পুজোর মুখেও ক্ষতবিক্ষত দুই এক্সপ্রেসওয়ে

এমনিতেই এক্সপ্রেসওয়েতে কোনও আলো নেই। সিঙ্গল লেন হওয়ায় উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির হেডলাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায় চালকদের। তার উপর বিভিন্ন মোড়ে রাস্তা পারাপারের সুবিধার জন্য গার্ডরেল বসিয়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪২
Share:

ভাঙা: এমনই হাল ব্যারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের। নিজস্ব চিত্র

কখনও জল জমে থাকা গর্ত বুঝতে না পেরে তাতে গাড়ির চাকা পড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন চালক। কোথাও আবার গর্ত বাঁচাতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দুই এক্সপ্রেসওয়ে— ব্যারাকপুর-কল্যাণী এবং বেলঘরিয়ার পিচের আস্তরণ উঠে কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। কখনও কাঠফাটা রোদ, আবার কখনও মুষলধারে বৃষ্টি— দুইয়ে মিলে ভয়ঙ্কর অবস্থা এই দুই দ্রুতগামী পথের। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশে রাতে আলো না থাকা। পুজোর ঠিক মুখে রাস্তার এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। পুজোর ভিড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটলে কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, তা ভেবেই কার্যত রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে প্রশাসনের।

Advertisement

৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্যারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে শুরু হয়েছে নিমতা থেকে। সোদপুর মুড়াগাছা মোড়ের কাছে টোল প্লাজা বসিয়েছে রাজ্যের পূর্ত দফতরের হাইওয়ে ডিভিশন। টোল প্লাজা আছে ব্যারাকপুর মোড় ও কাঁচরাপাড়ায় কাঁপা মোড়ের কাছেও। কিন্তু এই পথে যাতায়াতকারী চালকদের অভিযোগ,
নিয়মিত টোল আদায় হলেও রাস্তা সংস্কার নিয়ে মাথাব্যথা নেই পূর্ত দফতরের। শ্যামনগর ও কাঁকিনাড়ার মাঝে এই রাস্তার অবস্থা এতই খারাপ যে দিন কয়েক আগে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তা বরাতজোরে দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচেছেন।

এমনিতেই এক্সপ্রেসওয়েতে কোনও আলো নেই। সিঙ্গল লেন হওয়ায় উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির হেডলাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায় চালকদের। তার উপর বিভিন্ন মোড়ে রাস্তা পারাপারের সুবিধার জন্য গার্ডরেল বসিয়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। কিন্তু রাতের অন্ধকারে সেগুলিই হচ্ছে দুর্ঘটনার কারণ। এর সঙ্গে উপরি কারণ তো পানশালাগুলি আছেই। পানশালা থেকে বেরিয়ে দ্রুত গতিতে ছোটা মোটরবাইক ও গাড়ি যে দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে, তা সাম্প্রতিক এক সমীক্ষাতেও দেখেছেন পুলিশকর্তারা। এই মুহূর্তে এক্সপ্রেসওয়ের ধারে বড় পানশালা ১৬টি। রোজ রাতে সেখান থেকেই কয়েকশো মোটরবাইক ও গাড়ি বেরোয়। পুলিশের রেকর্ড বলছে, গত এক মাসে বেপরোয়া গতি আর বেহাল রাস্তায় মোটরবাইক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩২।

Advertisement

অন্য দিকে, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের অবস্থাও তথৈবচ। মাঝে পুলিশি ধরপাকড় ও কড়া নজরদারির জন্য এক্সপ্রেসওয়ের ধারে গুমটি দোকানগুলি বন্ধ ছিল। এখন সবই খোলা। উপরন্তু, রাস্তার ধারে গাড়ি আর ট্রাকের সারি। আর মাঝরাস্তায় ছোট-মাঝারি অজস্র গর্ত। গর্ত বাঁচাতে গাড়ির পিছনে ধাক্কা মেরে গত সপ্তাহেই জখম হয়েছেন দুই বাইক আরোহী। এই রাস্তাতেও গজিয়ে উঠেছে পানশালা। পানশালা থেকে বেরিয়ে রোজ রাতে বাজি রেখে বিকট শব্দে চলে মোটরবাইক রেস। আর তাতেই বাড়ছে দুর্ঘটনা।

সমস্যা সমাধানে চলতি সপ্তাহেই সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট ও মহকুমা প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। কমিশনারেটের কর্তারা কড়া ভাবে সতর্কও করেছেন। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সুব্রত মিত্র বলেন, ‘‘এক্সপ্রেসওয়ে দিনের পর দিন এমন ভাবে থাকতে পারে না। স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মহালয়ার আগে সব গর্ত বোজাতে হবে।’’ পানশালা ও মোটরবাইক রেস প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘পুজোর আগেই বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। তা আরও জোরদার করা হবে। কোনওরকম রেস ও জুয়া চলতে দেওয়া হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন