Baguiati

ছাদ থেকে পড়েও গ্রিলে আটকে পা, উদ্ধার কিশোরী

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, মেয়েটি অসতর্ক মুহূর্তে কোনও ভাবে ছাদ থেকে পিছলে পড়ে গিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৬
Share:

বলরাম কর্মকার। এই রাজমিস্ত্রিই ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেন।

চরম পরিণতি প্রায় দোরগোড়ায়! চারতলার একটি ফ্ল্যাটের বারান্দার গ্রিলে পা আটকে গিয়ে শরীরের বেশির ভাগটাই শূন্যে ঝুলছে এক কিশোরীর। ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছে সে। ওই সময়ে সেখানে ছিলেন দু’জন কলের মিস্ত্রি। তাঁদের উপস্থিত বুদ্ধি এবং স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের তৎপরতাতেই শেষমেশ নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে উদ্ধার হল সেই মেয়ে।

Advertisement

শুক্রবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটে বাগুইআটির এক বহুতলে। ওই কিশোরীকে উদ্ধার করার পরে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, মেয়েটি অসতর্ক মুহূর্তে কোনও ভাবে ছাদ থেকে পিছলে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু চারতলার বারান্দার গ্রিলে পা আটকে যাওয়ায় সে একেবারে নীচে না পড়ে শূন্যে ঝুলতে থাকে। যার ফলে উদ্ধার করা সম্ভব হয় তাকে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরী এ দিন বিকেলে ছাদে উঠেছিল। ওই বহুতলেই কলের কাজ করছিলেন বাবু কর্মকার ও তাঁর ছেলে বলরাম কর্মকার। বলরাম জানান, কাজ শেষ করে বহুতলের নীচে হাত-পা ধুচ্ছিলেন তাঁরা। আচমকা চিৎকার শুনে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখেন, বারান্দা থেকে কেউ ঝুলছে। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, অন্য কোনও মিস্ত্রি ওই ভাবে ঝুলে কাজ করছেন। কিন্তু সম্বিৎ ফেরে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকারে। তত ক্ষণে কয়েক জন বাসিন্দাও বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। বলরাম বলেন, ‘‘কলের কাজ করি। তাই দড়ি থাকে আমাদের কাছে। সেই দড়িতেই কাজ হল।’’

Advertisement

কী ভাবে? বলরাম জানান, মোটা দড়ি নিয়ে তিনি ছাদে চলে যান। নিজের কোমরে শক্ত করে দড়ির এক প্রান্ত বেঁধে নেন। অপর প্রান্তটি ধরে থাকেন স্থানীয় লোকজন। ওই অবস্থায় বলরাম ঝুলতে ঝুলতে মেয়েটির কাছে পৌঁছন। তার কোমরেও দড়ি বেঁধে দেন। বাসিন্দারা সকলেই তখন উদ্ধারে জড়ো হয়েছেন। কেউ নীচ থেকে চিৎকার করে পরামর্শ দিচ্ছেন। কেউ বা চারতলার ওই ফ্ল্যাটের বারান্দায় গিয়ে মেয়েটিকে সাহস জোগানোর চেষ্টা করছেন। বলরাম মেয়েটিকে নিজের সেফটি জ্যাকেট পরিয়ে দেন। সেফটি লক গ্রিলের সঙ্গে আটকে দেন, যাতে ওই কিশোরী কোনও ভাবেই না পড়ে যায়। তার পরে নিজেও মেয়েটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। খবর দেওয়া হয় দমকলকেও। ইতিমধ্যে বলরামের বাবা বাবু কর্মকার লোহা কাটার করাত নিয়ে চারতলার ওই ফ্ল্যাটের বারান্দায় চলে যান। বারান্দা থেকে মেয়েটির কোমরে দড়ির আর এক দিক ধরে রাখেন বাসিন্দারা। গ্রিলের যেখানে কিশোরীর পা আটকে ছিল, সেই অংশ কাটতে শুরু করেন বাবু।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উদ্বেগে দম বন্ধ হয়ে আসছিল সকলের। গ্রিলের ওই অংশ কেটে ফেলতেই ব্যথায় কাতরে ওঠে কিশোরী। গ্রিল থেকে পা আলাদা হতেই তার শরীর নীচে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু বাসিন্দারা দ্রুত দড়ি টেনে তাকে বারান্দায় নামিয়ে নেন। পায়ে চোট পাওয়া কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দমকল পরে মই নিয়ে এলেও তার প্রয়োজন হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন