মায়ের দুধ না পেয়ে সঙ্কটে জিরাফ-ছানা

মাত্র দু’দিন আগে চিড়িয়াখানার ঘরে জন্ম হয়েছে তার। কিন্তু মাতৃদুগ্ধের অভাবে অচিরেই নিভে যেতে বসেছে নবজাতকের জীবন।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৫৮
Share:

অসহায়: আলিপুর চিড়িয়াখানায় সেই নবজাতক। নিজস্ব চিত্র

মাত্র দু’দিন আগে চিড়িয়াখানার ঘরে জন্ম হয়েছে তার। কিন্তু মাতৃদুগ্ধের অভাবে অচিরেই নিভে যেতে বসেছে নবজাতকের জীবন।

Advertisement

সে কোনও মানুষের ছানা নয়। আলিপুর চিড়িয়াখানার জিরাফ বীথির প্রথম সন্তান। চার বছরের বীথি দু’দিন আগে একটি ছেলে প্রসব করেছে। কিন্তু প্রসবের পর থেকে ছানাকে কাছেই ঘেঁষতে দিচ্ছিল না সে। দুধ পান করানো তো দূর। চিড়িয়াখানার চিকিৎসক এবং কর্মীরা ল্যাকটোজেন, ওআরএস খাইয়ে শাবকটির প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তুতাতেও কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা।

পশু চিকিৎসকেরা বলছেন, মায়ের দুধে কলস্ট্রাম থাকে। নবজাতকের জন্য যা একান্ত জরুরি। এই জিরাফ ছানাটি তা না পেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কৃত্রিম খাবার দিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু লাভ হচ্ছে না।

Advertisement

চিড়িয়াখানার এক কর্তা বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারি মাসে আলিপুরের আর এক জিরাফ লক্ষ্মী মা হয়েছে। তাকেও শাবকটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি।’’

প্রশ্ন উঠেছে, বীথি মা হয়েও এমন নিষ্ঠুর হল কী ভাবে? মানুষ হোক বা পশু, মাতৃত্বের আনন্দ সব প্রাণী বুঝতে পারে।

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটি’র সদস্য সচিব বিনোদ যাদব বলছেন, ‘‘অনেক সময়ে মা হলেও দুধ ঠিক মতো তৈরি হয় না। তা ছাড়া, স্তন্যপান করানোর বোধও তৈরি হয় না। সে কারণে এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে এমন বিষয় কিন্তু স্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে এখানে বীথির আচরণে অস্বাভাবিকতা আছে। ওটা যে ওর সন্তান, তা-ও বোধহয় বুঝতেই পারল না,’’ বললেন তিনি।

এমন অস্বাভাবিক আচরণের উদাহরণ হিসেবে প্রবীণ বনকর্তা বিনোদবাবুর মনে পড়ে যাচ্ছে জলদাপা়ড়ার অনসূয়ার কথা। বলছেন, অনসূয়ার বাচ্চা হওয়ার পরেই ও তার গায়ে নিজের পা তুলে দিত। সদ্য জন্মানো ছানাটি সেই পায়ের চাপে হয়তো মরেই যেত। তিন বার এমন হয়েছিল। চতুর্থ সন্তান জন্মানোর পরেই তাই অনসূয়াকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ঘেরাটোপে রেখে বাচ্চাটির প্রাণ বাঁচানো হয়।

পশু চিকিৎসক মিন্টু চৌধুরীর ব্যাখ্যা, পশুদের মনস্তত্ব খুব জটিল বিষয়। কোনও হরমোনের গোলমালের জেরে এমন ব্যবহার হতে পারে। কিন্তু মা জিরাফ হয়তো কোনও কারণে খেপে আছে। তার ফলেও এমন হতে পারে। তবে জিরাফের ক্ষেত্রে এমনটা শোনা যায় না। আলিপুরের অন্দরে জিরাফের প্রজনন প্রকল্পের সুনাম আছে। সেই প্রাণীর সংসারে এমন কেন হল, সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না চিড়িয়াখানার কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন