বাড়ি ভেঙে পড়বে না তো? বাগড়ি মার্কেটে চিন্তা এখন সেটাই

দফতরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, বিভিন্ন পকেটে বিচ্ছিন্ন ভাবে আগুন জ্বললেও পরিস্থিতি মোটের উপরে নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু তাঁরা চিন্তিত পোড়া বাড়ির অবস্থা নিয়ে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৪
Share:

মাথায় হাত: চোখের সামনেই পুড়ে খাক দোকান। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন হতাশ ব্যবসায়ী। —ফাইল চিত্র।

প্রায় ৪০ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখনও লেলিহান বাগড়ি মার্কেট। সোমবার রাত ৯টাতেও বাজারের পাঁচতলা ও ছ’তলার দু’টি ঘরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। নেভাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন দমকল কর্মীরা। গোটা এলাকা ভরে গিয়েছে ধোঁয়ায়।

Advertisement

দফতরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, বিভিন্ন পকেটে বিচ্ছিন্ন ভাবে আগুন জ্বললেও পরিস্থিতি মোটের উপরে নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু তাঁরা চিন্তিত পোড়া বাড়ির অবস্থা নিয়ে। কারণ, আগুনের তাপে ধসে গিয়েছে তিনতলার একাংশ! রাতে ‘গেট ডি’-র কাছে একতলার একটি অংশের ছাদ ভেঙে পড়ে। এই অবস্থায় গোটা বাড়িটাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে কি না, সেই আশঙ্কা গ্রাস করেছে তাঁদের।

ফরেন্সিক বিভাগের অধিকর্তা ওয়াসিম রাজা এ দিন ‘থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা’ দিয়ে পোড়া বাড়িটি পরীক্ষা করেন। চারতলা ও পাঁচতলার একটি অংশে প্রায় ১৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ধরা পড়েছে। যার অর্থ, যখন আগুন পুরোদমে জ্বলছিল, তখন তাপমাত্রা আরও অনেক বেশি ছিল।

Advertisement

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক বিশ্বজিৎ সোমের মতে, ‘‘তাপমাত্রা ২০০ ডিগ্রি ছা়ড়ালেই নির্মাণের ক্ষতি হয়। ৫০০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা হলে নির্মাণের লোহা নরম হয়ে যায়। কংক্রিটও ঝুরঝুরে হয়ে যেতে পারে।’’

সবহারা এক ব্যবসায়ীকে সান্ত্বনা। ছবি: সুমন বল্লভ

ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরাও পুলিশকে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত তাপের ফলে নির্মাণের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বেশি জোরে ধাক্কা বা ঝাঁকুনি লাগলে তা ধসে যেতে পারে। ওয়াসিম বলেন, ‘‘বাড়ির ভিতরে প্রচণ্ড তাপ রয়েছে। সেই সম্পর্কে অবহিত হতেই এ দিন পরীক্ষা করা হয়েছে।’’

বস্তুত, রবিবার গভীর রাত থেকেই বারবার ঠিকরে বেরিয়েছে আগুনের শিখা। দমকলের একাংশ জানান, তাপ এতটাই বেশি যে ছাইয়ের গাদায় জল ঢেলেও ঠান্ডা করা যাচ্ছিল না। এ দিন সকাল থেকে ভেঙে পড়েছে কংক্রিটের চাঙড়ও। বিকেলের পর কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (২) জাভেদ শামিমের নেতত্বে বিপর্যয় মোকাবিলার একটি দল পাঁচতলা ও ছ’তলায় ওঠে। পুলিশের খবর, বিভিন্ন বন্ধ দোকান, অফিসের দরজা কেটে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা চালান তাঁরা।

আরও পড়ুন: দায় শোভনেরই, ববির বাগড়ি-তির

পুলিশ জানতে পেরেছে, বা়ড়িটির সামনে থাকা ফিডার বক্সের পাশে একটি অস্থায়ী দোকানে প্রথম আগুন দেখা গিয়েছিল। বিদ্যুতের তার দিয়ে তা ভিতরে ঢোকে। মালিকপক্ষের গাফিলতিও সামনে এসেছে। পুলিশ সূত্র বলছে, ছাদের ১ লক্ষ গ্যালন ক্ষমতার জলাধার খালি ছিল। জলের পাইপও কাজ করত না। ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, মার্কেটে ৭ জন রক্ষী ছিল। কিন্তু মাস আটেক আগে তাঁদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে তাঁরাও কাজে ছিলেন না। অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডারগুলির মেয়াদ গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ফুরিয়ে গিয়েছে। নিয়মিত ভাড়া ও রক্ষণাবেক্ষণের টাকা নিলেও গত বছর খানেকের মধ্যে মালিকপক্ষের কেউ মার্কেটে পরিদর্শনে আসেননি বলেও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ।

বাজারের মালিক রাধা বাগড়ির সঙ্গে এ দিনও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। পুলিশ সূত্রের দাবি, তিনি শহরের বাইরে রয়েছেন। তবে আগুন নিয়ে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ব্যবসায়ী সমিতি এবং দমকলকে দিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন