দুই গোষ্ঠীর তুলকালাম বেনিয়াপুকুরে

স্থানীয় সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের যুব তৃণমূল সভাপতি হলেন শেখ আলম। আর ওই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর জলি বসুর স্বামী রবীন বসু সেখানকার ওয়ার্ড তৃণমূল সভাপতি। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৮
Share:

ধুন্ধুমার: ভাঙচুরের পরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। মঙ্গলবার, বেনিয়াপুকুরে। নিজস্ব চিত্র

সোমবার রাতে গণ্ডগোলের সূত্রপাত। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মঙ্গলবার সকালে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ঝামেলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল বেনিয়াপুকুর থানার আঢ্যবাগান এলাকা। যার জেরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়-সহ চারটি বাড়ি ও একটি হোটেল ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। লালবাজার ছাড়াও বেনিয়াপুকুর ও পার্শ্ববর্তী থানা থেকে পুলিশ গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এলাকায় পুলিশ-পিকেট বসানো হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের যুব তৃণমূল সভাপতি হলেন শেখ আলম। আর ওই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর জলি বসুর স্বামী রবীন বসু সেখানকার ওয়ার্ড তৃণমূল সভাপতি।

দীর্ঘদিন ধরেই রবীনবাবু ওয়ার্ডের কাজকর্মের তদারকি করছেন। কিন্তু এতে ঘোরতর আপত্তি শেখ আলমের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকা দখল ঘিরেই মঙ্গলবারের ঘটনার সূত্রপাত।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ শেখ আলমের ঘনিষ্ঠ মহম্মদ সাহাবুদ্দিন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিছনে রেললাইনের পাশে আঢ্যবাগান দিয়ে মোটরবাইকে করে ফিরছিলেন। অভিযোগ,

বাইক থামিয়ে সাহাবুদ্দিন স্থানীয় বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ সাউয়ের উদ্দেশে কটূক্তি করেন। ইন্দ্রজিৎ জলি বসুর অনুগামী। ইন্দ্রজিৎ কটূক্তির প্রতিবাদ করায় দু’জনের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। ইন্দ্রজিতের দুই বন্ধু শেখ

সাদ্দাম ও অমিত দে এসে সাহাবুদ্দিনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। রবিবার রাতে বেনিয়াপুকুর থানায় তিন জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের হয়। রাতেই তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকেই আঢ্যবাগান এলাকা ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বেলা ১১টা

নাগাদ শেখ আলমের নেতৃত্বে শ’দেড়েক যুবক আঢ্যবাগানের তৃণমূল দলীয় কার্যালয়-সহ পরপর চারটি বাড়ি ও একটি হোটেল ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। জলির স্বামী রবীনের অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে আমিই এলাকার কাজকর্ম সামলাই। এতেই আলমের রাগ। ও গোটা এলাকা নিজের দখলে রাখতে চায় বলেই তাণ্ডব চালাল। দলীয় কার্যালয় থেকে ৭০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গিয়েছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ দিন আলম ও তাঁর বাহিনীর হাতে রড, লাঠি ও বন্দুক ছিল। তাই কেউ এগিয়ে আসার সাহস দেখাননি।

পুলিশ জানিয়েছে, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের পরে আলমের বাহিনী শেখ সানি নামে রবীনের ঘনিষ্ঠ এক যুবকের বোনের বাড়িতে ভাঙচুর করে। সেখান থেকে ৭০ হাজার টাকা-সহ কয়েক ভরি সোনার গয়না, চারটি দামি মোবাইলও লুট করা হয়েছে বলে বেনিয়াপুকুর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। রবীনের অভিযোগ, ‘‘ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হল আঢ্যবাগানের বাসিন্দাদের। দলীয় কার্যালয় ছাড়াও চারটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিক।’’ রবীন এই ঘটনাকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বললেও তা মানতে নারাজ এলাকার বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘যারা পার্টি অফিস ভেঙেছে, তারা আমাদের দলের কেউ নয়। স্থানীয় দু’টি দুষ্কৃতী গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোলের জেরেই এই ঘটনা।’’ আলমের মা রাজিয়া বেগমের অভিযোগ, ‘‘ওরা আমার ছেলেকে মারতেই এসেছিল। হাতে বন্দুক ছিল।’’

পুলিশ জানিয়েছে, আলমের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাম জমানায় আলম সিপিএম সমর্থক ছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এ দিন আলমের ফোনে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এসএমএস করা হলেও জবাব মেলেনি। পুলিশ আলম-সহ অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন