ভাড়ার তাপে ঝলসে দিচ্ছে অ্যাপ-ক্যাবও

সকাল হোক বা দুপুর, অ্যাপ-ক্যাবে এখন দিনের যে কোনও সময়েই অস্বাভাবিক রকমের বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ০২:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

রোদের তাপকেও হার মানাচ্ছে অ্যাপ-ক্যাবের চড়া ভাড়ার আঁচ!

Advertisement

সকাল হোক বা দুপুর, অ্যাপ-ক্যাবে এখন দিনের যে কোনও সময়েই অস্বাভাবিক রকমের বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, অল্প দূরত্বেও ১৫০-২০০ টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাঁদের। দূরত্ব একটু বেশি হলেই সেই অঙ্কটা হয়ে যাচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা!

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বালিগঞ্জ থেকে এসপ্ল্যানেড যেতে অ্যাপ-ক্যাবে ওঠেন সুজিত বিশ্বাস। তাঁকে গুনতে হয় ৩২০ টাকা! সুজিত জানান, সাধারণত ওই দূরত্বের জন্য ভাড়া দিতে হয় ১৪০-১৫০ টাকা।

Advertisement

এ দিন যোধপুর পার্ক থেকে কসবা ডাকঘরের কাছে পৌঁছতে মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ১৯০ টাকা দিতে হয়েছে দেবপর্ণা সরকারকে!

আরও পড়ুন: অচেনা আষাঢ়ে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা আজও

আবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সল্টলেকের ১৩ নম্বর ট্যাঙ্ক থেকে পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি অফিসে পৌঁছতে শর্মিলা বসুকে দিতে হয় ১৮০ টাকা!

উত্তর কলকাতার সিঁথির এক বাসিন্দা জানান, বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ সিঁথি থেকে শোভাবাজার যেতে তাঁকে দিতে হয়েছে ২২০ টাকা! বছরের অন্য সময়ে যার জন্য খরচ হয় ১০০-১১০ টাকা।

টালা থেকে টালিগঞ্জ বা বেহালা থেকে বাগুইআটি— এক অবস্থা।

গত শুক্রবার পরিবহণ দফতর অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলির কাছে চিঠি দিয়ে তাদের ভাড়া নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে ব্যাখ্যা তলব করেছে। কীসের ভিত্তিতে ‘সার্জ প্রাইস’ ঠিক করা হয়, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, ক্যাব সংস্থাগুলি এখনও চিঠির জবাব দেয়নি। কিন্তু তার আগেই গত দু’দিনে ভাড়া যে ভাবে বেড়েছে, তাতে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে সরকারের আদৌ কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন যাত্রীদের একাংশ। এ বিষয়ে পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলির কাছে ভাড়া নিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ওরা জবাব দিলে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’

অ্যাপ-ক্যাবের যাত্রী শর্মিলা বসু বলেন, “শহরের কোন অঞ্চলে গেলে সার্জ-প্রাইস গুনতে হবে না, তাই তো বুঝতে পারছি না। গত দু’-দিনে যখনই ক্যাব বুক করেছি, তখনই কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে।”

অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার কর্তারা অবশ্য পুরনো যুক্তিই দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, চাহিদার সঙ্গে জোগানের সামঞ্জস্য রাখতেই সার্জ-প্রাইসিং বা ডায়নামিক প্রাইসিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। যে এলাকায় চাহিদা বেশি অথচ ক্যাব কম, সেখানে গাড়ির সংখ্যা বাড়াতেই এই ব্যবস্থা। তাঁদের ব্যাখ্যা, কোথাও ভাড়া বাড়লে অন্য কোথাও সমানুপাতিক হারে যাতায়াতের ভাড়া কমে। এ ক্ষেত্রে সার্জ প্রাইস নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নির্দিষ্ট ‘অ্যালগরিদম’ মেনে হয়। তবে গত দু’দিনে প্রায় সব এলাকাতেই সারাদিন যাত্রীদের সার্জ প্রাইস গুনতে হয়েছে কেন, তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ওই কর্তা।

অ্যাপ-ক্যাব চালকদের সংগঠনের অভিযোগ, প্রত্যেক রাইডে ২০ শতাংশ টাকা সংস্থা পায়। অভিযোগ, সংস্থাগুলি নিজেদের আয়ের অংশ বাড়াতেই ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াচ্ছে।

এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “ভাড়া নির্ধারণের পদ্ধতিতে সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। কখনওই বর্ধিত ভাড়া মূল ভাড়ার পঞ্চাশ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। ক্যাব সংস্থাগুলির কাছে এ নিয়েই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।”

এ দিন অ্যাপ-ক্যাবের বাড়তি ভাড়ার জেরে রাজ্য পরিবহণ নিগমের এসি বাসেও ভিড় ছিল যথেষ্ট। সল্টলেক, টালিগঞ্জ, বিমানবন্দর-সহ বিভিন্ন রুটেই যাত্রী-সংখ্যা ছিল অন্য দিনের চেয়ে বেশি। বাড়তি যাত্রীর চাপে কোথাও কোথাও বাতানুকূল যন্ত্রের সমস্যার কথাও শোনা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন