দুপুরে কাজে পানশালায়, রাতে দেহ উদ্ধার কর্মীর

মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনায় মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া সহকর্মীদের এক জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন প্রতিবেশীরা। ধৃতের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের পরিবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১২
Share:

অকুস্থল: চাঁদনি চকের সেই পানশালায় দেবাশিস দাসের (ইনসেটে) মৃত্যুর তদন্তে পুলিশ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

কাজে যাচ্ছেন বলে দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। রাতে তাঁরই মৃতদেহ নিয়ে বাড়িতে এলেন সহকর্মীরা। অভিযোগ, পরিজনেদের খবর দেওয়া দূর অস্ত, মৃত্যুর আগে বা পরে ওই ব্যক্তিকে কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। জানানো হয়নি পুলিশকেও।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনায় মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া সহকর্মীদের এক জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন প্রতিবেশীরা। ধৃতের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের পরিবার। বুধবার মৃত ব্যক্তির ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গলায় খাবার আটকে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পেটে মিলেছে মদও।

পুলিশ জানায়, মৃতের নাম দেবাশিস দাস (৪৮)। বরাহনগরের কুঠিঘাট এলাকার বি কে মৈত্র রোডে তাঁর বাড়ি। চাঁদনি চক এলাকার একটি পানশালায় কাজ করতেন দেবাশিস। পরিজনেরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার দুপুরে কাজে যাচ্ছেন বলে বেরোন তিনি। রাত ১০টা নাগাদ তাঁর দেহ নিয়ে একটি গাড়িতে করে কুঠিঘাট এলাকায় হাজির হন দু’জন সহকর্মী। তবে দেবাশিসের মৃত্যু হয়েছে শুনে প্রতিবেশীরা পাড়ার মোড়ে গাড়ি ঘিরে ধরতেই এক সহকর্মী চম্পট দেন বলে অভিযোগ। ওই ব্যক্তির বাড়ির লোকজন এসে খবর দেন বরাহনগর থানায়। পুলিশ পৌঁছে গাড়ি-সহ আর এক সহকর্মীকে আটক করে। দেহটি রাতেই বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে দেবাশিসের।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত সহকর্মী জেরায় জানিয়েছেন, তাঁর নাম সামশের খান। তদন্তকারীদের তিনি বলেছেন, রোজকার মতো মঙ্গলবারও কাজ করছিলেন দেবাশিস। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শৌচাগার থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দেবাশিসকে উদ্ধার করা হয়। সামশের বলেন, ‘‘আমাদের এক জন বাড়ি থেকে মিষ্টি এনেছিলেন। সেই মিষ্টি খেয়েই শৌচাগারে যান দেবাশিস। পরে তাঁকে উদ্ধার করে গাড়িতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।’’ কিন্তু পথেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ায় আর হাসপাতালে না ঢুকে ফের তাঁরা চাঁদনি চকের পানশালায় ফিরে আসেন বলে দাবি করেছেন সামশের। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, ওই গাড়িতে করে দেবাশিসের নিথর দেহ বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই মতো তাঁরা বরাহনগরে গিয়েছিলেন। একই দাবি করেছেন ওই গাড়িটির চালক মহম্মদ আশরাদও।

দেবাশিসের ভাগ্নে তাপস ভড় বলেন, ‘‘সকলে ঘিরে ধরতেই মামার এক সহকর্মী নেমে পালিয়ে যান। কিছু না করে থাকলে তিনি পালাবেন কেন? তার থেকেও বড় প্রশ্ন, ওঁরা প্রথমে দাবি করেন, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মামাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। মামাকে যদি সেখানকার চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করে থাকেন, তা হলে ওঁরা হাসপাতালের কাগজ কেন দেখাতে পারলেন না?’’ তাপস আরও বলেন, ‘‘আমরা ময়না-তদন্ত চাই।’’ মৃতের স্ত্রী সুজাতা দাস জানান, মঙ্গলবার দুপুরে সাত বছরের ছেলেকে স্কুল থেকে এনে, খাওয়াদাওয়া করে কাজে বেরিয়ে ছিলেন দেবাশিস। প্রতিদিন বিকেল ৩টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ওঁর পানশালায় কাজ থাকত। সুজাতা বলেন, ‘‘ওঁর কোনও রকম অসুস্থতা ছিল না। কেউ কিছু করেছে ওঁকে। এর বিচার চাই।’’

চাঁদনি চকের ওই পানশালাটি বৌবাজার থানার অন্তর্গত হওয়ায় রাতে সেখানেও অভিযোগ দায়ের করে দেবাশিসের পরিবার। তদন্তে সহযোগিতা চেয়ে বৌবাজার থানাকে আট দফা প্রশ্ন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে বরাহনগর থানার তরফে। বুধবার বারবার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি পানশালার মালিকের সঙ্গে। বৌবাজার থানা সূত্রের খবর, পানশালার মালিক এবং সব কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন