এটিএমের ঝাঁপ বন্ধ, টাকা না পেয়ে দুর্ভোগ

ডাহা ফেল এটিএম। বৃহস্পতি ও শুক্র দু’দিনই ব্যাঙ্ক কোনও মতে টেনেটুনে পাশ করলেও কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে এটিএম পরিষেবা। দু’চার জায়গায় হাতে গোনা কয়েকটি কাউন্টার সচল থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্রাহকেরা হতাশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩০
Share:

বন্ধ এটিএম। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

ডাহা ফেল এটিএম। বৃহস্পতি ও শুক্র দু’দিনই ব্যাঙ্ক কোনও মতে টেনেটুনে পাশ করলেও কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে এটিএম পরিষেবা। দু’চার জায়গায় হাতে গোনা কয়েকটি কাউন্টার সচল থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্রাহকেরা হতাশ। কোথাও এটিএমের ঝাঁপই খোলেনি। কোথাও তড়িঘড়ি টাকা ফুরিয়েছে। রাতের দিকে কিছু এটিএমে টাকা আসতে শুরু করে। লাইনের শেষ প্রান্ত খুঁজতে তখন হিমশিম খাওয়ার জোগাড়!

Advertisement

টাকা নেই, ঝাঁপ খোলা: এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়া এক্সচেঞ্জ প্লেস শাখা, বেলা সাড়‌ে ১২টা। এটিএম কাউন্টারের দরজা খোলা। কিন্তু টাকা নেই। ‘‘তা হলে কাউন্টার খুলে রেখে মানুষকে আরও বিভ্রান্ত করে লাভ কী?’’— তিতিবিরক্ত বাসুদেব বসাক। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে ইউবিআই-এর এটিএমে টাকা তোলার চেষ্টা করছিলেন এক যুবক। কয়েক সেকেন্ড পরেই গজগজ করতে করতে বেরিয়ে এলেন— ‘‘টাকা ছাড়া কাউন্টার খুলে রেখে ইয়ার্কি মারছে নাকি?’’ সল্টলেকের অফিসপাড়া ও পাঁচ নম্বর সেক্টরে একাধিক এটিএমে তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের কর্মী এমনকী বহু পথচলতি মানুষও দিনভর এ ভাবেই নাজেহাল।

নবান্নেও নাকাল: খাস নবান্নের একতলায় পুলিশ কন্ট্রোল রুমের পাশে স্টেট ব্যাঙ্ক এবং ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের এটিএম। একটিতে সকাল থেকেই ‘সিস্টেম এরর’, অন্যটিতে ‘আনেবল টু প্রসেস’। নবান্নের বহু কর্মীই জানালেন, পকেট ফাঁকা। এই এটিএমের ভরসাতেই তাঁরা এ দিন অফিস এসেছেন। টাকা আসে বিকেল সাড়ে চারটের পরে। বাড়ি যাওয়া ভুলে কর্মীরা একছুটে লাইনে।

Advertisement

হাসপাতালে হয়রানি: কোথাও টাকা নেই, কোথাও যন্ত্র খারাপ। রুবি মোড় থেকে কসবা, সার সার এটিএম কাউন্টার বন্ধ। পরপর বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর পরিজনেরা গোটা তল্লাট চষে ফেলছেন।

আগে গেলে টাকা পায়: দেরি করে ফেলেছিলেন অর্ধেন্দু বসু। রাধাবাজারের ঘড়ির দোকানের ওই কর্মচারী বেলা ১১টা নাগাদ ডালহৌসি স্কোয়ারে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের এটিএমে গিয়েছিলেন। কাউন্টার বন্ধ। ওই শাখার কর্মীরা জানান, সকালে এটিএম খোলার সঙ্গে সঙ্গেই হুড়োহুড়ি। আধ ঘণ্টাতেই টাকা শেষ! পকেটে তখন শুধু খুচরো কয়েক টাকা। অর্ধেন্দুবাবুর বক্তব্য, ‘‘অফিসের কাজ বন্ধ করে ব্যাঙ্কের লম্বা লাইনে দাঁড়ানো তো সম্ভব নয়।’’

হতাশ মুখের সারি: সাত সকালেই পাড়ার অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের এটিএমে শাটার অর্ধেক টানা। রক্ষী বলছেন, টাকা নেই। তড়িঘড়ি এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে ছোটেন নাগেরবাজারের তনুশ্রী রায়। কিন্তু সেখানেও নিরাপত্তা কর্মী জানালেন, টাকা ভরা হয়নি। তনুশ্রীর ছোট্ট ব্যবসা গত দু’দিন ধরে মার খাচ্ছে। এ দিন ভেবেছিলেন, এটিএম থেকে টাকা তুলে পাইকারি বাজারে যাবেন। কিন্তু খালি হাতেই ফিরতে হল। দমদম জুড়ে এ দিন সকাল থেকে এমন ভোগান্তির শিকার অসংখ্য মানুষ। কারণ? প্রায় সব ব্যাঙ্কের এটিএমই ছিল শাটার টানা।

নগদ নেই: কোথাও দরজায় লেখা ‘নো ক্যাশ’। কোথাও যন্ত্রেই কাগজ সেঁটে— ‘এটিএম রানিং উইদাউট ক্যাশ’। রক্ষীদের বক্তব্য, বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত অধিকাংশ এটিএমে পুরনো টাকা তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রযুক্তিগত কাজও হয়েছে। কিন্তু নতুন করে টাকা ভরা হয়নি।

নতুন টাকা আসেনি। মিডলটন স্ট্রিটে দুপুর বারোটার পরে বন্ধ হয়ে গেল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ই-কর্নার। সেখানে দু’টি এটিএম, দু’টি ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন, একটি পাসবুক আপডেট মেশিন ও একটি চেক ডিপোজিট মেশিন রয়েছে। একসঙ্গে সব বন্ধ। তুমুল হট্টগোল।

বার্তা বিভ্রান্তি: বুধবার রাত পৌনে ১২টার পরে এসএমএসটা ঢুকেছিল— ‘আমাদের এটিএমগুলো আগামিকাল খোলা।’ প্রেরক অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক। এটিএম লেনদেনের খরচ বাবদ যে টাকা নেওয়া হয়, ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা নেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে এসএমএসে। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের গ্রাহক নন, এমন অনেকেও ওই এসএমএস পেয়েছিলেন। ভাবা হয়েছিল, আর কোনও এটিএম খোলা থাক না-থাক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের এটিএম খোলা থাকছেই।

অথচ বৃহস্পতিবার সকালে আজাদগড়ের কাকলি সমাদ্দার রানিকুঠিতে গিয়ে দেখেন, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের এটিএম বুথের শাটার অর্ধেক নামানো। কাচের দরজায় লেখা— টাকা নেই। একই হাল তিনশো মিটার দূরে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের আর একটি এটিএমেরও। ওই ব্যাঙ্ক কিন্তু শুক্রবার দুপুর তিনটে নাগাদও এসএমএস পাঠিয়ে দাবি করেছে, তাদের ১৩ হাজারেরও বেশি এটিএম খোলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন