প্রিয়া অধিকারী।
শীতের রাত। গোটা শহর তখন ঘুমোচ্ছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন পাতিপুকুর এলাকার সুভাষ কলোনির বস্তিবাসী শ’খানেক মানুষ। ঘড়িতে তখন রাত ২টো ৪০ মিনিট। ঘুম ভাঙল চিত্কার, চেঁচামিচিতে। চোখের জড়তা কাটতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল চোখে মুখে। দাউ দাউ করে জ্বলছে ঘর। কোনও রকমে হাতের কাছে যে টুকু যা পাওয়া গেল তা নিয়ে দৌড়ে ঘরের বাইরে বেড়িয়ে এলেন। ঘুম থেকে ডেকে তুলে, ঘরের সবাইকে নিয়ে বেরনোর চেষ্টায় তখন হুলস্থুল কাণ্ড চলছে! বাবার ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙেছিল বছর ষোলর মেয়েটিরও। অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশুনা সেরে শোওয়ার পর সবে মাত্র গাঢ় ঘুম চোখে নেমেছিল তাঁর। আর সেটাই কাল হল! আগুন বাঁচিয়ে সময় মতো বেড়িয়ে আসতে পারল না। আগুনের ঘেরাটোপে বাইরে দাঁড়িয়ে বাবার হাহাকার, চিত্কার শুনেও বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পেল না মেয়েটি। বাবার চোখের সামনেই জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল।
কলকাতা পুরসভা এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এই বস্তিতে প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে বসবাস করছে অধিকারী পরিবার। ভয়াল এই অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নিয়েছে পরিবারের দু’টি তাজা প্রাণ। মৃত্যু হয়েছে বছর ষোলর প্রিয়া অধিকারী আর তার কাকা ২৭ বছরের নিমাই অধিকারীর। গোটা ব্যপারটাই এত দ্রুত ঘটে গেল আর পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে দাঁড়িয়ে ছটফট করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না কারও! পরিবারে তিনজন বাঁচলেও বড় মেয়ে আর ভাইকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ কিছুতেই যাচ্ছে না দীলিপ অধিকারীর। প্রতিবেশীরা জানালেন, মেধাবি ছাত্রী ছিল প্রিয়া। পাইপাড়ায় শিল্পকলা স্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল। টেস্টে ভাল রেজাল্ট করেছিল। পরিবারের অনেক আশা ছিল ওকে নিয়ে। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল!
আরও পড়ুন...
শহরে পরপর আগুন, পাতিপুকুরে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী-সহ মৃত ২
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু সেন এলাকায় পৌঁছে যথা সম্ভব সাহায্যের আস্বাস দিয়েছেন। আপাতত এলাকারই দু’টি স্কুলে সুভাষ কলোনির সর্বহারা মানুষগুলোর থাকার ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় গোটা ঘটনার গতি-প্রকৃতির উপর নজর রাখছেন। কয়েকটা দিন বা মাস খানেকের মধ্যে হয়তো পরিস্থিতিটা একটু একটু করে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে! কিন্তু বছর ষোলর মেয়েটা আর রাত জেগে পড়াশোনা করে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখবে না সুভাষ কলোনির ঝুপড়ি ঘরে বসে!