লক্ষ্মী বন্দ্যোপাধ্যায়
ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক মহিলার। শনিবার রাতে, দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। মৃতার নাম লক্ষ্মী বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৩)। বাড়ি কাঁচরাপাড়ায়।
এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে লক্ষ্মীদেবীর পাড়ায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, কাঁচরাপাড়া পুরসভার বেশ কয়েকটি এলাকার বহু মানুষ জ্বরে আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। এর আগে পাশাপাশি এলাকা গারুলিয়া এবং ভাটপাড়া পুর এলাকায় ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি কাঁকিনাড়া, নৈহাটি, ভাটপাড়াতেও ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি। তাতেই আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। কাঁচরাপাড়ায় লক্ষ্মীদেবীর পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভার নজরদারির অভাবেই ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
লক্ষ্মীদেবীর স্বামী নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের কর্মী। কাঁচরাপাড়ার সিদ্ধেশ্বরী লেনে তাঁদের বাড়ি। এলাকাটি পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। লক্ষ্মীদেবীর বোন কাকলি চৌধুরী জানান, গত ১২ অক্টোবর থেকে জ্বর শুরু হয় তাঁর দিদির। স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু জ্বর কমেনি। দু’দিন পরে বমি শুরু হয় তাঁর। ষষ্ঠীর দিন তাকে কাঁচরাপাড়া রেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেই রাতেই তাঁকে পাঠানো হয় শিয়ালদহের বি আর সিংহ রেল হাসপাতালে। পরিজনেরা জানান, সেখানে অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। তাই পরদিন তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
লক্ষ্মীদেবীর পরিবারের অভিযোগ, ওই বেসরকারি হাসপাতালে থাকাকালীন তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হয়। তাঁর রক্তের প্লেটলেট কমতে থাকে। দশমীর দিন প্লেটলেট ২২ হাজারে নেমে আসে। বাইরে থেকে প্লেটলেট দিয়েও অবস্থার অবনতি ঠেকানো যায়নি। শনিবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ ওই হাসপাতালেই মৃত্যু হয় লক্ষ্মীদেবীর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত লক্ষ্মীদেবী ডায়াবিটিস-সহ আরও বেশ কিছু রোগে ভুগছিলেন। তার ফলে তাঁর রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেকটা কমে গিয়েছিল। সেই কারণেই ডেঙ্গির ধাক্কা তিনি সামলাতে পারেননি। একে একে তাঁর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মাল্টি অর্গান ফেলিওর এবং সেপসিস অর্থাৎ সংক্রমণ। তবে তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটেও ডেঙ্গির উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, লক্ষ্মীদেবীর এলাকার বেশ কয়েক জন বাসিন্দা এখন জ্বরে আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে অন্তত সাত জন ডেঙ্গির শিকার। তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। লক্ষ্মীদেবীর মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ঘরে ঘরে জ্বর হওয়া সত্ত্বেও পুরসভা বিশেষ নজর দিচ্ছে না। উৎসবেই মেতে রয়েছে পুরসভা। ডেঙ্গি ঠেকানোর জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সচেতনতার প্রচারও নেই। কাঁচরাপাড়ার পুরপ্রধান সুদামা রায়ের অবশ্য বক্তব্য, “ওই মহিলা ডেঙ্গি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে শুনেছি। সেই জন্যই ওঁর মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গি ঠেকানোর জন্য পুরসভা যথাসাধ্য পদক্ষেপ করছে। এলাকায় সচেতনতার প্রচারও চলছে। তার পরেও কয়েক জনের ডেঙ্গি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে আর কেউ ডেঙ্গির শিকার না হন।’’