সহায়: করোনা রোগীদের জিনিসপত্র পৌঁছতে যাচ্ছে অনিকেত। নিজস্ব চিত্র
কিছু দিনের মধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পিছিয়ে যায়নি মধ্যমগ্রাম হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অনিকেত মুখোপাধ্যায়। পরীক্ষার প্রস্তুতির ফাঁকেই সে করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের পৌঁছে দিয়েছে ওষুধ, খাবারদাবার, এমনকি অক্সিজেন সিলিন্ডারও।
পড়াশোনার ফাঁকে ফোন বেজে উঠলেই সচেতন হয়ে যায় অনিকেত। ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা, ঘরবন্দি করোনা রোগীর হয়তো দরকার খাবার বা ওষুধ। পড়া ফেলে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিয়ে অনিকেত তখনই ছোটে দরকারি জিনিস পৌঁছে দিতে। গত দু’মাস ধরে অনিকেত এই ভাবেই করোনা রোগীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তার কথায়, “এখন তো সংক্রমণ অনেকটাই নিম্নমুখী। আবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও বাতিল হয়ে গেল। কিন্তু এপ্রিলের শেষে আর গোটা মে মাস জুড়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। এক দিকে পাড়ার করোনা রোগীরা ফোনে সাহায্য চাইছেন। অন্য দিকে আবার পড়ার যথেষ্ট চাপও রয়েছে। তখন তো জানতাম না যে, পরীক্ষা বাতিল হবে।’’
অনিকেত জানাল, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে পাড়ায় করোনা আক্রান্তের খবর বেশি করে পাওয়া যাচ্ছিল। অনেক বয়স্ক মানুষ ছিলেন যাঁদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেওয়ার কেউ ছিলেন না। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল ঠিকই, কিন্তু করোনা রোগীর সংখ্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। ফলে তারও করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা হয়। অনিকেত বলল, “করোনা রোগীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিই। কিছু ক্ষণের মধ্যে ফোন আসে মধ্যমগ্রামেরই এক করোনা রোগীর। তাঁর ওষুধ দরকার ছিল।” সেই শুরু। তার পর থেকে প্রায় দু’মাস এই কাজ করে যাচ্ছে অনিকেত। সে জানাল, জিনিসপত্র কিনে আগে পৌঁছে দিয়ে আসে। তার পরে বিল দিয়ে অনলাইনে বা নগদে টাকা নিয়ে নেয়। অনিকেত বলে, “আমি ছাত্র। তাই বিনামূল্যে পরিষেবা দিতে পারিনি।’’
তবে এই কাজের জন্য আনুষঙ্গিক কিছু খরচ হয়েই যেত তার। বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য পাড়ার এক টোটোচালকের সঙ্গে কথা বলে রেখেছিল সে। তার উদ্যোগ দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন পাড়ার বড়রাও। তাঁরাও বাজার, ওষুধ পৌঁছে দিয়েছেন করোনা রোগীদের বাড়িতে।
অনিকেতের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে তার স্কুলও। প্রধান শিক্ষক আশুতোষ ঘোষ বলেন, ‘‘অনেকেই এই সময়ে মানুষের পাশে থেকেছেন। তবে এক জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পড়াশোনার ফাঁকে যে ভাবে কাজ করেছে, তা প্রশংসনীয়। অনিকেতকে দেখে অনেকে এগিয়ে এসেছেন।’’ স্কুল থেকে অনিকেতকে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, পিপিই কিট দেওয়া হয়েছে। আশুতোষবাবু বলেন, ‘‘তখন তো জানতাম না পরীক্ষা বাতিল হবে। ওকে খুব সাবধানে কাজ করতে বলতাম।’’
কোনও কোনও করোনা রোগীর বাড়িতে পিপিই কিট পরেও গিয়েছে অনিকেত। তার কথায়, ‘‘পিপিই কিট পরে কাজ করা অভ্যাস নেই। অসুবিধা হয়েছে খুব। তবে আমাকে যাঁরা ডাকতেন, তাঁরা আরও বেশি অসুবিধার মধ্যে আছেন এটাই ভাবতাম। ওঁদের পাশে দাঁড়াতেই হত।’’