দৃষ্টিহীন ছাত্রের মৃত্যু ঘিরে এখনও ধোঁয়াশা

দৃষ্টিহীন আবাসিক স্কুলের এক ছাত্রের অপমৃত্যুর ঘটনার দু’দিন পরেও রহস্যের জট কাটেনি। পুলিশ জানায়, জোকার ওই স্কুলটির মৃত ছাত্রের নাম হেবজুর রহমান হালদার (৮)। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারের নিশাপুরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৬ ০০:০৮
Share:

হেবজুর রহমান

দৃষ্টিহীন আবাসিক স্কুলের এক ছাত্রের অপমৃত্যুর ঘটনার দু’দিন পরেও রহস্যের জট কাটেনি। পুলিশ জানায়, জোকার ওই স্কুলটির মৃত ছাত্রের নাম হেবজুর রহমান হালদার (৮)। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারের নিশাপুরে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জোকায় ‘ডি এফ ব্লাইন্ড স্কুল’ ক্যাম্পাসেই হেবজুরের দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের দাবি, গায়ে লোহার গ্রিল পড়ে মৃত্যু হয় তার। তবে স্কুলের এই দাবি মানতে নারাজ পুলিশ। ঘটনায় ছাত্রের পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের না হলেও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে হরিদেবপুর থানার পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার স্কুলের হস্টেলের কাছেই এক নির্মীয়মাণ বিল্ডিংয়ের চারতলা থেকে একটি শিশুর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন বিদ্যালয়ের কর্ণধার জাবেশ দত্ত। তাঁর চিৎকারে বাকিরা ছুটে এসে দেখেন, হেবজুরের দেহে রেলিং পড়ে রয়েছে। হেবজুরকে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

Advertisement

মন্দিরবাজারের নিশাপুর গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় দর্জি মনিরুল হালদারের চার মেয়ে ও এক ছেলে। সেই ছেলে হেবজুর জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। মাস দশেক আগে জোকার ওই স্কুলে হেবজুরকে তাঁর বাবা ভর্তি করে যান। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, একতলার ছাত্রাবাসে মোট ১৭ জন ছাত্র ছিল। এ দিন সব ছাত্রদের দুপুরের খাবার খাইয়ে হস্টেলের আয়া লীনা নস্কর রান্নাঘর পরিষ্কার করতে চলে যান। হেবজুরের মৃত্যুর পিছনে স্কুলের গাফিলতির কথা স্বীকার করে জাবেশ দত্ত বলেন, ‘‘রান্নাঘরে যাওয়ার সময় লীনা হস্টেলের মূল দরজাটা খুলে রেখে গিয়েছিল। এটা একটা বড় গাফিলতি। ওই দরজা খোলা থাকায় হেবজুর বেরিয়ে যায়।’’

তবে হেবজুর দুপুর নাগাদ হস্টেল থেকে বেরিয়ে গেলেও তাঁর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় বিকেলে। এক জন দৃষ্টিহীন ছাত্র হস্টেলের ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যেও বিদ্যালয়ের কারও নজরে তা এল না কেন?— এই প্রশ্নই এখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকী হেবজুর যে ছাত্রাবাসে ছিল না তা জানতেনই না লীনাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘রান্নাঘর পরিষ্কার করার পরে দুপুরে হস্টেলের ঘরে ফিরে এলেও হেবজুরের কথা মাথাতেই ছিল না।’’

হেবজুরের বাবা মনিরুল হালদার জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে ছেলের অসুস্থতার খবর পান তিনি। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ স্কুলে পৌঁছলে স্কুলের কর্তারা জানান, হেবজুরের গায়ে গ্রিলের দরজা পড়ে গিয়েছে। শনিবার মনিরুল জানান, ‘‘কী ভাবে ছেলের মৃত্যু হল বুঝতে পারছি না। ময়না তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।’’ হেবজুরের মা হাসনাবানু বিবি বলেন, ‘‘ঠিক কী কারণে ছেলের মৃত্যু হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছেন না। দেহ কবর দেওয়ার আগে ওর পিঠে কালো ফোস্কার দাগ দেখা গিয়েছে। এর থেকেই পরিষ্কার, ওর গায়ে গরম কিছু পড়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন