়, হোমগার্ড বোঝানোর চেষ্টা করলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়, উর্দি খুলে এলে দেখে নেওয়ার কথা বলে। একই সঙ্গে তাঁকে সেখানে চাকরি করতে দেবে না বলেও হুমকি দেয় তারা। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, মারধরের হুমকি চলতে থাকলেও অবিচল ছিলেন ওই হোমগার্ড। ওই পুলিশকর্মী ঠিক করেই নিয়েছিলেন ওই দম্পতিকে তিনি বাঁচাবেন। সেইমতো ওই দম্পতিকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।
তদন্তকারীরা জানান, হোমগার্ডের কাছ থেকে খবর পেয়ে অন্য পুলিশ অফিসারেরা সেখানে পৌঁছলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় যুবকেরা। পরে ওই দম্পতি টালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তবে পুলিশ জানাচ্ছে, ঘটনার এখানেই শেষ নয়। রাত দশটা নাগাদ ওই জায়গায় ডিউটি শুরু করেন ট্র্যাফিক কনস্টেবল হাবিবুর রহমান। ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ তিনি দেখেন, ওই যুবকদের দল লাঠি, ছুরি হাতে ফিরে এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মোটরবাইক থেকে নেমে তারা তিলককে খুঁজতে থাকে। তাঁকে না পেয়ে কনস্টেবলকে ঘিরে ধরে হুমকি দেয় তারা। তিলকের বাড়ি কোথায়, তাও জানতে চাওয়া হয়। ফের ওই যুবকদের দল সেখানে হাজির হয়ে হুমকি দিচ্ছে জানতে পেরেই পৌঁছে যান টালিগঞ্জ থানা ও ট্র্যাফিক অফিসারেরা। পুলিশ দেখেই ফের পালায় দলটি। পরে ওই পুলিশকর্মী হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। ওই হোমগার্ডের সাহসিকতার জন্যই নিগ্রহের হাত থেকে বেঁচেছেন ওই দম্পতি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy