জমা জল এড়াতে ঘরে পাতা হয়েছে ইট। হাতিয়াড়ায়। ছবি: শৌভিক দে
একেই নিচু এলাকা। তার উপরে নিকাশির হাল খারাপ। তাই প্রতি বর্ষাতেই ফিরে আসে জল-যন্ত্রণা। এ বারও যার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কয়েক দিন জল জমে থাকায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বন্ধ করে দেন একটি নিকাশি নালার মুখ। যার জেরে সমস্যায় অন্য পাড়ার বাসিন্দারা। দুই পাড়ার এই গোলমালে রাস্তা অবরোধ হয়। ছড়ায় উত্তেজনা। তিন ঘণ্টা ধরে চলে এমন পরিস্থিতি। পরে প্রশাসনের তরফে পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি মেলায় অবরোধ উঠে যায়। দুপুরের পরে ফের সেখানে আরও এক দফা অবরোধ হয়।
বুধবার সকালে এই ঘটনা ঘটে নিউ টাউন থানা এলাকায় অন্তর্গত বিধাননগর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিয়াড়ায়। বিধাননগর পুরসভার দাবি, ১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভূগর্ভে নিকাশি নালা তৈরির খসড়া প্রস্তাব দেওয়া হবে। সেই পরিকল্পনা কার্যকর হলে জল-যন্ত্রণার চেনা ছবিটা বদলে যাবে।
ওই পুরসভার তিন নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুজিত মণ্ডল জানান, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অরুণাচল নিচু জায়গা। সেখান থেকে খালে জল ফেলার আলাদা নিকাশি ব্যবস্থা নেই। অন্য এলাকা থেকে একটি নালা অরুণাচল হয়ে মিশেছে পাশখালে। ভারী বর্ষণে সেই নালা থেকে জল ঢুকে পড়ছিল অরুণাচলে। জল আটকাতে সেই নালা আবর্জনা ফেলে বন্ধ করে দেন অরুণাচলের বাসিন্দারা। তাতে সমস্যায় পড়েন পাশের নস্করপাড়ার লোকজন। প্রতিবাদে তাঁরা হাতিয়াড়া রোড অবরোধ করেন।
এ নিয়ে দুই পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে ঝামেলা বেধে যায়। এলাকায় ঢুকতে গিয়ে ধস্তাধস্তির মধ্যে পড়েন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গীতা সর্দারের স্বামী মৃণাল সর্দার। তিনি জানান, নিকাশির সমস্যা রয়েছে। বর্ষার পরেই নিকাশির কাজ করা হবে। ঘটনাস্থলে যায় নিউ টাউন থানার পুলিশ। পৌঁছে যান তিন নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুজিত মণ্ডলও। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিলে তখনকার মতো অবরোধ উঠে যায়।
এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জলমগ্ন হয়ে আছে বিস্তীর্ণ অংশ। জল ঢুকে পড়েছে বহু বাড়ির ভিতরেও। অরুণাচলের বাসিন্দা নারায়ণ মণ্ডল অসুস্থতার জন্য হাঁটাচলা করতে পারেন না। স্ত্রী গীতা মণ্ডল বললেন, ‘‘বছরের চার মাসই জলের তলায় থাকি। এই সময়ে ঘরে ইট পেতে রাখতে হয়।’’ আর এক বাসিন্দা কল্পনা বারুই বলেন, ‘‘এই জলে ডেঙ্গি হবে না তো কী হবে! গত বছর ঘোষপাড়ায় আট জনের ডেঙ্গি হয়েছিল।’’
রাস্তা অবরোধ নিয়ে নস্করপাড়ার বাসিন্দা কাকলি নস্করের কথায়, ‘‘চার-পাঁচ দিন ধরে রাস্তায় জল জমে রয়েছে। দোকান-বাজার লাটে উঠেছে। ওদের বক্তব্যে যুক্তি আছে। কিন্তু আমরাই বা কী দোষ করলাম!’’
উল্টো দিকে অরুণাচলের বাসিন্দা পার্থ গিরির কথায়, ‘‘দেড় বছর ধরে সমাধানের দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। তিন দিন আগে নর্দমা বন্ধ করায় এখন সকলে ছুটে এসেছে।’’ আর এক বাসিন্দা সুব্রত দাস বলেন, ‘‘হাতিয়াড়া, জ্যাংড়া, হেলা বটতলা, সর্দারপাড়া, নস্করপাড়া, ঝিলবাগানের জল অরুণাচলের ভিতর দিয়ে খালে গিয়ে পড়ছে। কারণ সুভাষপল্লি, নীলাচল কো-অপারেটিভ, সারদাপল্লি, ঝিলবাগানের ভিতর দিয়ে যে জল বেরোত, সেখানে নর্দমা যাওয়ার রাস্তায় দেওয়াল তোলা হয়েছে। নর্দমা বন্ধ থাকতেই ঘরে ঘরে গোড়ালির উপরে জল। তা হলে ভাবুন, নর্দমা খুলে দিলে কী হাল হয়!’’
সুজিতবাবুর দাবি, ‘‘অরুণাচলের জন্য আলাদা করে একটি নিকাশি নালা তৈরির খসড়া প্রস্তাব পুরসভায় জমা করা হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।’’ আর মেয়র পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস জানা বলেন, ‘‘২৭টি ওয়ার্ডে মাটির নীচে নিকাশি নালা গড়ার খসড়া প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে।’’