Death

হুইলচেয়ারে বসেই মৃত্যু, উদ্ধার যুবকের দেহ

পুলিশ জানায়, সবুজ-মেরুন রঙের জামা গায়ে একটি হেলে থাকা হুইলচেয়ারে আধশোয়া অবস্থায় ছিলেন টিঙ্কু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১৯
Share:

টিঙ্কু দাস

হেস্টিংস থানা এলাকার হসপিটাল রোডে এক যুবকের গলায় ফাঁস দেওয়া মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে টিঙ্কু দাস (৩২) নামে ওই প্রতিবন্ধী যুবকের দেহ উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

Advertisement

পুলিশ জানায়, সবুজ-মেরুন রঙের জামা গায়ে একটি হেলে থাকা হুইলচেয়ারে আধশোয়া অবস্থায় ছিলেন টিঙ্কু। গলায় ছিল নাইলনের দড়ির ফাঁস। দড়িটি একটি গাছের ডালে বাঁধা ছিল। হেস্টিংস থানার টহলদার পুলিশকর্মীরা টিঙ্কুকে ওই অবস্থায় দেখে থানায় খবর দেন। ওই যুবকের সঙ্গে থাকা ব্যাগে ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড ও আধার কার্ড মিলেছে। সে সব দেখেই পুলিশ জানতে পারে, মৃতের বাড়ি বালিগঞ্জ থানা এলাকার ৩৯বি বেলতলা রোডে। হেস্টিংস থানা থেকে খবর পেয়ে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ শনিবার ভোরে বেলতলা রোডে টিঙ্কুর বাড়িতে যায় ও তাঁর স্ত্রী নমিতাকে খবর দেয়।

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে সুইসাইড নোট মেলেনি। মৃতদেহে আঘাতের চিহ্নও দেখা যায়নি। টিঙ্কুর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনও ঝগড়াও হয়নি। তবে শুক্রবার খুব নেশা করেছিলেন টিঙ্কু। ওই দিন ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে আসেন স্বামী-স্ত্রী। বিকেলে টিঙ্কু হুইলচেয়ারে চেপেই ঘুরতে বেরোন। রাত ন’টার পর থেকে তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে ফোন উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের অনুমান, অবসাদে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

শনিবার নমিতা জানান, ২০১২ সালে টিঙ্কুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সে বছরই তাঁরা দিল্লি ঘুরতে যান। কলকাতায় ফেরার সময়ে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে দু’টি পা গুরুতর জখম হয় তাঁর স্বামীর। দীর্ঘ চিকিৎসার পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেও দু’টি পা-ই বাদ যায়। নমিতা ও টিঙ্কুর বছর পাঁচেকের একটি ছেলে রয়েছে।

ওই মহিলা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ স্বামীর সঙ্গে শেষ বার ফোনে কথা হয়েছিল তাঁর। সেই সময়ে টিঙ্কু জানিয়েছিলেন, তিনি ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেন। দুর্ঘটনার পরে হুইলচেয়ার ছাড়া হাঁটাচলা করার জন্য কাঠের দু’টি নকল পা ছিল নমিতার স্বামীর। কোথাও যেতে হলে সেই পা জোড়া পরে যেতেন তিনি। কিন্তু ওই দিন পা দু’টি পরে যাননি টিঙ্কু। এ দিন নমিতা জানান, স্বামীর জন্য গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষার পরে রাজাবাজারে ননদকে ফোন করেন তিনি। ননদের স্বামী তাঁকে জানান, শিবরাত্রির কোনও অনুষ্ঠান দেখতেই হয়তো টিঙ্কু কোথাও গিয়েছেন। পরে ফিরে আসবেন।

পরিবারের লোকজন ও পড়শিরা জানিয়েছেন, বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের সামনে খাবারের দোকান রয়েছে টিঙ্কুর। মোহনবাগান ক্লাবের অন্ধ ভক্ত ছিলেন ওই যুবক। সব সময়েই সবুজ-মেরুন জার্সি পরে ঘুরে বেড়াতেন। দলের খেলা থাকলে হুইলচেয়ার নিয়েই দেখতে যেতেন। কয়েক বছর আগে খেলা দেখতে যাওয়ার পথে তাঁর হুইলচেয়ারে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। সেই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান টিঙ্কু। মোহনবাগান ক্লাবের কর্তারাই তখন টিঙ্কুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন