দুর্ঘটনা কমবে কীসে, চিন্তায় বিধাননগর

সল্টলেকে বেশির ভাগ বাস রুট এখন করুণাময়ী, ডিডি ব্লক ইত্যাদি জায়গা হয়ে পাঁচ নম্বর সেক্টরগামী। রোজ কয়েক লক্ষ মানুষ সেখানে যাতায়াত করেন। ফলে পরিবহণের চাহিদা বেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ০১:৪০
Share:

স্পিড ব্রেকার, সিগন্যালে সিসি ক্যামেরা, রেষারেষি বন্ধে বাসের জন্য পৃথক লেন, ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন, নিয়ম ভাঙলে কড়া পদক্ষেপ। এত কিছুর আয়োজনের পরেও দুর্ঘটনার বিরাম নেই বিধাননগরে। সেই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন বুধবার সকালে সল্টলেকের বিডি বাসস্টপে বাসের ধাক্কায় এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনা। ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে নিমতা থেকে বাসচালক শম্ভু সাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশের অবশ্য দাবি, এত কড়াকড়ি করায় দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে। কমেছে মৃত্যুর ঘটনাও। কিন্তু দুর্ঘটনা পুরো বন্ধ করা যায়নি। তার একটা বড় কারণ চালকদের একাংশের অসহযোগিতা। বাসিন্দারা বলছেন, পুলিশের দাবি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু দুর্ঘটনা রোধে চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

সমস্যা ঠিক কোথায়?

Advertisement

সল্টলেকে বেশির ভাগ বাস রুট এখন করুণাময়ী, ডিডি ব্লক ইত্যাদি জায়গা হয়ে পাঁচ নম্বর সেক্টরগামী। রোজ কয়েক লক্ষ মানুষ সেখানে যাতায়াত করেন। ফলে পরিবহণের চাহিদা বেড়েছে। তা সামাল দিতে চালু হয়েছে একের পর এক বাস রুট। কিন্তু অভিযোগ, সেই তুলনায় পরিকাঠামো বাড়েনি। যেমন, পিএনবি মোড় থেকে করুণাময়ী রুটে চলে একাধিক বাস এবং অটো। সকাল থেকে পিএনবি মোড়ে ভিড় থাকে স্কুলপড়ুয়া ও অভিভাবকদের। তাঁদের অভিযোগ, অফিসের ব্যস্ত সময়ে যাত্রী তোলার জন্য চলে বাসগুলির রেষারেষি। ফলে প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।

পাশাপাশি, বিদ্যাসাগর মোড় থেকে সিটি সেন্টার হয়ে অফিসপাড়া এবং পাঁচ নম্বর সেক্টরের রাস্তার ছবিটাও কম-বেশি এক। ওই রাস্তায় ভোরে ট্র্যাফিকের নজরদারি তুলনায় কম থাকে। পাশাপাশি বৈশাখী থেকে বিডি বাসস্টপ পর্যন্ত পর্যাপ্ত সংখ্যায় ক্লোজ্‌ড সার্কিট ক্যামেরার অভাব রয়েছে।

বুধবারের ঘটনার ক্ষেত্রেও বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন, বিডি বাসস্টপে পুলিশের নজরদারি প্রায় থাকেই না। কিন্তু তার পরের স্টপেই একটি স্কুল থাকায় সেখানে পুলিশকর্মী থাকেন।

অভিযোগের সারবত্তা মেনে নিয়েছে পুলিশের একাংশও। তাঁদের দাবি, মোড়ে মোড়ে নজরদারি করার মতো কর্মী নেই। তাই বিভিন্ন মোড়ে সিগন্যাল বসানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও দুর্ঘটনা থামছে না।

পুলিশের একটি সূত্রই জানাচ্ছে, সল্টলেকের অফিসপাড়া অঞ্চলে রাস্তা খুব চওড়া নয়। উপরন্তু দু’দিকে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় তা আরও সরু হয়ে গিয়েছে। আবার, সর্বত্র ফুটপাথের মাপও সমান নয়। কোথাও
আড়াই মিটার, কোথাও তা পাঁচ মিটার পর্যন্ত চওড়া।

বিধাননগর পুলিশের এক শীর্ষকর্তা জানান, ইতিমধ্যেই ট্র্যাফিকের পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে। এ দিনের দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে ঠিক হয়েছে, কমিশনারেট এলাকায় যত স্কুল আছে, সেগুলির সামনে নজরদারি আরও কঠোর করা হবে। বিশেষত স্কুল শুরু এবং ছুটির সময়ে। সেই কাজ এ দিন থেকেই শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি বিডি বাসস্টপে ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা-সহ আরও কয়েকটি ব্যবস্থা বলবৎ করা হবে।

ওই কর্তা আরও জানান, ইতিমধ্যেই বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য ৮৬৫ জন চালকের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তবে এর পরেও কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে। প্রয়োজনে ফুটপাথ ছোট করে রাস্তা সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে পুরসভা বা নগরোন্নয়ন দফতরকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন