বাঙালির বিশ্বকাপ: ধর্মতলার বাজারে মাথায় হাত দোকানিদের

পরপর ইন্দ্রপতনের ঠেলায় পড়ে গেল জার্সির বিক্রি

এ বারের বিশ্বকাপে একের পর এক ইন্দ্রপতন ঘটেছে। রাশিয়ার মহারণের আসর থেকে আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, জার্মানি, স্পেন বিদায় নিতেই কলকাতার জার্সি বাজারে কপালে হাত ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০২:৩৬
Share:

হাতে গোনা: এমন এক-দু’জন ফুটবলপ্রেমীই এখন ভরসা বিক্রেতাদের। ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

‘‘কাল কী হবে বল তো?’’

Advertisement

উল্টো দিকে বসা যুবক কিছু ক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘‘কী জানি। এ বারে তো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। খুব লস হয়ে গেল!’’

তরুণ দোকানির উত্তর শুনে উল্টো দিকের দোকান-মালিক আর কোনও শব্দ খরচ করলেন না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধু বললেন, ‘‘হুম।’’

Advertisement

এ বারের বিশ্বকাপে একের পর এক ইন্দ্রপতন ঘটেছে। রাশিয়ার মহারণের আসর থেকে আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, জার্মানি, স্পেন বিদায় নিতেই কলকাতার জার্সি বাজারে কপালে হাত ব্যবসায়ীদের। বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিভেজা, কাদা প্যাচপেচে বিকেলে সেখানে ঢুঁ মারতেই দেখা গেল, সার দিয়ে বসা দোকানিদের হতাশ মুখ।

কিন্তু রাত পোহালেই তো কোয়ার্টার ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নামবে ব্রাজিল ও বেলজিয়াম। তা হলে আক্ষেপ কেন? জার্সি-বিক্রেতা মহম্মদ সানির কথায়, ‘‘যে ভাবে সব গোল খেল, তাতে তো আর কারও উপরেই ভরসা রাখতে পারছি না। খদ্দেররাও আর জার্সি কিনছেন না।’’

বছর তিরিশের ওই যুবকের কথার সূত্র ধরেই আর এক দোকানি সনৎ রায়ের আক্ষেপ, ‘‘বাজারের অবস্থা দেখছেন? মাছি তাড়াচ্ছি আমরা।’’ দোকানিদের বক্তব্য একেবারেই অমূলক নয়। কয়েক দিন আগেও বিশ্বকাপ-জ্বরে কাঁপা শহরটা গায়ে প্রিয় দলের জার্সি জড়াতে ভিড় জমিয়েছিল ধর্মতলার এই সব দোকানে। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত তিল ধারণের জায়গা থাকত না গোটা বাজারে। জার্সি বিক্রি করতে করতে হাঁপিয়ে উঠতেন দোকানিরা। তেমনই এক জন দিলীপ দাস। বললেন, ‘‘গোটা পরিবারের জন্যও কেউ কেউ জার্সি কিনে নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বড় চারটি দল হেরে যেতেই বাজার একেবারে শেষ।’’

সেই বাজারে এখন কার্যত মাছি উড়ছে। দোকানগুলিতে সার দিয়ে ঝুলছে হলুদ-সবুজ জার্সি। হাতে গোনা দু’-চার জন আসছেন সেই জার্সি কিনতে। বিধান মার্কেটের সব জার্সি বিক্রেতাই মনে করছেন, আজ, শুক্রবার বেলজিয়ামকে হারিয়ে যদি নেমারের দল সেমিফাইনালে যায়, তবেই ফের ভাগ্য খুলবে তাঁদের। না হলে আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, জার্মানি, স্পেনের মতো ব্রাজিলের জার্সিও বস্তাবন্দি করে তুলে রাখতে হবে। কারণ, আকাশি-সাদা বা হলুদ-সবুজ জার্সির রং বদলে তো অন্য কিছু করা যাবে না। জার্সি রাঙানোর কাজ করেন অঙ্গদ দাস। তাঁর কথায়, ‘‘২০০ পিসের মতো আর্জেন্টিনার জার্সি ছাপিয়েছিলাম। এখন বস্তায় ভরে রেখে দিয়েছি। নেমারের জার্সিও আর ছাপছি না।’’

মহম্মদ সানির মতো অনেকে আবার ৫০-১০০ টাকা কম দামেই স্টকে থাকা জার্সি বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছেন। তবে দোকানিরা জানাচ্ছেন, ১৫ অগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন পাড়া ও স্কুলে চলবে ফুটবল ম্যাচ। তার জন্য বিকোবে কিছু জার্সি। যেমন, স্কুলের খেলার জন্য বাবার হাত ধরে আর্জেন্টিনার জার্সি কিনতে এসেছিল শিবপুরের আমন আলি সর্দার।

আর্জেন্টিনার পতাকা বানিয়ে ফাঁপরে পরা উৎপল দাস আর ভরসা করে ব্রাজিলের পতাকা বানাননি। বললেন, ‘‘চার বছরের জন্য বেঁধে রেখেছি বড় দলের পতাকাগুলি। আর সাহস হচ্ছে না ব্রাজিলের পতাকা বানানোর। ওই পতাকা বানাতেও খরচ বেশি।’’

একই রকমের অবস্থা ধর্মতলার ফুটপাতে বসা ছবি-বিক্রেতাদের। রাজভবনের উল্টো দিকের ফুটপাতে নেমারের বিভিন্ন আকারের ছবি নিয়ে বসা উজ্জ্বল দাস বললেন, ‘‘মেসি এখন বস্তাবন্দি। তাই নেমারকেও কম দামে ছেড়ে দিচ্ছি। কী আর করব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন