Waterlogged Situation

পুজোয় জলে ডোবা সরকারি গাড়ি সারাতে খরচ লক্ষাধিক

পরিস্থিতি এমনই, এই বিকল হওয়া গাড়ির তালিকায় রয়েছে খোদ কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক শীর্ষ কর্তার গাড়ি। যেটি সারাতে প্রায় ৭৯ হাজার টাকা খরচ করতে হবে বলে সূত্রের খবর।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৬
Share:

পুজোর আগে রাতভর বৃষ্টির জেরে জমা জলে ডুবে গিয়েছে পুলিশের গাড়ি। — ফাইল চিত্র।

দুর্গাপুজোয় দ্বিতীয়ার রাতে বৃষ্টিতে ভেসেছিল কলকাতা। শহরের রাস্তায় কার্যত ভাসতে দেখা গিয়েছিল বহু গাড়ি। জলে ডোবা সেই সব গাড়ি সারাতে নাজেহাল হতে হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। এখনও বহু গাড়ি সারিয়ে ওঠা যায়নি বলে দাবি মালিকদের। কিন্তু এর চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি সরকারি গাড়ির ক্ষেত্রে। সূত্রের খবর, জলে ভেজা এমন গাড়ি সারাতেই এখন আবেদনের পাহাড় জমে রয়েছে নবান্নে। এর মধ্যে বেশির ভাগই কলকাতা পুলিশের গাড়ি। সেগুলির কোনওটি সারাতে খরচ পড়তে পারে দেড় লক্ষ, কোনওটির দু’লক্ষ টাকা। কোনওটিতে আবার তার চেয়েও বেশি! তিন মাস পরে বর্ষা পেরিয়ে শীত এসে গিয়েছে। কিন্তু কবে সেই খরচের আবেদনমঞ্জুর হবে, কবে টাকা মিলবে, আর কবে সেই সব সরকারি গাড়ি সারিয়ে কাজে ফেরানো হবে— স্পষ্ট উত্তর নেই কারও কাছেই।

পরিস্থিতি এমনই, এই বিকল হওয়া গাড়ির তালিকায় রয়েছে খোদ কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক শীর্ষ কর্তার গাড়ি। যেটি সারাতে প্রায় ৭৯ হাজার টাকা খরচ করতে হবে বলে সূত্রের খবর। এক লক্ষ টাকার মধ্যে কোনও গাড়ির কাজ করাতে হলে কলকাতা পুলিশের নগরপাল নিজ ক্ষমতাবলেই সেই টাকা মঞ্জুর করতে পারেন। কিন্তু এই গাড়িটির ক্ষেত্রে অতীতে যে হেতু ৫৫ হাজার টাকার কাজ হয়েছে, ফলে আরও ৭৯ হাজার টাকার মঞ্জুরি চেয়ে নবান্নেই পাঠাতে হয়েছে। গাড়ি বিকল হওয়ার পরে অন্য একটি গাড়িতে চড়ে ওই ট্র্যাফিক পুলিশকর্তা কাজ সামলালেও নিজের গাড়ি তিনি কবে ফিরে পাবেন, তা জানা নেই তাঁর। একই অবস্থা আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসির গাড়ির ক্ষেত্রেও। জলে ডুবে সেটির ব্যাটারি বিকল হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। গাড়িটি এখন চললেও কবে ব্যাটারি বসে যাবে, সেই উৎকণ্ঠায় রয়েছেন থানার অফিসারেরা। সংশ্লিষ্ট গাড়িটি সারাতে প্রায় ৭৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে বলে হিসাব দিয়েছে গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা। কিন্তু থানার ওসি স্তরের কারও গাড়ি সারানোর জন্য পুলিশের বরাদ্দ রয়েছে বছরে ৩৫ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বলে এই বিষয়টিও ঊর্ধ্বতন পুলিশকর্তারা পাঠিয়েছেন প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে।

সূত্রের খবর, দুর্গাপুজোর দ্বিতীয়ার রাতে (২২ সেপ্টেম্বর) টানা বৃষ্টিতে বিকল হওয়া কলকাতা পুলিশের প্রায় ১৮টি গাড়ি সারাইয়ের জন্য টাকা মঞ্জুর করার আবেদন পাঠানো হয়েছিল নবান্নে। কলকাতা পুলিশের থানা এবং সমস্ত ডিভিশন মিলিয়ে এমন গাড়ির সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি। নিয়মানুযায়ী, কলকাতা পুলিশের গাড়ি বিকল হলে তা বেলতলায় পুলিশ সার্ভিস ডিপোয় নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু সেখানে এই ধরনের জলে ভেজা গাড়ির বেশির ভাগই সারিয়ে ওঠা যায়নি। ফলে যে গাড়ির জন্য খরচ এক লক্ষ টাকার বেশি হতে পারে বলে মনে করা হয়েছে, সেগুলিকেই ডিপো থেকে রিকুইজ়িশন দিয়ে নবান্নে টাকা মঞ্জুরির জন্য পাঠানো হয়েছে। কলকাতা পুলিশের একটি ডিভিশনের মোটর ট্রান্সপোর্ট অফিসার বললেন, ‘‘নতুন গাড়ির সার্ভিস সেন্টার থেকেও লক্ষ লক্ষ টাকার হিসাব দেওয়া হয়েছিল। অতীতে এত সংখ্যায় গাড়ি সারানোর আবেদন নবান্নে কখনও জমা পড়েনি। এখনও গাড়ির ফাইলের পাহাড় জমে রয়েছে।’’ এর পরে তাঁর দাবি, ধীরে ধীরে কাজ চলছে। কবে সমস্ত গাড়ি কাজে ফিরবে, কেউ জানে না। নবান্ন সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের পরেই রয়েছে পরিবহণ দফতরের গাড়ি। কয়েকটি বাস এবং বড় গাড়ির জন্য নতুন করে খরচের হিসাব চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।

খোঁজ করে জানা গেল, শহরের ব্যক্তিগত বহু গাড়ির মালিকও সারাতে দেওয়া গাড়ি ফিরে পাননি। একটি বিদেশি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (সার্ভিস) অমরদীপ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘জলে ইঞ্জিন বন্ধ হলে তো বটেই, জলের মধ্যে কিছু দূর চললেই গাড়ির ‘সার্ভিসিং কস্ট’ বেড়ে যায়। গাড়ি বাম্পার ছুঁই ছুঁই জলে চললে মেরামতির খরচ কম। গাড়ির ইঞ্জিন ডুবে ক্ষতি হলে খরচ বাড়ে। গাড়ি সম্পূর্ণ ডুবে গেলে খরচ সব চেয়ে বেশি। ইঞ্জিন বিগড়ে গেলে অন্তত ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ পড়তে পারে। বড় গাড়িতে খরচ আরও বেশি। সব ক্ষেত্রে বিমা সংস্থার টাকাও পাওয়া যায় না।’’ তবে অধিকাংশ গাড়ি সারিয়ে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া গিয়েছে বলে তাঁর দাবি। যেগুলি এখনও বাকি, আগামী বছরের মধ্যে সেগুলির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন গাড়ি প্রস্তুতকারী অন্যান্য সংস্থার কর্তারাও।

কিন্তু সরকারি গাড়িগুলি কি বছর ফুরনোর আগে এ ভাবেই কাজে ফিরবে? আশ্বাস মিলছে না কোনও পক্ষ থেকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন