Babul Supriyo

Babul Supriyo: দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম সেরে ভোটে প্রত্যয়ী বাবুল

দিনের শুরুতে বাবুল অবশ্য গান শুনিয়েছিলেন বুথে গিয়ে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে এ দিন বুথ ঘোরা শুরু করেন তিনি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২ ০৭:০৫
Share:

বারণ: বুথে ঢুকতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাধা বাবুল সুপ্রিয়কে। মঙ্গলবার, সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বিকেলের পরে বেরোবেন বলে আশ্বাস দিয়ে ভোটের দিন বেলা ১২টাতেই বাড়ি ঢুকে যাচ্ছেন প্রার্থী! তা-ও আবার কে? বাবুল সুপ্রিয়!

Advertisement

এর আগে যে ক’টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, সেগুলিতে বেলাবেলি বাড়ি ঢোকা তো দূর, উল্টে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘খাওয়ার সময়টুকুও পাওয়া যাচ্ছে না।’’ কখনও সকাল থেকে গাড়ি চালিয়ে তিনি বুথ থেকে বুথে ছুটে বেড়িয়েছেন, কখনও বিরোধীরা তাঁর গাড়ি ভেঙে দিয়েছে, এই অভিযোগ তুলে তাদের ধরতে ছুটেছেন। কখনও বুথের বাইরে ‘ভুয়ো ভোটার’ ধরার দাবি করেছেন, কখনও আবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোটের দিন দেরিতে বেরোনোয় ‘‘বেড টি পাননি’’ বলে টিপ্পনী কেটেছেন! সেই বাবুলই মঙ্গলবার নির্ঝঞ্ঝাটে হাতে গোনা কয়েকটি বুথে ঘুরলেন, মাঝেমধ্যে গানও ধরলেন।

এরই মধ্যে রোদ থেকে বাঁচতে সকাল ১০টাতেই দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে খাস্তা কচুরি, শিঙাড়া সহযোগে গল্প চলল কিছুক্ষণ। এক ফাঁকে বেনিয়াপুকুরের গ্যারাজে গিয়ে বাবুল দেখে এলেন সারাতে দেওয়া নিজের বাইকটিও! বেলা ১২টাতেই আবার নিজের গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাকে খুঁজে লাভ হবে না। চললাম নিরুদ্দেশের পথে।’’ পিছু নিয়ে জানা গেল, যা আদতে তাঁর শিবপুরের ফ্ল্যাট!

Advertisement

এ কোন বাবুল? দল বদলের পরে প্রথম বার ভোটে দাঁড়ানো বালিগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী বললেন, ‘‘এখন ঘুরে কী হবে? সব জায়গাতেই তো শান্তিপূর্ণ ভোট চলছে। তা ছাড়া, সে সব অন্য দিন ছিল।’’ বাবুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে তাঁর মন্তব্যকেই সমর্থন জানিয়ে বিধায়ক দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘বালিগঞ্জে আমাদের যে স্তরের সংগঠন, তাতে বাবুল কেন, কারওই ছুটে বেড়ানোর কথা নয়। এমনিই মানুষের আশীর্বাদ পাওয়া যাবে।’’

দিনের শুরুতে বাবুল অবশ্য গান শুনিয়েছিলেন বুথে গিয়ে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে এ দিন বুথ ঘোরা শুরু করেন তিনি। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস প্রার্থী কামরুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে কুশল বিনিময় সেরে মান্না দে-র ‘রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টি’ গানটি ধরেন। এর পরে যান বালিগঞ্জ কেন্দ্রের প্রয়াত বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এলাকার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। সেখানকার বুথে অবশ্য তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ প্রার্থীর। বাবুল বলেন, ‘‘বুথে ঢুকতে দিল না। খবর পাচ্ছি, বেশ কিছু জায়গাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী অতি সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু এইটুকুর জন্য ভোটের পরিবেশ নষ্ট হতে দিতে চাই না।’’ এর পরে আর একটি বুথ ঘুরেই বাবুল যান দলীয় কার্যালয়ে। সেখানেই তাঁর কাছে ফোন আসে সুব্রত বক্সীর। বাবুলকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কয়েকটি বুথ ঘুরেছি। আবার বেরোব।’’

দ্রুত বেরিয়ে বাবুল যান বেনিয়াপুকুরের একটি বুথে। সেখানেই এক ভোটকর্মী তাঁকে বলেন, ‘‘সকাল থেকে লোক নেই। আপনি এলেন বলে তবু একটু ভিড় দেখছি। দ্রুত ভোটটা মিটিয়ে ফেললে হয় না!’’ কোনও মতে তাঁকে থামিয়ে বাবুল বলেন ‘‘একে গরম, তার উপরে রমজান মাস চলছে বলে সম্ভবত ভোট কম পড়ছে। এক বছরের মধ্যে এত ভোট দিতে গিয়েও হয়তো অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।’’ ‘নিজের ক্লান্তি’ কাটাতে প্রার্থী এর পরে যান পাশেই একটি গ্যারাজে। সেখানে একটি মোটরবাইক দেখিয়ে বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগেই নিজে এসে এখানে বাইকটা সারাতে দিয়ে গিয়েছি। ২০১৪ সালে আসানসোলে ভোটে জেতার পরে বাবা কিনে দিয়েছিলেন।’’ দ্রুত বাইকটি নিতে আসবেন জানিয়ে বাবুল ছুটলেন বাড়ির পথে। বললেন, ‘‘গরমে একটু শরবত খেতে যাচ্ছি। বিকেলে বেরোব।’’

বিকেল চারটে নাগাদ বাবুলের গন্তব্য হল আরও কয়েকটি বুথ। তার মধ্যেই উঠল শরবত প্রসঙ্গ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে তিনি আসানসোলে হারিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেনকে। সেই সময়ে ভোটের দিন তাঁর দেরিতে বেরোনো প্রসঙ্গে মুনমুন জানিয়েছিলেন, ‘বেড টি’ পেতে দেরি হওয়াতেই বেরোতে দেরি হয়েছে। তত ক্ষণে আসানসোল চষে ফেলেছেন বাবুল। সেই তিনিই তো এ দিন বেলা গড়াতে শরবত খেতে বাড়ি ঢুকে গেলেন...! থামিয়ে দিয়ে বাবুল বলেন, ‘‘মুনমুন সেন ভোট দিয়েছেন? বালিগঞ্জেরই তো ভোটার! বাবুল সুপ্রিয় জিতুক, তিনি চান তো?’’

মুনমুন অবশ্য ফোনে বললেন, ‘‘বেঙ্গালুরুতে থাকায় ভোট দিতে যেতে পারিনি। বাবুলকে নিয়ে কিছু বলব না। আমি চাই তৃণমূল জিতুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন