এইচআইভি রোগীকে এলাকা ছাড়ার হুমকি

এইচআইভি নিয়ে প্রচারের কাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। খবরের কাগজে, টিভিতে, পোস্টার-ব্যানারে সচেতনতার নানা স্লোগানের ছড়াছড়ি। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি এখনও ঠিক কোথায় রয়েছে, বারাসতের বামুনগাছির বাসিন্দা মধ্য চল্লিশের এক মহিলা তারই প্রমাণ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০২:৪২
Share:

এইচআইভি নিয়ে প্রচারের কাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। খবরের কাগজে, টিভিতে, পোস্টার-ব্যানারে সচেতনতার নানা স্লোগানের ছড়াছড়ি। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি এখনও ঠিক কোথায় রয়েছে, বারাসতের বামুনগাছির বাসিন্দা মধ্য চল্লিশের এক মহিলা তারই প্রমাণ।

Advertisement

তিনি এইচআইভি পজিটিভ। সে কথা জানাজানি হওয়ার পরে বাড়িওয়ালা ঘর খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এলাকার লোকেরা বলেছেন, তাঁকে যেন পাড়ার ত্রিসীমানায় দেখা না যায়। আজ, মঙ্গলবার তাঁর পাড়ায় থাকার শেষ দিন হিসেবে বেঁধে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শয্যাশায়ী মেয়েকে আঁকড়ে বৃদ্ধা মা সোমবার বললেন, ‘‘একেবারেই শ্মশানে গিয়ে উঠব। আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’’

তাঁদের এই অসহায় পরিস্থিতির কথা এলাকার জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অজানা নয়। কিন্তু তার পরেও বিষয়টির নিষ্পত্তি করে তাঁদের ওই বাড়িতে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। ওই বৃদ্ধা জানিয়েছেন, কিছু দিন আগেই তাঁদের বাড়ি থেকে জোর করে বার করে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার হস্তক্ষেপে সে যাত্রা তাঁরা কয়েক দিন বাড়িতে ফেরার অনুমতি পেয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে ফের যে কে সেই। তাঁদের পাশে আর দাঁড়াননি কেউই। পরিস্থিতি এমনই যে চিকিৎসার খরচ তো দূরস্থান, দু’বেলা ভরপেট খাবার জোগাড় করাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে তাঁদের পক্ষে।

Advertisement

ঢাকঢোল পিটিয়ে এত প্রচারের পরেও সচেতনতা কেন তলানিতে?

রাজ্য এডস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সোসাইটির কর্তাদের দাবি, আগের তুলনায় অবস্থা অনেক বদলেছে। কিন্তু সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে আরও বেশ খানিকটা সময় প্রয়োজন। সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘একটা সময় ছিল যখন এইচআইভি পজিটিভ কোনও মানুষ ঘরের বাইরে বেরোতে পারতেন না। লোকে দূর-দূর করে তাড়িয়ে দিত। এখন পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়। সরকারি তরফে চিকিৎসার ব্যবস্থাও হয়েছে। যে কোনও সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসা মিলছে।’’

বামুনগাছির ওই মহিলার মা-র অভিজ্ঞতা অবশ্য এই দাবির থেকে অনেকটাই আলাদা। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। নিখরচায় মেয়ের চিকিৎসা চালানোর জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য (নির্দল) অনিতা বিশ্বাসের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। বৃদ্ধার অভিযোগ, ‘‘শংসাপত্র দিতে অস্বীকার করেন পঞ্চায়েত সদস্য।’’ ওই রোগিণীর কথায়, ‘‘একটা অসুখ রাতারাতি পাড়ায় আমাদের এতদিনের পরিচিতিটা মিথ্যা করে দিল। যে দেখছে, সে-ই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’’ এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন অনিতাদেবী। তাঁর স্বামী শিবু বিশ্বাস এ দিন বলেন, ‘‘এ সব মিথ্যা অভিযোগ। চিকিৎসার টাকা তোলার ব্যাপারে, ওঁদের ঘরে ঢোকানোর ব্যাপারে আমরাই সাহায্য করেছি।’’

এ দিন ওই বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি বাড়িওয়ালা পবন ভৌমিককে। তাঁর বাড়িতে তালা ঝুলছে। প্রতিবেশী ভাড়াটে বলেন, ‘‘ওই মহিলার খারাপ রোগ হয়েছে বলে বাড়িওয়ালা চলে যেতে বলেছে। এতে অন্যায় কোথায়?’’

এইচআইভি পজিটিভদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে ক্ষিতীশ মণ্ডল বলেন, ‘‘এইচআইভি পজিটিভদের নিয়ে সমাজের মানসিকতা এখনও কোথায় পড়ে রয়েছে, এটাই তার প্রমাণ।’’ তাঁর মতে, সরকারের প্রচারের ধরনটাই সঠিক নয়। মানুষ এখনও ধরে নেন যে এইচআইভি সংক্রমণ মানেই যৌন সংসর্গ থেকে হয়েছে। এই সংক্রমণের অন্য উৎসগুলোও অজানা থেকে যাচ্ছে। ক্ষিতীশবাবু বলেন, ‘‘প্রতিদিন এমন অজস্র ঘটনা ঘটছে। আজই জানতে পারলাম, কবরডাঙার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রীর এই সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ভবন এবং স্কুল-শিক্ষা দফতরকে চিঠি দিচ্ছি আমরা। জানি না মেয়েটাকে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিতে হবে কি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন