বিধায়কের নাম করে প্রতারণা

খোদ মুখ্যমন্ত্রী ও পুরমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরাহনগরের কুড়ি বিঘা সরকারি জমি কোনও নির্মাণকারী সংস্থাকে হস্তান্তর করা হবে। যোগাযোগ করতে হবে এলাকার বিধায়ক তথা উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায়ের সঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০০:১৭
Share:

খোদ মুখ্যমন্ত্রী ও পুরমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরাহনগরের কুড়ি বিঘা সরকারি জমি কোনও নির্মাণকারী সংস্থাকে হস্তান্তর করা হবে। যোগাযোগ করতে হবে এলাকার বিধায়ক তথা উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায়ের সঙ্গে। নির্মাণকারী সংস্থার সুপারভাইজার এক বন্ধুকে ফোনে এমনই জানান আর এক ঠিকাদার। পুরোটাই ছিল ‘ভুয়ো’!

Advertisement

সেই ভুয়ো বিধায়কের চক্করে পরে টেন্ডার ফি বাবদ সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা খোয়া গিয়েছিল বালির বাসিন্দা নির্মাণকারী সংস্থার ওই কর্মীর। প্রায় এক মাস পরে শুক্রবার বারাসত থেকে ধরা পড়ল বিধায়ক তথা মুখ্য সচেতক পরিচয় দেওয়া প্রতারক শুভজিৎ রায়। বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান সন্তোষ পাণ্ডে জানান, বাকিদের খোঁজ চলছে।

নির্মাণকারী সংস্থার কর্মী ললিত মাহাতো পুলিশকে জানান, ২৯ অক্টোবর পেশায় সরকারি ঠিকাদার সুদীপ্ত নামে তাঁর এক বন্ধু ফোনে জানান, মুখ্যমন্ত্রী ও ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে বিটি রোডের ধারে ২০ বিঘা জমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টেন্ডার করে কোনও নির্মাণকারী সংস্থাকে দেওয়া হবে। ললিতের সংস্থা কাজটি চাইলে দ্রুত বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সুদীপ্ত একটি ফোন নম্বরও দেন, বলেন সেটি তাপসবাবুর। ললিত বলেন, ‘‘ওই নম্বরে ফোন করলে জানানো হয় তাপস রায় কথা বলছেন। টেন্ডারের জন্য দ্রুত উন্নয়ন ভবনে এসে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা জমা করতে হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বলা হয়, আগে টেন্ডারের টাকা জমা দিন। রসিদ দেওয়া হবে। বিকেলে বরাহনগরে বিধায়কের অফিসে এলে জমি দেখানো হবে ও ১৫ দিনে নথি হস্তান্তর হবে।’’

Advertisement

বিকেলে এক বন্ধুর সঙ্গে টাকা নিয়ে উন্নয়ন ভবনে যান ললিত। তিনি জানান, সেখানে গিয়ে ওই নম্বরে ফোন করলে বলা হয় ক্যাশ কাউন্টার বন্ধ। একটি ছেলে নীচে যাচ্ছে তাঁর হাতে টাকা দেওয়া হোক। ললিত বলেন, ‘‘ছেলেটি এলে তাঁর ফোন থেকে তাপসবাবুকে ফোন করি। টাকা দিই। আমাকে সাত তলায় যেতে বলা হলে গিয়ে কারও দেখা মেলেনি। দু’টি ফোনই ছিল বন্ধ।’’

সুদীপ্ত ললিতকে জানান নম্বরটি তাঁকে দেন হাওড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অরবিন্দ গুহ। তাঁর সঙ্গেও দেখা করেন ললিত। বিধাননগর (পূর্ব) থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। শনিবার অরবিন্দবাবু বলেন, ‘‘মন্ত্রী অরূপ রায়ের নাম নিয়ে তাপস রায় বলছি বলে আমাকে ফোন করে ওই কাজের কথা বলা হয়েছিল। বুঝতে পারিনি।’’ এ দিন অরূপবাবু বলেন, ‘‘তাপস রায়ের গলা আমি চিনি। অরবিন্দ না চেনায় বুঝতে পারেননি।’’ অভিযোগ পেয়ে বিধাননগর (পূর্ব) থানা ও বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত শুরু করে। শুভজিতের গলার স্বর ললিতকে দিয়ে সনাক্ত করানো হয়। আগেও তাপসবাবুর নাম করে প্রতারণা হয়েছে বরাহনগরে। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের পরিচয় দিয়েও ওই উপ মুখ্য সচেতককে হুমকি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। বারবার আমার নাম নিয়ে প্রতারণার পিছনে বড় চক্র আছে মনে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন