মমতার ধমক গায়েই মাখছে না পুলিশ

দুষ্কৃতী-দাপট দেখল বেলঘরিয়ার রাজপথ

পানিহাটির পরে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে। আরও এক বার নিশানায় ব্যারাকপুর কমিশনারেট। রবিবারই পানিহাটিতে দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে মদ্যপানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন রাজ্যস্তরের এক ভলিবল খেলোয়াড় ও তাঁর আত্মীয়। তার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সোমবার বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রকাশ্য রাস্তায় দুষ্কৃতী হামলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলঘরিয়া শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

জখম সুকুমার। — নিজস্ব চিত্র।

পানিহাটির পরে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে। আরও এক বার নিশানায় ব্যারাকপুর কমিশনারেট।

Advertisement

রবিবারই পানিহাটিতে দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে মদ্যপানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন রাজ্যস্তরের এক ভলিবল খেলোয়াড় ও তাঁর আত্মীয়। তার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সোমবার বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রকাশ্য রাস্তায় দুষ্কৃতী হামলা। এ দিন সকাল পৌনে ৭টা নাগাদ বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সেতুর উপরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করে টাকাভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। গত বৃহস্পতিবার মধ্যমগ্রামে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে বিশেষত এই কমিশনারেটেরই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী দুষেছিলেন পুলিশি নজরদারিকে। রবিবারের পরে এ দিনের ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বাস্তব পরিস্থিতি ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে।

পুলিশ জানায়, এ দিন সকালের ওই সময়ে সেতুর উপরে লোকজন বা গাড়ির তেমন ভিড় ছিল না। প্রতিদিনের মতো ওই পথ ধরে সাইকেল নিয়ে ডানলপের অফিসে যাচ্ছিলেন দমদম ক্যান্টনমেন্টের গোরুই পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সুকুমার পাল। একটি বেসরকারি মোবাইল সংস্থার ডিলারের হয়ে সেল্সম্যানের কাজ করেন তিনি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রমোদনগর, তিন নম্বর এলাকা হয়ে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠেন সুকুমারবাবু। অভিযোগ, সিসিআর ব্রিজ পেরিয়ে ফের এক্সপ্রেসওয়েতে নামার কিছুটা আগেই আচমকা পিছন থেকে একটি মোটরবাইক এসে তাঁর পথ আটকে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বছর পঁয়ত্রিশের তিন যুবক নেমে এসে ঘিরে ধরে সুকুমারবাবুকে। তাঁদের এক জনের মুখ সাদা রুমাল দিয়ে বাঁধা ছিল।

Advertisement

সুকুমারবাবুর অভিযোগ, ওই দুষ্কৃতীরা বাইক থেকে নেমেই অকথ্য গালিগালাজ করতে থাকে। প্রতিবাদ করতেই সাইকেল থেকে তাঁকে টেনে নামিয়ে শুরু হয় মারধর। বছর বিয়াল্লিশের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘চড়, ঘুষি মারার ফাঁকেই সাদা রুমাল বাঁধা ছেলেটা আমার পেটে রিভলভার চেপে ধরে বলে ‘ব্যাগটা দিয়ে দে।’ আমার কাছে ব্যবসার ৩৯ হাজার টাকা ছিল। তাই প্রাণপণে ব্যাগটা বুকে আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা শুরু করলাম।’’ তাঁর অভিযোগ, ধস্তাধস্তি শুরু হতেই সাদা রুমাল বাঁধা গুলি চালায়। সেই গুলি লাগে সেতুর রেলিংয়ে। এর পরেই রিভলভারের বাঁট দিয়ে সুকুমারবাবুর মাথা ও হাতে আঘাত করে ওই দুষ্কৃতী। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই হাত থেকে টাকাভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে ডানলপের দিকে চম্পট দেয় তিন দুষ্কৃতী। মাথা ও হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকা অবস্থাতেই সাইকেল চালিয়ে বরাহনগর থানায় যান সুকুমারবাবু। তাঁর অভিযোগ শোনার পরে পুলিশই ওই ব্যক্তিকে বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসার পরে তারাই ফের সুকুমারবাবুকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই খবর যায় বেলঘরিয়া থানায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোলও পেয়েছে পুলিশ।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, এক সাইকেল আরোহীর কাছে এত টাকা রয়েছে, দুষ্কৃতীদের কাছে তার আগাম খবর ছিল এবং পুরো ঘটনাটিই পূর্ব পরিকল্পিত। আবার পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালানো হলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় পুলিশের অনুমান, স্রেফ ভয় দেখানোই উদ্দেশ্য ছিল দুষ্কৃতীদের। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমি‌শনার নীরজ সিংহ বলেন, ‘‘ওই সাইকেল আরোহীর থেকে টাকা ছিনতাই করেছে তিন দুষ্কৃতী। বাধা দিতে গেলে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। গুলি চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সিনিয়র অফিসারদের দিয়ে পুরো ঘটনার তদন্ত করানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন