নারকেল-সয়াবিনের দুধে সংক্রান্তিতে ভিগান পিঠে

বাঁশদ্রোণীর পশুপ্রেমী তরুণী নূপুর ধর এ বার নিজে হাতে নারকেলের দুধের ভিগান পিঠেয় মা-বাবাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৫
Share:

ভিগান পিঠে-পুলি

ডিম-দুধ-মাখনবিহীন ভিগান চকলেট কেকে বড়দিনের উদ্‌যাপন হয়েছিল! এ বার পৌষ পার্বণে ভিগান পাটিসাপ্টা, দুধপুলি, ভাপা পিঠের আরাম।

Advertisement

বাঁশদ্রোণীর পশুপ্রেমী তরুণী নূপুর ধর এ বার নিজে হাতে নারকেলের দুধের ভিগান পিঠেয় মা-বাবাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তিন বছর হল, জীবন থেকে কোনও রকম পশুজাত খাদ্যই পুরোপুরি ব্রাত্য তাঁর কাছে।

সল্টলেকের ষাটোর্ধ্ব স্থপতি সুব্রত ঘোষও বছর দুয়েক হল মাংসাসক্তি জয় করেছেন। তাঁর ভিগান পিঠের আব্দারে প্রথমটা বাড়ির পুরনো ‘রান্নার দিদি’ বরিশালের বাঙাল দীপালি মণ্ডল গাঁইগুঁই করছিলেন। কিন্তু সুব্রতবাবুর উৎসাহে তিনিও মজে গিয়েছেন। নারকেলের দুধের পাটিসাপ্টা, দুধপুলি, পাতায় মোড়া পাতা পিঠেয় দুধ-ঘি-ক্ষীরের ছোঁয়াচ নেই। তবে দীপালি বলছেন, ‘‘ক্ষীরের থকথকে ভাবে স্বাদ একটু বেশি খোলে!’’ সুব্রতবাবুর অবশ্য সেটা মনে হয় না। সহাস্যে বলছেন, ভিগান ডায়েটে শীতের সেরা ফসল নলেনগুড় নিয়ে সমস্যা নেই। তাঁর এই নারকেলের দুধের স্বাদই দিব্যি লাগছে।

Advertisement

অধুনা হায়দরাবাদে প্রবাসী হৈমবতী চৌধুরীর ভিগান জীবনযাত্রা এমনিতে পুরোপুরি সমর্থন করেন তাঁর আমিষাশী স্বামী স্নেহাংশু দেবনাথ। কিন্তু এ বার ভিগান পাটিসাপ্টার নামে তাঁরও খানিক উৎকণ্ঠা হচ্ছিল। শ্বশুরবাড়িতে সাধারণ পাটিসাপ্টাও হয়েছিল। কিন্তু হৈমবতী তাঁর বিশেষ পাটিসাপ্টা নিয়ে আসেন। চালের গুঁড়ো ও নারকেলের দুধ, সুজি মিশিয়ে পাটিসাপ্টার গোলাটা তৈরি হয়েছিল। ভিতরের নারকেলের পুর। পাটিসাপ্টা এ বার ভাজাও হল ঘিয়ের বদলে নারকেলের তেলে। এমনিতে দক্ষিণ ভারতীয়দের নারকেলের তেলের রান্না নিয়ে বাঙালিদের ছুতমার্গ সবারই জানা। কিন্তু হৈমবতীর সগর্ব দাবি, ‘‘আমার পাটিসাপ্টাও সক্কলে সোনামুখ করে খেয়েছে!’’

শুধু নারকেলের দুধ নয়, আরও কিছু পিঠেয় সয়াবিনের দুধও প্রয়োগ করেছিলেন হৈমবতী। নূপুরও দুধ-মাংসটাংস ছেড়ে ভিগান দুধ, ঘি, মাখন তৈরি নিয়ে বিস্তর চর্চা করছেন। কোকোনাট বাটার, অলিভ বাটারের কথা বলছিলেন তিনি। পরিশোধিত নারকেল তেলে ঘি বেশ ভাল হয় বলে নূপুরের দাবি। সেই সঙ্গে সয়া মিল্ক, পিনাট মিল্ক, রাইস মিল্ক, ওটস মিল্কের রকমারি নিয়ে মেতে আছেন। দুধের রকমফেরে কোনটায় বেশি স্বাদ খোলে, তা নিয়ে অবশ্য বিস্তর মতভেদ রয়েছে। কিন্তু পুষ্টিবিশারদ রেশমী রায়চৌধুরী মোটের উপরে ভিগান পিঠেকে ভালই নম্বর দিচ্ছেন। রেশমীর কথায়, ‘‘ক্যালরি কাউন্টের মাপে নারকেলের বা আমন্ডের দুধের পিঠে বেশি উপকারি বলব না! তবে পুষ্টির গুণে সাধারণ দুধের থেকে ভিগান পিঠেই এগিয়ে!’’ আর সয়া মিল্কের পিঠেকে সব দিক দিয়েই এগিয়ে রাখছেন রেশমী। কলকাতার বলরাম ময়রার উত্তরপুরুষ সুদীপ মল্লিকের অভিজ্ঞতা, জনৈক ভিগান ক্রেতার অর্ডারে বার কয়েক সয়ার ছানা বা তোফুর সন্দেশ তাঁদের করতে হয়েছে। তিনি বলছেন, ‘‘কিছু ভিগান ক্রেতার হদিস মেলে, যাঁরা দুধ-ঘি বিহীন শুকনো ফলের লাড্ডু বা কাজু-আমের স্বাদের বরফি নিয়ে যান। কলকাতার একটি বিয়েতে সম্প্রতি কাজুবাদামের দুধের দইবড়া, নারকেলের দুধের কুলফিও মিলেছে। সুব্রতবাবুর মতে, নারকেলের দুধটুধ বাড়িতে তৈরি করে নিলে ভিগান মিষ্টির খরচও বেশি নয়। তবে খরচটাই সব কিছু নয়, দুনিয়া জুড়ে দুধ-মাংসের বাজারের টানে কারখানায় তৈরি পণ্য পরিবেশের ক্ষতি করছে, এ গ্রহের উষ্ণায়ন বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই ভিগান জীবনযাত্রার কদর বাড়ছে ক্রমশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন