খানাখন্দে ভরা এই পথেই উল্টে যায় ট্রেলারটি। — নিজস্ব চিত্র।
গোটা রাস্তায় কয়েক হাত অন্তর বিশাল বিশাল গর্ত। অতীতেও একাধিক বার সেই সব গর্তে গাড়ির চাকা আটকে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকেলে তারাতলা রোডে এমনই খানাখন্দে ভরা রাস্তার বলি হলেন এক স্থানীয় যুবক। গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে কন্টেনারবাহী একটি ১৬ চাকার ট্রেলার ধাক্কা মারে একটি স্কুটারে। কন্টেনারে পিষে ঘটনাস্থলেই মারা যান স্কুটার চালক মহম্মদ হারুন ওরফে রাজু (৩০)। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি স্কুটারের অন্য আরোহী মহম্মদ আমির (২৫)। চালক-সহ ট্রেলারটিকে গার্ডেনরিচ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, হারুনের বাড়ি আলিফনগরে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে চালের বস্তা বোঝাই একটি ১৬ চাকার ট্রেলার আচমকাই গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ট্রেলার থেকে চালের বস্তার কন্টেনার ছিটকে গিয়ে পড়ে উল্টো দিক থেকে আসা একটি স্কুটারের উপরে। কন্টেনারটি স্কুটার চালকের পেটের উপর দিয়ে চলে যায়। গোটা শরীর থেঁতলে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান হারুন। গুরুতর আহত অবস্থায় আমিরকে প্রথমে এসএসকেএম ও পরে সেখান থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
দুর্ঘটনার পরেই তারাতলা রোডের একটা বড় অংশে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, দিনের পর দিন রাস্তা সারানোর ব্যাপারে জানানো হলেও কোনও সুরাহা হয়নি। দুর্ঘটনা তাই ওই এলাকার নিত্যসঙ্গী। এলাকার বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, ওই রাস্তায় ২৪ ঘণ্টাই বড় গাড়ি, বিশেষত ট্রেলার চলে। গর্তে চাকা পড়ে প্রায়ই টালমাটাল অবস্থা হয় ট্রেলারগুলির। ফলে সাধারণ মানুষকে কার্যত প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করতে হয়। পাশাপাশি, পুরো রাস্তায় কোনও আলো না থাকায় সন্ধ্যার পরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
ওই রাস্তাটির মালিকানা কলকাতা বন্দরের। বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, রাস্তা খারাপের বিষয়টি সম্পর্কে তাঁরাও ওয়াকিবহাল। রাস্তা সারানোর কাজ শুরুও করেছেন তাঁরা। তবে এ দিন অবশ্য তেমন নজির চোখে পড়েনি।
বস্তুত, গোটা তারাতলা এলাকাই খানাখন্দে ভরা। নেচার পার্ক এবং রামনগর মোড়ের মাঝখানে টানা রাস্তা জুড়েই বড় বড় গর্ত। রাস্তার বিভিন্ন অংশ যেন খুবলে তুলে নেওয়া হয়েছে।
এ দিন দুর্ঘটনা ঘটার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা নেমে আসেন রাস্তায়। কন্টেনারে যে চালের বস্তাগুলি ছিল, সেই বস্তাগুলিই রাস্তায় ফেলে অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। যতক্ষণ না প্রশাসনের তরফে রাস্তা সারানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে, ততক্ষণ তাঁরা অবরোধ তুলবেন না বলেও হুমকি দেন। শুরু হয় ভাঙচুরও। গভীর রাত পর্যন্ত তারাতলা ও সংলগ্ন রামনগর এলাকায় অবরোধ চলে। ফলে ওই এলাকায় তীব্র যানজটে নাকাল হন অসংখ্য মানুষ।
অন্য দিকে, এ দিনই পথ-দুর্ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় খিদিরপুরে। পুলিশ জানায়, রামবিলাস গুপ্ত (৬০) নামে এক প্রৌঢ় ডায়মন্ড হারবার রোড পার হওয়ার সময়ে একটি বেসরকারি বাস তাঁকে ধাক্কা মারে। হাসপাতাল রামবিলাসবাবুকে মৃত ঘোষণা করে। উত্তেজিত জনতা বাসটি ভাঙচুর করে। ফলে কিছুক্ষণ যানজট হয়।