সার সার: মিছিলে অ্যাপ-ক্যাব। সোমবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
ভাটপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছিলেন অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের সভাপতি, তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। সোমবার ভাটপাড়া থেকে ব্যারাকপুরের প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার পথে তাঁর মিছিলের সঙ্গী হয়েছিলেন কয়েকশো অ্যাপ-ক্যাব চালক। আর তার জেরে এ দিন শহরে এক ধাক্কায় অনেকটা কমে গেল অ্যাপ-ক্যাবের সংখ্যা। বহু কষ্টে যে গাড়িগুলি বুক করতে পেরেছিলেন যাত্রীরা, তারাও সুযোগ বুঝে ভাড়া হেঁকেছে অন্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে যাত্রীদের একটা বড় অংশকে এ দিন যথেষ্ট হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে।
শাসক দল ঘনিষ্ঠ অ্যাপ-ক্যাব চালকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’ সূত্রের খবর, এ দিন ভাটপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচনে নিজের প্রার্থী হওয়ার মনোনয়ন জমা দিতে এসেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে মিছিলে যোগ দেন অ্যাপ-ক্যাব চালকদের একাংশ। বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ ভাটপাড়া গোলমাঠ থেকে মিছিল শুরু হয়ে দুপুর ১টা ২০ নাগাদ তা শেষ হয় ব্যারাকপুরের প্রশাসনিক ভবনে। মদন নিজে লাল সিল্কের টুপি এবং জড়ির পাড় দেওয়া উত্তরীয় জড়িয়ে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের ওই মিছিলের জেরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর প্রায় আড়াইটে পর্যন্ত ক্যাবের সংখ্যায় ভাল রকম টান পড়ে।
কী পরিস্থিতি হয়েছিল?
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ গড়িয়াহাট থেকে অ্যাপ-ক্যাবে এসপ্লানেড আসছিলেন তন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিন যেখানে ওই দূরত্ব আসতে তাঁর খরচ পড়ে ১০০ টাকার আশপাশে, এ দিন সেই পথ যেতে তন্দ্রাকে গুনতে হয়েছে ১৮৭ টাকা। একই অবস্থা হয়েছে মেখলা বর্মণ, পরিতোষ মণ্ডলের মতো অনেকেরই। বৌবাজার থেকে অ্যাপ-ক্যাবে পার্ক সার্কাস আসছিলেন মেখলা। ১৪০ টাকার জায়গায় এ দিন তাঁকে দিতে হয়েছে ১৯৬ টাকা। আবার কবরডাঙা থেকে গড়িয়াহাট যেতে পরিতোষবাবুকে দিতে হয়েছে ২৮৭ টাকা। যেখানে ওই দূরত্ব যেতে অন্য দিন তাঁর খরচ পড়ে ২০০ টাকার কাছাকাছি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এমন অবস্থা হল কেন? ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কমবেশি শ’চারেক অ্যাপ-ক্যাব শামিল হয়েছিল মিছিলে। যাঁরা গাড়ি নিয়ে আসতে পারেননি, তাঁদের অনেকে অন্যদের গাড়িতে এসেছিলেন। ফলে সকাল থেকে প্রায় হাজারের কাছাকাছি অ্যাপ-ক্যাব চালক কাজের মধ্যে ছিলেন না। ইন্দ্রনীলবাবুর দাবি, সেই কারণেই সাময়িক সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ‘‘পরিষেবা ব্যাহত করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু সংগঠনের সভাপতি ভোটে লড়ছেন। তাঁর মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার কথা আমরা সহযোগী চালকদের বলায় তাঁরা নিজেরাই মিছিল করে আসেন। কাউকে জোর করা হয়নি।’’
মদন বলেন, ‘‘যে সব চালকেরা এসেছিলেন, তাঁরা সংস্থা থেকে কোনও না কোনও ভাবে বঞ্চিত। চালকদের পাশে আমি সবসময়ে থাকি। সেই ভালবাসা থেকেই ওঁরা এসেছিলেন। কিন্তু যখন শুনলাম মানুষের হয়রানি হচ্ছে, তখনই ওই চালকদের শহরে ফিরে যেতে বলি।’’
অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি অবশ্য মিছিলের জন্য পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার কথা মানতে চায়নি। তাদের দাবি, গরমের সময়ে চালকেরা অনেকেই রাস্তায় নামতে চান না। সে কারণে গাড়ির সংখ্যা কম-বেশি হয়। ভাড়ায় তারই প্রভাব পড়ে থাকতে পারে।