সুরক্ষা-কাঁটা নিয়েই খুলল বাগড়ি

অগ্নি-সুরক্ষার সমস্ত শর্ত পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও পুড়ে যাওয়ার প্রায় সাত মাস পরে বৃহস্পতিবার খুলে দেওয়া হল বাগড়ি মার্কেট। ভোটের মুখে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠেছে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০৩
Share:

শুরু: খুলে গিয়েছে বাগড়ি মার্কেট। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

অগ্নি-সুরক্ষার সমস্ত শর্ত পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও পুড়ে যাওয়ার প্রায় সাত মাস পরে বৃহস্পতিবার খুলে দেওয়া হল বাগড়ি মার্কেট। ভোটের মুখে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠেছে, তাড়াহুড়ো করে বাজারটি চালু করতে গিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ী ও কর্মীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে আপস করা হল না তো?
দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু অবশ্য বলছেন, ‘‘নিরাপত্তার কথা ভেবেই বাগড়ির যে অংশটি পুড়ে গিয়েছিল, সেই অংশটি খুলতে দেওয়া হয়নি। বাকি অংশ খোলা হয়েছে। কারণ, এই বাজারের সঙ্গে হাজারখানেক মানুষের রুজি-রুটি জড়িত।’’ দমকলমন্ত্রীর সুরেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বাগড়ির যে অংশটি ভাল অবস্থায় রয়েছে, সেখানেই ব্যবসায়ীদের বসতে দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীরা লিখিত ভাবে আমাদের জানিয়েছেন, অগ্নি-সুরক্ষা সংক্রান্ত কয়েকটি কাজ তাঁরা আগামী তিন মাসের মধ্যে করে ফেলবেন। সে দিকে আমরা খেয়াল রাখব। নিরাপত্তার জন্য প্রাথমিক ভাবে যা যা করণীয়, তা করার পরেই তাঁদের দোকান খুলতে দেওয়া হয়েছে।’’
এ দিন ওই বাজারে গিয়ে দেখা গেল, আটটি ব্লকের মধ্যে একটি ব্লক (এ) এখনও বন্ধ। ওই ব্লকেই আগুন লেগেছিল। পুরসভা এবং দমকল সূত্রের খবর, আইআইটি রুরকির বিশেষজ্ঞেরা ‘এ’ ব্লকের পোড়া অংশ মেরামতির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি সাতটি ব্লকে আগুন নেভানোর জন্য যে পরিমাণ জল সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছিল, তার ব্যবস্থা এখনও হয়নি। ওই ভবনের বেআইনি কিছু অংশ ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছিল। সেই কাজও এখনও হয়নি। তা ছাড়া, ভূগর্ভস্থ জলাধার তৈরির কাজও এখনও বাকি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি লোকসভা নির্বাচনের কথা ভেবেই সুরক্ষার বিষয়টি শিকেয় তুলে খুলে দেওয়া হল বাগড়ি?
দমকলমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, ‘‘এর সঙ্গে রাজনীতি বা নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। ব্যবসায়ীদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অগ্নি-নিরাপত্তা বিষয়ক যে রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখেই দোকান খুলতে দেওয়া হয়েছে। যেটুকু কাজ বাকি আছে, তা করতে সময় লাগবে। সেই অংশই খোলা হয়েছে, যেটি অগ্নিদগ্ধ নয়।
‘বাগড়ি মার্কেট সেন্ট্রাল কলকাতা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি আশুতোষ সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘ব্লক এ বাদ দিলে আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে বাজারের সব ক’টি ব্লকই খোলা হল। ক্ষতিগ্রস্ত এ ব্লকে মেরামতির কাজ শেষ না হলে সেটি খোলা সম্ভব নয়। আজ ৮০০ জনেরও বেশি ব্যবসায়ী দোকান খুলেছেন। সর্বসাকুল্যে এই বাজারে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৯৫৭ জন।’’
মধ্য কলকাতার অন্যতম বড় এই বাজারটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে আগুন লেগে পুড়ে যায়। তার পর থেকে পুরসভা ও দমকল দফতর এত দিন পর্যন্ত বাগড়ি খোলার অনুমতি দেয়নি। অভিযোগ ছিল, ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ অগ্নি-নির্বাপণের ব্যবস্থা না রাখার ফলেই আগুন নেভানোর প্রাথমিক লড়াইটুকুও লড়া যায়নি। দমকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, পুনরায় বাগড়ি খোলার আগে সেখানে অগ্নি-নির্বাপণের যাবতীয় ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে ওই বাজার খোলার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। আশুতোষবাবু জানান, ছ’তলা ওই বাড়ির ছাদে এক লক্ষ লিটার ধারণক্ষমতার জলাধার তৈরি হচ্ছে। আপাতত সেখানে ৭০ হাজার লিটার জল রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দমকল কর্তৃপক্ষের কাছে ‘প্রভিশনাল সার্টিফিকেট’ নিয়েই আপাতত কাজ শুরু হয়েছে। অন্য দিকে, এ দিনও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞদের একটি দল এসে ওই বাজারে ভূগর্ভস্থ জলাধার তৈরির বিষয়টি পর্যালোচনা করেন।
এ দিন ওই বাজার খোলার পরেই প্রচুর ক্রেতা সেখানে সকাল থেকে ভিড় জমান। মূলত ওষুধের দোকানেই ভিড় ছিল বেশি। পাইকারি দোকানের পাশাপাশি প্রচুর লোক আসেন খুচরো বিপণিগুলিতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন