প্রতীকী ছবি।
করোনা আক্রান্ত বাবার দেহ দু’দিন ফ্রিজারে রেখে ফ্ল্যাটে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ছেলেকে। আমহার্স্ট স্ট্রিটের পরে এ বার ফুলবাগানেও ঘটল অনেকটা একই ধরনের ঘটনা। মৃত্যুর পরে প্রায় আট ঘণ্টা বাড়িতে পড়ে রইল বছর ছেচল্লিশের এক ব্যক্তির দেহ। অভিযোগ, থানায় বিষয়টি জানালে পুলিশ বলে, ওই ব্যক্তি যে করোনায় মারা যাননি তার নিশ্চয়তা নেই। তাই তারা দেহ নিতে পারবে না। দেহ নিয়ে যাবেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা। কিন্তু দুই কর্মী এলেও তাঁরা পিপিই পরে ছিলেন না। মৃত ব্যক্তির দেহের ওজনও খুব বেশি হওয়ায় তাঁরা তাঁকে নামাতে রাজি হননি। এই টানাপড়েনেই রাত কেটে যায়। শেষে বৃহস্পতিবার সকালে ফুলবাগান থানার কয়েক জন পুলিশকর্মী পিপিই পরে ওই ব্যক্তির দেহ হাসপাতালে পাঠান।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ফুলবাগানের সুরেন সরকার রোডে তেতলা বাড়িতে একই পরিবারের তিনটি আলাদা সংসার। দোতলায় থাকতেন ৪৬ বছরের অবিবাহিত ওই ব্যক্তি। উপরে সপরিবার থাকেন তাঁর ভাই। একতলায় দিদি-জামাইবাবু। কয়েক দিন আগে মৃতের ভাইয়ের করোনা ধরা পড়ে। এ দিন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিজনেরা গৃহ-পর্যবেক্ষণে আছেন।
জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ১০টা নাগাদ বড় শ্যালককে খাবার দিয়ে আসেন জামাইবাবু। তখন ওই ব্যক্তি শুয়েছিলেন। পরে খাবেন বলে জানিয়ে দেন। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরেও শ্যালকের সাড়া না-পেয়ে জামাইবাবু ফের এসে দেখেন, তাঁর দেহে সাড় নেই। শ্যালক মারা গিয়েছেন বুঝে থানায় ফোন করেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু অভিযোগ, বাড়ির ঠিকানা আর মৃতের নাম শুনে জানানো হয়, ওই পরিবারে যে হেতু ইতিমধ্যেই এক জন করোনায় আক্রান্ত, তাই মৃত ব্যক্তিরও যে করোনা ছিল না তার নিশ্চয়তা নেই। সে কারণে স্বাস্থ্য দফতরে ফোন করতে হবে।
থানা থেকেই প্রথমে ঘটনাটি স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়। তারা প্রথমে গাড়ি না-পাঠালেও লালবাজার থেকে ফোন পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠায়। কিন্তু মৃতের পরিবারের অভিযোগ, দুই স্বাস্থ্যকর্মী এসে পরিবারের এক জন করোনায় আক্রান্ত শুনে মৃতদেহ নামাতে রাজি হননি। জানান, তাঁরা পিপিই পরে নেই। এমনকি, দফতর থেকে এই ধরনের নির্দেশও তাঁরা পাননি। তা ছাড়া, মৃত ব্যক্তির দেহের ওজনও খুব বেশি। এর পরে চলে যান ওই দুই কর্মী।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির একাধিক অসুখ ছিল। তাঁর ওজনও ছিল ১৩৫-১৪০ কেজি। ফলে দুই স্বাস্থ্যকর্মীর পক্ষে দেহ নামানো সম্ভব ছিল না। প্রাথমিক ভাবে রাতে বাড়িতেই দেহ রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ দিকে, সারা রাত দেহ বাড়িতে থাকলে পচন ধরতে পারে ভেবে পরিবারের লোক ফের থানায় ফোন করেন। তখন পুলিশ নড়ে বসে। এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ পিপিই পরে আসেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। ওই ব্যক্তির দেহ নামিয়ে পুলিশের গাড়িতে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ততক্ষণে চলে আসে পুরসভার গাড়িও।
তবে করোনা সন্দেহে যে ভাবে ওই ব্যক্তির দেহ নামানো হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ পরিজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, দড়ি দিয়ে বেঁধে দেহ নামানো হয়েছে। যদিও পুলিশের দাবি, ঘরের দরজা দিয়ে দেহ বার করাই যাচ্ছিল না। স্ট্রেচারে করে ওই ব্যক্তিকে নামানো যেত না। গোটা ঘটনা নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপেরও উত্তর দেননি।